প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে দেশের তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ‘ছুটির দিনে’। এবারও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, ক্রীড়া, সংগীত, চলচ্চিত্র, ভ্রমণ, ব্যবসা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আট তরুণের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে—গাই তারুণ্যের জয়গান। সংগীত বিভাগে পড়ুন সানজিদা মাহমুদ নন্দিতার গল্প
২০২২ সালের জনপ্রিয় গানের তালিকা করতে গেলে তাতে অবধারিতভাবেই আসবে কোক স্টুডিও বাংলার ‘বুলবুলি’। এই গানের প্রথম অংশে ঋতুরাজকে আমরা নতুনভাবে পাই, তেমনি পরের অংশ ‘দোল দোল’–এ স্বমহিমায় পাওয়া যায় সানজিদা মাহমুদ নন্দিতাকে। কী সুন্দর গায়কি।
নন্দিতার সঙ্গে আমারও বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে, যার শুরুটা বেশ কয়েক বছর আগে। নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্তর একটি নাচের সংগীতায়োজনের কাজে পূজারই পছন্দ অনুযায়ী আমার স্টুডিওতে আসে নন্দিতা। তখন পর্যন্ত নন্দিতার গান আমার শোনা হয়ে ওঠেনি। স্টুডিওতে গান শুনেই গলায় যত্নের প্রমাণ পেলাম। ভালো লাগল। ওই কাজের মাধ্যমে যতটুকু বুঝলাম, নন্দিতা গান-বাজনা শিখেই গাইতে এসেছ।
নন্দিতার কাছে জেনেছি, তার মা শাহনূর বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল গানের ভুবনে আসার। নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। তাই নন্দিতা আর তার ভাই যেন গান শেখে, সেটা খুব করে চাইতেন শাহনূর বেগম। হয়তো নিজের অপূর্ণ ইচ্ছাটাকে সন্তানদের মাধ্যমে পূরণ করতে চাইতেন তিনি। তাই তো সাড়ে তিন বছর বয়সেই নন্দিতার গানে তালিম নেওয়া শুরু। তার প্রথম ওস্তাদ ছিলেন দিলীপ মজুমদার। মুন্সিগঞ্জে স্কুলের পাঠ শেষ করে যখন ঢাকার সিটি কলেজে ভর্তি হয় নন্দিতা, তখনই ছায়ানটেও গান শিখতে শুরু করে।
২০১৩ সাল। সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা তখন আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়ে। সে সময়ই ‘বাংলাদেশি আইডল’ রিয়েলিটি শোতে নাম লেখায় নন্দিতা। সেরা ১০-এর সাত নম্বরে ছিল নন্দিতা। কম্পিউটারবিজ্ঞানের ছাত্রীকে পরে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দর্শক-শ্রোতারা শুনেছেন, দেখেছেন।
‘সিলন মিউজিক লাউঞ্জ’-এ বাংলা আধুনিক গানের কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, আরতি মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লাসহ অনেকের গান নতুন করে নন্দিতার গলায় বিভিন্ন সময় শুনে মনে মনে আরেকটু ভরসা পেলাম এই ভেবে যে নন্দিতাকে দিয়ে সব ধরনের গান গাওয়ানো সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানের একটি অংশে কাজী নজরুল ইসলামের কিছু গান নিয়ে একটি উপস্থাপনা তৈরির দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছিল। শাহীন সামাদ, ইয়াসমিন মুশতারী, পিন্টু ঘোষ, সুকন্যা মজুমদারসহ আমাদের সঙ্গে ঠিকঠাক গলা মিলিয়ে গাইল নন্দিতা। আবারও ওর গানের প্রতি ভালোবাসা বুঝতে পারলাম।
শুরুতেই বলেছি কোক স্টুডিওর কথা। পরপর দুটো সিজনে তাকে গাইতে শুনলাম। নতুন এবং ভালো কিছু গাওয়ার প্রবণতা নন্দিতার গায়কিতে প্রকাশ পেয়েছে। তবে, ভালোর তো শেষ নেই। নন্দিতা যেমন করে গাইছে বা গাওয়ার চেষ্টা করছে, তাতে ওর জন্য আমার শুভকামনারও শেষ নেই। ও আরও ভালো গেয়ে যাক, এই কামনাই করি।
লেখক: শিল্পী ও সংগীত পরিচালক