‘চোখের পলক ফেলবে, আর দেখবে এই সময় অতীত হয়ে গেছে’

প্রযুক্তিপণ্যবিষয়ক ভিডিও বানিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মার্কিন ইউটিউবার মার্কেস ব্রাউনলি। এখন তাঁর সাবস্ক্রাইবার প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভেনস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সমাবর্তনে বক্তৃতা দিয়েছেন এই তরুণ। অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিও দেওয়া হয়েছে।

মার্কেস ব্রাউনলি
ছবি: মার্কেস ব্রাউনলির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

আমাকে বলা হয়েছে, কথা বলার জন্য ৭ মিনিট পাব। আমার অধিকাংশ ভিডিওর দৈর্ঘ্য ৭ মিনিটের অনেক বেশি। সম্পাদনার কাঁচি চালিয়ে সেগুলোকে ছোট করতে হয়। এখানেও একই পদ্ধতি কাজে লাগাব।

তোমাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শুরুতেই রীতিমতো একটা ধাক্কা খেয়েছি। কারণ, মনে হচ্ছিল, যেন বহুদিন নয়, মাত্র কয়েক মিনিট আগেই আমি তোমাদের আসনে বসে ছিলাম। পরে হিসাব করে দেখলাম, সেটা ৯ বছর আগের কথা। বাপ রে! কীভাবে সময় চলে যায়! যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক করেছি, সেখানেই সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়ে আমি সত্যিই ভীষণ কৃতজ্ঞ।

আজ দুটি কথা বলব। প্রথমটা, একটা উক্তি। সেটা দিয়েই শুরু করি। কথাটা বলেছিল আলটিমেট ফ্রিসবি খেলার এক সতীর্থ। হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন সদ্য ভর্তি হয়েছি, তখন আলটিমেট ফ্রিসবি খেলতাম। কয়েক দফা যাচাই-বাছাইয়ের পর মূল দলে জায়গা পেয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচে মাঠভর্তি দর্শকের সামনে যখন খেলতে নেমেছি, ক্যাপ্টেন বলেছিল, ‘বন্ধুরা, লম্বা করে দম নাও। একমুহূর্তের জন্য আশপাশটা তাকিয়ে দেখো। প্রথমবার একটা দল হিসেবে আমরা খেলতে নেমেছি। নিশ্চয়ই সবারই দারুণ লাগছে। কিন্তু নিশ্চিত থাকো, তোমরা চোখের পলক ফেলবে, আর দেখবে এই সময় অতীত হয়ে গেছে। দেখবে চোখের পলকেই কেটে গেছে পুরো মৌসুম।’

সত্যিই তা–ই। পুরো মৌসুমে আমরা একসঙ্গে প্র্যাকটিস করেছি, অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি, পয়েন্ট পেয়েছি। কিন্তু সময়টা হুড়মুড় করে চলে গেছে। দিন শেষে আমার শুধু প্রথম ম্যাচের সেই কোলাহলটাই মনে আছে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মার্কেস ব্রাউনলি

তাই তোমরা যারা আজ সমাবর্তনের টুপি, গাউন পরে বসে আছ; তোমাদের বলব আশপাশে একবার তাকাও। সহপাঠী, বন্ধু, পরিবারের সদস্যদের একবার দেখো। আজ তোমার উদ্‌যাপনের দিন। কিন্তু নিশ্চিত থাকো, চোখের পলক ফেলবে, আর দেখবে ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। অতএব একটু সময় নিয়ে বর্তমানটা উপভোগ করো।

উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি খুবই খারাপ। আয়োজকেরা সম্ভবত এটা জানতেন না। জানলে আমাকে আমন্ত্রণ জানাতেন কি না, কে জানে! সমাবর্তনে সাধারণত নিজের শিক্ষা, জ্ঞান ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা। কিন্তু আমি যা করেছি, যা শিখেছি, সব যে খুব পরিকল্পনা করে, তা নয়।

তাই একটা উপদেশই তোমাদের দিতে পারি। এমন একটা কিছু খুঁজে বের করো, যা তোমাকে রোমাঞ্চিত করে। অনেক পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ করেছ। নিজেকে প্রশ্ন করার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। আমি কে? আমি আসলে কী করতে চাই? কী আমাকে আলোড়িত করে? কীভাবে আমি পৃথিবীতে প্রভাব রাখতে চাই? যা কিছু পেয়েছি, কীভাবে তা ফিরিয়ে দিতে চাই?

আমি এই ক্যাম্পাসেই পড়েছি। জানি তোমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তোমরা নতুন নতুন জিনিস শিখেছ, দল বেঁধে নানা সমস্যার সমাধান করেছ। দক্ষতা অর্জন করেছ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়াও একটা বড় দক্ষতা। এমনকি এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী দক্ষতা।

অনেকে হয়তো এরই মধ্যে জানো, তুমি কী করতে চাও। তুমি ভালোবাসো, এমন কোনো পথ বেছে নিতে পারলে পৃথিবীতে তোমার কাজের ছাপ রেখে যাওয়া সহজ হবে। যেমন আমার বেলায় কাজটা ছিল ইন্টারনেটে প্রযুক্তি–সংক্রান্ত ভিডিও বানানো। তোমরাও যা খুশি বেছে নিতে পারো। আকাশ তোমার সীমানা।

সমাবর্তন একটা দারুণ শব্দ। তুমি হয়তো এরই মধ্যে কয়েকটা সমাবর্তন পেরিয়ে এসেছ। স্কুলে, হাইস্কুলে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনই কি শেষ? না। এরপর তোমার প্রথম চাকরির সমাবর্তন হবে। দ্বিতীয় চাকরির সমাবর্তন হবে। নতুন কিছু শিখলে, নতুন কোনো পরিবর্তন তোমার মানসিকতায় এল; সেটাও কি একধরনের সমাবর্তন নয়? আমি আশা করব, তোমাদের জীবনে আরও বহু সমাবর্তন আসবে। এটাই শেষ নয়। অভিনন্দন।