কমলগঞ্জের ১০০ বছর বয়সী নাটকের দলটির অভিনয়শিল্পী কারা জানেন

শত বছর ধরে নিজেদের গ্রামে নাটক করে আসছে কমলগঞ্জের ‘ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টি’। এবারও শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। মৌলভীবাজারের মণিপুরি নাট্যদলটির কথা জানাচ্ছেন মানাউবী সিংহ

আমুনবা উহৈ নাটকের দৃশ্য
ছবি: আনিস মাহমুদ

গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় অস্থায়ী একটা মঞ্চ। সামনে সারি সারি চেয়ার পাতা। চেয়ারের সামনের অংশে ত্রিপল বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা হয়েছে। মঞ্চের দুই পাশে ধানখেত। এক পাশে সড়ক। সড়ক থেকে শামিয়ানা টানানো অংশজুড়ে মানুষের ভিড়। মঞ্চে প্রদর্শিত হচ্ছে আমুনবা উহৈ (গাছের পাকা ফল) নামের একটি নাটক। নাটকের মূল ভাব পারিবারিক। মণিপুরি ভাষার নাটক হলেও দর্শকসারিতে আছেন অন্য ভাষাভাষী মানুষও। তাঁরা অভিনয় দেখেই বুঝে নিচ্ছেন নাটকের মর্ম।

গত নভেম্বরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রামে গিয়েছিলাম ‘নিঙোল পালি কুম্মৈ’র (গ্রামের নারীদের আয়োজনে অনুষ্ঠান) সময়। প্রতিবছর মণিপুরি রাস উৎসবের পরদিন ভানুবিল গ্রামে ‘নিঙোল পালি’ হয়ে থাকে। এ উপলক্ষেই মণিপুরি ভাষার নাটক মঞ্চস্থ করে ‘ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টি’।

নাটক দেখতে এসেছেন গ্রামের মানুষেরা

সেই নাটক দেখতে গিয়েই জেনেছি, নাট্যসংগঠনটির বয়স শত বছর। প্রতিবছরের মতো এবারও নাটকের প্রদর্শনীর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টির সভাপতি রণজিৎ সিংহ জানালেন, এবারের আয়োজন নভেম্বরের শেষ দিকে করা ঠিক হয়েছে। যাঁরা নাটকে অংশ নেন, তাঁদের বেশির ভাগই চাকরি ও পড়াশোনার কারণে গ্রামের বাইরে আছেন। তাঁরা রাস উৎসবের সময় বাড়ি এলে রিহার্সাল শুরু হবে।

ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টির পরিবেশনা

যেভাবে শুরু

হরিদাস সিংহের বয়স এখন ৯৬ বছর। ভানুবিল গ্রামের মানুষ তিনি। একসময় ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টিতে অভিনয় করেছেন। নির্দেশনাও দিয়েছেন বেশ কিছু নাটক। জানালেন, তাঁর জন্মের কয়েক বছর আগে সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু, তখন থেকেই নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে।

অংশগ্রহণকারীরা শৌখিন অভিনেতা-অভিনেত্রী। কেউ শিক্ষার্থী, কারও পেশা চাকরি, কেউ আবার ব্যবসায়ী। শুরুটা বিনোদনের জন্য হলেও এটাকেই এখন নিজেদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার মাধ্যম হিসেবে দেখছেন সদস্যরা। নাটকের মাধ্যমেই তুলে ধরছেন মণিপুরিদের সামাজিক, পারিবারিক ও সমসাময়িক নানা বিষয়। সেই সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয়ও।

রণজিৎ সিংহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনটি নিজেদের টাকায় চলছে। একটি স্থায়ী মঞ্চ কিংবা অনুশীলনের জন্য স্থায়ী কিছু বানানোর মতো সামর্থ্য তাদের নেই। সেটা হলে ভালো হতো। এরপরও আমরা ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় একত্র হব, কাজ করব। এভাবেই এগিয়ে যাবে আমাদের ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টি।’