কয়েক দিন পর আবার ফিরে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দেওয়া, মাংস কাটা, পরিষ্কার করা, ভাগ করে গরিব-দুঃখী ও আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করতে অনেক সময় লেগে যায়। আর ঈদ মানেই অতিথি আপ্যায়ন, হরেক রকম রান্না, আর নানা রকম মসলার নিয়মিত ব্যবহার। তাই কিছু কাজ এখন থেকে গুছিয়ে রাখলে অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
কোরবানির আগের প্রস্তুতি
মসলা
এই ঈদে কোরবানির মাংসের বিভিন্ন পদ রান্না হয়ে থাকে, তাই তার জন্য প্রয়োজনীয় মসলা যেমন কাবাব মসলা, গরমমসলা (আস্ত অথবা গুঁড়া) ইত্যাদি কিনে রেখে দিন। ভেজা মসলা মানে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, জিরা আগে থেকেই কেটে বেটে বা ব্লেন্ড করে নিন। ভেজা মসলাগুলো ব্লেন্ড করে ছোট ছোট বক্স বা আইস-কিউব বক্সে রেখে বরফ করে এরপর সেগুলোকে জিপ-লক ব্যাগ বা পলি ব্যাগে রেখে দিতে পারেন। এতে প্রয়োজনের সময় ১–২টা মসলার কিউব দিয়ে সহজেই তরকারি রান্না সেরে ফেলতে পারবেন।
যন্ত্রপাতি
কোরবানির মাংস কাটাকুটির জন্য দরকার ধারালো ছুরি, বঁটি ও কাটাকাটির অন্যান্য সামগ্রী। তাই এখনই এইগুলোতে ধার করিয়ে, পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে। একটি বড় পাত্রে ফুটানো পানিতে সব সরঞ্জাম ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখতে পারেন অথবা পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন যাতে জীবাণু আর না থাকে।
কোরবানির পর মাংস সংরক্ষণ
কোরবানির মাংস বাসায় আনার পর, রান, রিডের অংশ, সিনার অংশ, হাম, পায়ের মাংস এভাবে ভাগ করে ফেলতে হবে। কলিজা ও মগজ ফ্রিজে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে রান্না করে ফেলা উত্তম, এগুলো বাসি রান্না করলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
ফ্রিজে চাকা মাংস না রেখে, ছোট ছোট বটি করে রাখুন। ফ্রিজে রাখার আগে, ধোয়ার পর পানি ভালো করে ঝরিয়ে নিন। ফ্রিজের মধ্যে বাক্স থেকে ফুড গ্রেডের প্লাস্টিকের ব্যাগেই মাংস রাখা উচিত। মাংস ছোট ছোট প্যাকেটে রাখুন। প্রত্যেকবার বড় বড় প্যাকেট বের করে বরফ ছাড়িয়ে অল্প একটু নিয়ে বাকিটুকু আবার রেখে দিলে মাংসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাংস ফ্রিজে রাখার আগে মার্কার দিয়ে পলিথিনের প্যাকেটে তারিখ লিখে রাখুন। এতে মাংস কত দিন ধরে ফ্রিজে আছে, তা সহজেই বের করতে পারবেন। কাঁচা মাংস ফ্রিজে রাখলে চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে খেয়ে ফেলা ভালো। কারণ, চার-ছয় মাস পর মাংসের পুষ্টিগুণ, গুণগত মান কমতে থাকে। অনেক মাংস একসঙ্গে ফ্রিজ থেকে বের করে কিছুটা রেখে আবার সেই মাংস ফ্রিজে রাখলে কনটাসিনেহেড হয়। তাই ছোট প্যাকেট করে রাখা প্রয়োজন।
পরিচ্ছন্নতা
মাংস ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় শরীর, কাপড় ও ঘরের মেঝেতে রক্ত লেগে যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখুন, খুব বেশি সময় পর্যন্ত যেন এভাবে রক্ত লেগে না থাকে। রক্ত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ত্বকে লেগে থাকলে চুলকানি এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। কাজ শুরুর আগে পাতলা গ্লাভস পরে অথবা যত দ্রুত সম্ভব সাবান দিয়ে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন। মেঝে পরিষ্কার করতে গরম পানি, জীবাণুনাশক এবং ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা ভালো।
সুস্থ থাকতে
যেহেতু এই সময়ে বেশি মাংস খাওয়া হবে, তাই মাংসের চর্বি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। মাংসের টুকরাগুলো স্তরে স্তরে কেটে চর্বির অংশটুকু বাদ দিন। সিনা, রান যেকোনো অংশ থেকেই এভাবে চর্বি বাদ দিয়ে শুধু লাল মাংসটুকু রাখা যেতে পারে৷ যাঁদের কোলেস্টেরলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা মাংস প্রথমে সেদ্ধ করে পানিটুকু ফেলে রান্না করুন৷ এতেও চলে যাবে অনেকখানি চর্বি৷
রোস্ট বা অন্য কোনোভাবে রান্না না করে তাই গ্রিল খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর৷ সাদা সিরকা, লেবুর রস ও লবণ মাখিয়ে কাঁচা মাংস ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত৷ এভাবে রাখলে মাংসের প্রায় ৮০ শতাংশ চর্বিই চলে যায়৷ এরপর তা সংরক্ষণ করা যেতে পারে অথবা রান্না করতে পারেন আপনার পছন্দমতো৷
পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা
কোরবানির ঈদে শুধু নিজের বাসা বা আঙিনা পরিষ্কার রাখাই যথেষ্ট নয়। নিজেদের বাসার ময়লা রাস্তায় খোলা স্থানে না রেখে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। বাড়ির সামনের রক্ত, ময়লা–আবর্জনা পানি ঢেলে ও ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। না হলে এই বৃষ্টির দিনে কোরবানির আবর্জনা এখানে-সেখানে ফেলে রাখলে ময়লা জমে দুর্গন্ধ বের হবে এবং ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি হবে।
রাহিমা সুলতানা: রন্ধনবিদ ও সেরা রাঁধুনী প্রতিযোগিতার বিচারক
রাহিমা সুলতানার দেওয়া একটি রেসিপি
খাসির দম বিরিয়ানি
উপকরণ: খাসির মাংস ১ কেজি, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা–চামচ, রাঁধুনী মরিচের গুঁড়া ১ চা–চামচ, কাজুবাদামবাটা ১ টেবিল চামচ, দুধ ১ কাপ, আলুবোখারা ৮টি, টক দই আদা কাপ, পুদিনাপাতা ১ কাপ, লবণ ১ চা–চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেল ৪ টেবিলচামচ, চাষী চিনিগুঁড়া চাল ৬০০ গ্রাম, রাঁধুনী গরমমসলার গুঁড়া ১ চা–চামচ, গোলাপজল পরিমাণমতো, পেঁয়াজকুচি ১/২ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, কিশমিশ বা পেস্তাবাদাম ২ টেবিল চামচ, জাফরান সামান্য, জায়ফল–জয়ত্রী আধা চা–চামচ, ফ্রেশ ক্রিম ২ টেবিল চামচ, কেওড়াজল ২ টেবিল চামচ, আলুবোখারা ৬টি ও ভাজা আলু ৪টি।
প্রণালি: মাংস ধুয়ে লবণ মেখে ১০ মিনিট রেখে আবার ধুয়ে ফেলুন। মাংসের সঙ্গে টক দই এবং সব মসলা মাখিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। একটি পাত্রে তেল এবং ঘি দিয়ে পেঁয়াজ বেরেস্তা এবং দুধ বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে সামান্য একটু পানি দিয়ে মসলা ভুনে নিন। মাংসের সঙ্গে সব মসলা মেখে রাখুন ২ ঘণ্টা। এরপর লবণ, কেওড়াজল, পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে ভালো করে মাখুন। এরপর যে পাত্রে রান্না করবেন, সেই পাত্রে মাংস নিন। মাংস নিয়ে তার ওপর আলুবোখারা ও সেদ্ধ আলু দিন। তার ওপর চাল দিন। চালের ওপর দুধে ভেজানো জাফরান, ঘি, পেঁয়াজ বেরেস্তা, বাদামকুচি, কাঁচা মরিচ, পুদিনাপাতা সব দিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে রান্না করুন। বেশি আঁচে ১০ মিনিট রান্না করুন। এরপর অাঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট পর তাওয়ার ওপর রাখুন ৩০ মিনিট।
রাহিমা সুলতানা: রন্ধনবিদ ও সেরা রাঁধুনী প্রতিযোগিতার বিচারক