মুঠোফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেও যেভাবে ভালো থাকবেন

একটানা স্ক্রিনে চেয়ে না থেকে, নির্দিষ্ট সময় পর বিরতি নিন। মডেল: সায়মা
ছবি: সুমন ইউসুফ

‘টেক ওয়েলনেস’ কথাটি এখন খুব শোনা যাচ্ছে। কতক্ষণ আমরা স্ক্রিনের সামনে থাকব, কতক্ষণ গ্যাজেট ব্যবহার করব, তা নিয়ে নানা রকমের আলোচনা। কেউ বলেন, দীর্ঘ সময় প্রযুক্তির সঙ্গে থাকলে ধীরে ধীরে সৃজনশীলতা কমে আসে। আবার অনেকেই বলেন নির্দিষ্ট সময় প্রযুক্তির সঙ্গে থাকলে সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশ হয়। তবে সবাই একটা বিষয়ে একমত, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে ‘টেক ওয়েলনেস’।

ইউনিসেফের হিসাবে বিশ্বের প্রতি তিনজন শিশুর একজন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। পিউ রিসার্চের হিসাবে ১৩ থেকে ১৭ বছরের ৫১ শতাংশ শিশু-কিশোর ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রে কিশোর–কিশোরীরা প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা করে স্ক্রিনের সামনে সময় কাটায়। এক জরিপে জানা যায়, ৩১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন সারা দিনই প্রায় অনলাইনে থাকেন। তরুণেরা দিনে নানা কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রযুক্তির বিভিন্ন অনুষঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। নানা কারণেই আমাদের স্ক্রিনের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হচ্ছে। এতে আমাদের চোখের ওপর যেমন প্রভাব পড়ে, মনের ওপরও প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলোর ওপর এর প্রভাব তৈরি হয়। তাই ‘টেক ওয়েলনেস’ নিশ্চিত করার জন্য নিচের কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে পারেন।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল বা ল্যাপটপের সামনে বসবেন না। সকালের কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটাতে চেষ্টা করুন। ব্যায়াম করতে পারেন। পরিবারের সঙ্গে গল্প করতে পারেন। কিংবা কাছের কোনো পার্কে ২০ মিনিট হেঁটে আসতে পারেন।

দিনের যে সময়টাতে আপনি সবচেয়ে বেশি সৃজনশীল থাকেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তখনই করার চেষ্টা করুন।

একাধিক ফোন ও ল্যাপটপে সবকিছু সিংক না করাই ভালো। মডেল: স্বর্ণ, কৃতজ্ঞতা: স্পিড টেকনোলজিস

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার এড়াতে গুগল বা মজিলার এক্সটেনশন ব্যবহার করতে পারেন। যেসব ওয়েবসাইটে আপনার আসক্তি আছে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তা বন্ধ করে রাখতে পারেন।

এখন আমরা অনেকগুলো মুঠোফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহার করি। সবকিছুতে সব সিংক (সংযুক্ত) না করাই ভালো। নির্দিষ্ট ফোনে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা ই–মেইল শুধু ল্যাপটপ থেকে ব্যবহার করুন।

ই–মেইল কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নোটিফিকেশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন। শুধু প্রয়োজনীয় ই–মেইলের নোটিফিকেশনগুলোই যেন পান, সেটা নিশ্চিত করুন। বিজ্ঞাপন–সংশ্লিষ্ট নোটিফিকেশন এলে, বারবার স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

যেকোনো মিটিংয়ে ল্যাপটপ বা মুঠোফোন যতটা প্রয়োজন, ঠিক ততটাই ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে মুঠোফোন নিঃশব্দ (সাইলেন্ট) করে রাখতে পারেন। কাগজে-কলম নিয়ে মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করুন। এখনো কাগজে–কলমের বহুমাত্রিক ব্যবহার কমে যায়নি।

দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে না দিয়ে পোমোডোরো টেকনিক (সময় ব্যবস্থাপনার একধরনের উপায়) ব্যবহার করতে পারেন। এ নিয়মে আপনার প্রযুক্তিতে আসক্তি কমে আসতে পারে। এই কৌশলে ২৫ মিনিট করে একেকটি কাজ ভাগ করে নিন। প্রথমে একটি টাইমারে সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। এরপর একনাগাড়ে ২৫ মিনিট কাজ করতে হবে। এরপরে ৫ মিনিট বিরতি নিন। এভাবে চারবার করে কাজ করে যেকোনো কাজ শেষ করতে পারেন।

বিকেলের সময়টা পরিবার কিংবা নিজের জন্য রাখতে পারেন। এ সময় বই পড়তে পারেন কিংবা হাতে-কলমে কোনো কাজে নিজেকে নিযুক্ত করতে পারেন।

মুঠোফোন নিয়ে ঘুমাতে যাবেন না। ঘুমানোর এক-দেড় ঘণ্টা আগে মুঠোফোন বা ল্যাপটপ–সংক্রান্ত সব কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত নেটফ্লিক্স বা টেলিভিশন দেখার অভ্যাস থাকলে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। টেলিভিশন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন।

যেকোনো জায়গায় যাওয়ার পথে গাড়িতে মুঠোফোন ব্যবহার না করে অডিওবুক শুনতে পারেন। কিংবা নিজের পছন্দের কোনো উদ্দীপনামূলক বক্তব্য শুনতে পারেন।

শিশুদের দিনের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মুঠোফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহারে উৎসাহ দিন। অনলাইন ক্লাস বা গেমিং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সারতে বলুন। ঘরের মধ্যে ব্যায়াম কিংবা ঘরের বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন।

প্রযুক্তিতে আসক্তির কারণে যে ধরনের নেতিবাচক সমস্যা তৈরি হয়, শিশু–কিশোরের সঙ্গে তা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন।