পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে খুব ভেঙে পড়েছি। অনলাইনে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয়ের পর আমাদের সম্পর্ক হয়। ছেলেটি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি ভেঙে পড়েছি। জানি না, কীভাবে এসব কাটিয়ে উঠব। তার কাছে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি আছে। এটা নিয়ে এখন আমি উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া আমরা যখন ভিডিও কলে কথা বলতাম, সেসবও ছেলেটি রেকর্ড করে রেখেছিল। এখন ছেলেটি যদি আমার ছবি প্রকাশ করার চেষ্টা করে বা ফোনকল ফাঁস করে দিতে চায়, তাহলে কী করব? এসব ঘটনার আগেই আমি কি আইনের আশ্রয় নিতে পারি, যাতে সে আমার ক্ষতি করতে না পারে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের ক্ষেত্রে একটু অসচেতন হলেই নানা ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারেন। এখন পর্যন্ত যদিও এ ধরনের কোনো হুমকি ছেলেটি আপনাকে দেয়নি। কাজেই আপনি তাকে অনুরোধ করতে পারেন, যাতে সে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে। জেনে হোক বা না জেনে, সে যদি অনলাইনে কোনো ছবি প্রকাশ করে, তাহলে এ জন্য তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
আপনি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি যা সংরক্ষিত আছে, সব মুছে ফেলতে বলুন। সে যদি আপনার ছবি প্রকাশ করার চেষ্টা করে বা ফোনকল ফাঁস করে দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এই সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার ক্ষমতাবলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারে। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারে।
তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বলা আছে যে কোনো ব্যক্তি যদি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হতে পারে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে।
তবে যেহেতু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি সে দেয়নি, কাজেই আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির সমাধান করা নেওয়াই ভালো হবে। সম্ভব হলে আপনি আপনার অভিভাবকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করুন, তাঁদের সাহায্য চান।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA