প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের মুখ দেখা চাই, বলেছিলেন সাদি মহম্মদ

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ মারা গেছেন গতকাল সন্ধ্যায়। ২০১৪ সালের ৭ মে ‘প্রথম আলো’র বুধবারের ক্রোড়পত্র ‘অধুনা’য় তাঁর জীবনধারা নিয়ে ছাপা হয়েছিল একটি বিশেষ প্রতিবেদন। বরেণ্য এই শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখাটি আবার প্রকাশিত হলো।

সাদি মহম্মদ
ছবি: খালেদ সরকার

পৃথিবীতে মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের মুখ দেখা চাই। তাই বিছানা ছেড়ে সোজা চলে যান মায়ের ঘরে। রাতে ঠিকমতো ঘুম হলো কি না, সকালে কী খাবেন সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ব্যতিক্রম হয় যেদিন সকালে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান থাকে।

‘রবীন্দ্রনাথের মধ্যে আমার জীবনের সবকিছু খুঁজে পাই। আমার হাসি-আনন্দ, সুখ-দুঃখ, জীবনযাপনের সবটা জুড়েই থাকেন রবীন্দ্রনাথ। ২৫ বৈশাখ তাঁর জন্মদিন, কিন্তু আমার কাছে তাঁর অস্তিত্ব সারাক্ষণ।’ বলেন সাদী মহম্মদ। রবীন্দ্রনাথের ভক্ত মানেই যে পাঞ্জাবি পরে ঘুরতে হবে, এমনটা মনে করেন না সাদী। যেমন নিজেই সব সময় পরেন শার্ট। এর বাইরে অন্য কোনো পোশাক পরেন না এই রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী।

বাসায় সাদা লুঙ্গি আর শার্ট পরেন। তবে শার্টের থাকতে হবে দুটি বুকপকেট। সেই পকেট দুটো আবার ঢাকনা দেওয়া। তবে শার্ট ফুলহাতা নয়, সেটা হতে হবে খাটো হাতা। সঙ্গে তৈরি করা প্যান্ট পরেন। পায়ে বেছে নেন স্যান্ডেল। শীতকালে অবশ্য শার্টের ওপরে একটা শাল জড়িয়ে নেন। কোনো দাওয়াতে গেলে অথবা শুটিং থাকলে পরেন নিজের ডিজাইন করা শার্ট। তসর বা সিল্কের শার্ট বানিয়ে নিয়ে নিজ হাতেই নকশা করেন। নানা ধরনের উজ্জ্বল রঙের শার্ট পরেন। তবে যখন তিনি শিক্ষক, তখন বেছে নেন চেক শার্ট। ভালোবাসেন সুগন্ধি লাগাতে। নানা ব্র্যান্ডের সুগন্ধি সংগ্রহে আছে। চন্দনের ধুপও ভালোবাসেন।

চেনা রূপে সাদি মহম্মদ

নিজ হাতেই বাজার করেন সাদী মহম্মদ। মাছ থেকে পটল সবকিছুই কেনেন বেছে বেছে। বললেন, ‘বাজারে গেলে দেখা হয় নানা বয়সের পরিচিত-অপরিচিত মানুষের সঙ্গে। কথা হয়, ভালো লাগে। নিজ হাতে বাজার করার মজাই আলাদা। বাজারে সবার আগে কেনা হয় মায়ের পছন্দের মাছ ও সবজি।’

ভারতের শান্তিনিকেতনে গানের ওপরে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। গত বছর সেখান থেকে অবসর নিয়েছেন সাদী মহম্মদ। তবে গানের তালিম দিয়েই যাচ্ছেন। নিজের বাসাতেই গান শেখান শিক্ষার্থীদের। রবিরাগ নামে তাঁর একটা গানের সংগঠনও আছে। নানা কাজের মধ্যে প্রতিদিন দুপুরে ১০ মিনিট হলেও বিশ্রাম নেন। সময় পেলেই রেওয়াজে বসেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে যোগব্যায়াম করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনকে অনেকটা প্রভাবিত করেছিল

নানা ধরনের গাছ লাগাতে ভালোবাসেন। এসব গাছের যত্ন নেন নিজেই। সিনেমাপাগল এই শিল্পী প্রতি রাতেই সিনেমা দেখেন। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের সিনেমার সংগ্রহ আছে। সিনেমা দেখতে গিয়েই নাকি আজকাল অনেক রাত হয়ে যায় ঘুমাতে। নানা ধরনের রোমাঞ্চ ও প্রেমের উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন। আর গীতবিতান পড়তে পড়তেই হারিয়ে যান রবীন্দ্রভাবনার জগতে। সাদী মহম্মদ বলেন, এই সময়টা নিয়ে বলা যায় কবি গুরুর লেখা ‘অনেক কথা যাওগো বলে কোনো কথা না বলি, তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি।’