অঞ্চলে অঞ্চলে লুকানো খাবার

বাংলাদেশে আছে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ। প্রতিটি গোষ্ঠীরই আছে নিজস্ব কিছু খাবার। লিখিত রেসিপি আকারে নয়; বরং দেখে দেখেই বছরের পর বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম টিকে আছে এসব খাবার। তেমনই কয়েকটি রান্না তুলে ধরা হলো।

কুড়হি কিতাই, সাঁওতাল

কুড়হি কিতাই

উপকরণ: লপংআরা (জংলি শাক) ২০০ গ্রাম, ভটকাআরা (জংলি শাক) ২০০ গ্রাম, কুমড়েআরা (কুমড়াপাতা) ২০০ গ্রাম, কারভেআরা (কলমিশাক) ২০০ গ্রাম, গাড়ুডিআরা (ছানচি) ২০০ গ্রাম, হিসাআরা (পাকুড়পাতা) ২০০ গ্রাম, শুকনা লঙ্কা ৬টি, কাঁচা লঙ্কা ৩টি, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, রসুনকুচি আধা কাপ, লবণ ও শর্ষের তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি: চুলায় মাটির হাঁড়িতে শর্ষের তেল দিতে হবে। তেলে হালকা ধোঁয়া উঠলে রসুনকুচি, পেঁয়াজকুচি, শুকনা লঙ্কা, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। এরপর এক এক করে সব শাক দিয়ে লবণ দিতে হবে। বাঁশের খুন্তি দিয়ে হালকা করে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ সেদ্ধ করতে হবে। মাঝেমধ্যে ঢাকনা তুলে খুন্তি দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। শাক থেকে বেরিয়ে আসা পানি শুকিয়ে গেলে ঢাকনা খুলে খুন্তি দিয়ে বারবার নাড়তে হবে। পুরো পানি শুকিয়ে গেলে খুন্তি দিয়ে নেড়ে ও ওলট–পালট করে ঝরঝরে করতে হবে, যেন শাকে কোনো পানি না থাকে। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ভাজা শুকনা লঙ্কা দিয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।

রেসিপি: পানমাকতি মুর্মু

জুগিডাইং, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

মুরগির মাংসের গপ্পা, ময়মনসিংহ

মুরগির মাংসের গপ্পা

উপকরণ: ৫০০ গ্রাম (ব্রয়লার) মুরগি, পেঁয়াজকুচি ২ কাপ, আদাবাটা ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৫০ গ্রাম ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: মাংসের টুকরা ছোট করে কেটে ধুয়ে একটি পাত্রে নিন। তাতে পেঁয়াজকুচি, আদাবাটা, কাঁচা মরিচের ফালি আর লবণ মিশিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে ম্যারিনেট করে নিন। ম্যারিনেট করা মাংস ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এবার পাত্রটি চুলায় বসিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ কষালেই মাংস থেকে পানি বের হবে, এই পানি দিয়েই মুরগির মাংসের গপ্পা রান্না হয়ে যাবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে নিন। তেলবিহীন এই রান্নায় পেঁয়াজপাতার কুচি দিলে আরও স্বাদ খুলবে।

রেসিপি: বাবলী রংমা

ময়মনসিংহ

বাচ্চুরি লোই হুরো হেবাং, রাঙামাটি

বাচ্চুরি লোই হুরো হেবাং

উপকরণ: বড় আকারের কলাপাতা ১টি, পাহাড়ি মুরগির মাংস ৫০০ গ্রাম, সেদ্ধ করা বাঁশকোড়ল ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি ১+ আধা কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা–চামচ, জুমের কাঁচা মরিচবাটা ২ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা–চামচ, পাহাড়ি সাবারাং পাতা ১ কাপ, তেল ১ কাপের তিন ভাগের ১ ভাগ, লবণ স্বাদমতো ও পানি আধা কাপ।

প্রণালি: কলাপাতা পরিষ্কার করে পানিতে ধুয়ে নিন। কয়েক টুকরা করে চুলার হালকা তাপে পাতার দুই পাশ ভালোভাবে সেঁকে নিন। এবার বড় একটি পাত্রে একে একে বাকি সব উপকরণ ঢেলে ভালোভাবে মেশান। এভাবে ২০ মিনিট রেখে দিন।

একটি পাত্রে কলাপাতা একটির ওপর আরেকটি আড়াআড়িভাবে বিছিয়ে দিন। এভাবে বেশ কয়েকটি ধাপে কলাপাতার আস্তর বানিয়ে নিন।

এবার মাংসের মিশ্রণটি কলাপাতার আস্তরের ওপর মাঝ বরাবর অল্প অল্প করে ঢেলে দিন। খেয়াল রাখবেন কলাপাতার টুকরা যেন বড় সাইজের হয়। মিশ্রণটি ঢালার পর কলাপাতাগুলোর চারপাশ একসঙ্গে তুলে একটি পুঁটলি বানিয়ে ফেলুন। সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে পুঁটলির মুখটি বন্ধ করে দিন। প্রয়োজন হলে কলাপাতার মাংসের পুঁটলিটি ফয়েল পেপারের সাহায্যে অরেকবার মুড়িয়ে নিন। পুঁটলিটি জ্বলন্ত কাঠকয়লার ওপর রেখে দিন ৪০ মিনিট। মাঝেমধ্যে কয়লার তাপ চেক করুন আর পুঁটলিটি এপাশ–ওপাশ করে নাড়িয়ে দিন যেন পুড়ে না যায়। কাঠকয়লা চুলার ব্যবস্থা না থাকলে কলাপাতার পুঁটলিটি একটি তাওয়ায় রেখে, চুলায় বসিয়ে মাঝারি-হালকা আঁচে রান্না করে নিন। হয়ে গেলে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

রেসিপি: চিয়াংমি লেনা তালুকদার

জা ডো , শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

জা ডো

উপকরণ: দেশি মুরগি ১টি, আতপ চাল ৫০০ গ্রাম, আদাকুচি ২ মুঠো, পেঁয়াজকুচি ৬টি, হলুদগুঁড়া ১ চামচ, লবণ ২ চামচ, লেবু ১টি, গোলমরিচ কয়েকটি ও কাঁচা মরিচ ১০–১৫টি।

প্রণালি: মুরগি কেটে মাংস টুকরা করে নিন। ভালো করে ধুয়ে হালকা গরম পানিতে মাংসের টুকরাগুলো ছেড়ে দিন। কিছু সময় পর মাংস তুলে তাতে আদাকুচি, পেঁয়াজকুচি, গোলমরিচ, লবণ দিয়ে মুরগির মাংস সেদ্ধ করার জন্য চুলায় বসিয়ে ৩০ মিনিট জ্বাল দিন। এবার হলুদের গুঁড়া দিন। নাড়াচাড়া দিয়ে চুলায় রাখুন আরও কিছুক্ষণ। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে ঝোলটুকু আলাদা করে তুলে নিন।

এবার আতপ চাল ধুয়ে অন্য একটি পাত্রে মাংস থেকে আলাদা করে রাখা ঝোলে ভালো করে সেদ্ধ করে নিন। প্রয়োজনমতো পানি দিন। চাল সেদ্ধ হয়ে এলে কাঁচা মরিচ ফালি করে দিয়ে দিন কয়েকটি। পানি শুকিয়ে গেলে ভাত তৈরি।

এবার রান্না করা মাংসগুলোকে কেটে টুকরা টুকরা করে তাঁর সঙ্গে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, লেবু, লবণ দিয়ে মেখে ডো (ভর্তা) বানিয়ে নিন। এবার রান্না করা জা (ভাত)–এর সঙ্গে প্লেটে ডো তুলে নিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি: জুনলি সুঃঙ