পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমার স্ত্রী তার প্রেমিককে বিয়ে করেছে। তাদের বিয়ের ১৫ দিন পর আমি নোটারি পাবলিকের নোটিশ পাই। তাদের বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত সে আমার সংসারে ছিল। কিন্তু আমার কাছে যে নোটিশ এসেছে, সেখানে ৩ মাস ১৩ দিন আগের তারিখ দেওয়া। তালাক গোপন করে সে আমার সঙ্গে ছিল। নিয়ম অনুযায়ী আমাকে বা আমার এলাকার চেয়ারম্যানকে কোনো নোটিশও সে পাঠায়নি। এখন আমার প্রশ্ন হলো—
১. চেয়ারম্যান নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। কিন্তু যেহেতু চেয়ারম্যান নোটিশই পাননি, তাহলে কি তালাক কার্যকর হবে?
২. আমি কি আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব?
৩. তালাক–ই–তৌফিজ আমি দিইনি, আমাকে অবগত না করে কাজি দিয়েছেন। তাহলে এটার কী হবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে তাঁকে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সেই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র অথবা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে? আইনে বলা আছে তখনই/পরবর্তী সময়ে/যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগে বা সরাসরি, যেকোনোভাবে হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এই নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে।
নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তালাক কার্যকরের পর যে কাজির মাধমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক। তালাকের ক্ষেত্রে আইনে যেসব নিয়মের কথা বলা আছে, তা পালন না করলে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড কিংবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
বিয়ের সময় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হলো কি না, উল্লেখ করতে হয়। করা হলেই স্ত্রী সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হবে। পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হবে।
আপনার প্রশ্ন থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনার স্ত্রী তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। সেটা গোপন করে আপনার সংসারে ছিলেন। তাই তালাকটি কার্যকর হয়নি। আপনি চাইলে আপনার প্রাক্তন এবং তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এ বিষয়ে একজন আইনজীবীর পরামর্শ জরুরি।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA