গত ২৪ আগস্ট ফ্রান্স থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাভেল ভ্যালেরিয়েভিচ দুরভ। তারপর থেকে মূলত বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছেন বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামের এই সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা। টেলিগ্রাম অ্যাপের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর অবৈধ লেনদেন পরিচালনা, ফরাসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের অস্বীকৃতি এবং অ্যাপের মাধ্যমে শিশুদের যৌনতাসংক্রান্ত ছবি বিতরণের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারের পর থেকে ফরাসি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে আছেন ৩৯ বছর বয়সী এই রুশ উদ্যোক্তা। ৪০–এর কম বয়সে ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার পরিমাণ সম্পদের মালিক দুরভকে নিয়ে ৭টি চমকপ্রদ তথ্য জেনে রাখুন।
১৯৮৪ সালের ১০ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিনগ্রাদে জন্ম পাভেলের। জন্ম সোভিয়েত ইউনিয়নে হলেও বেড়ে উঠেছেন ইতালিতে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। পাভেলের জন্মস্থানের নাম লেলিনগ্রাদ থেকে হয়ে যায় সেন্ট পিটার্সবার্গ, দেশ হয়ে যায় রাশিয়া। ইতালি ছেড়ে রাশিয়ায় এসে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সটির ভাষাবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন পাভেল। ফেসবুকের আদলে রাশিয়ায় চালু করেন ‘ভিকন্তাক্তে’ নামের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। রাশিয়া ছাড়াও ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সর্বশেষ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পান পাভেল। সে হিসেবে মোট চারটি দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধরলে অবশ্য সংখ্যাটা পাঁচ!
রুশ স্কুলগুলোর একটা ঐতিহ্য হলো, স্কুলজীবন শেষ করার সময় শিক্ষকদের বাড়িতে গিয়ে বিদায় নিতে হয়। সেই সঙ্গে ক্যামেরার সামনে নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করারও নিয়ম আছে। পাভেলের স্কুলশিক্ষক জর্জি মেদনিকভের তথ্যমতে, সেদিনই তিনি নিজেকে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট দুনিয়ার ‘একজন দৃষ্টান্ত’ হয়ে উঠবেন বলে আশা করেন।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পাভেলের সঙ্গে পরিচয় হয় দারিয়া বন্দারেনকোর। ক্যাম্পাসে তুমুল জনপ্রিয় মেধাবী পাভেলের সাক্ষাৎকার নিতে আসেন দারিয়া। দারিয়া তখন ‘স্টুডেন’ নামের একটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। এরপর প্রণয়, বিয়ে। পরে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও পাভেল-দারিয়া দম্পত্তির দুই সন্তান আছে।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় ১২২তম স্থানে উঠে আসেন রাশিয়ার ‘মার্ক জাকারবার্গ’খ্যাত পাভেল দুরভ। দুরভের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। এই সম্পদের বেশির ভাগই আসে টেলিগ্রাম থেকে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি ব্যাবহারকারী আছে এই বার্তা আদান-প্রদান মাধ্যমটির।
অন্য বিলিয়নিয়ারদের মতো পাভেলও যথেষ্ট বিলাসী জীবন যাপন করেন। বিলাসী জীবন যাপন করতে গিয়ে একাধিকবার খবরের শিরোনামও হতে হয়েছে তাঁকে। ২০১৬ সালে তাঁকে দামি ও বিলাসবহুল প্রমোদতরি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লার্সেনের একটি প্রমোদতরিতে সময় কাটাতে দেখা যায়। নিজেই টুইটারে তা শেয়ার করেছিলেন। ইয়টওয়ার্ল্ডের তথ্যমতে, লার্সেন নির্মিত একটি প্রমোদতরিতে থাকতে হলে আপনাকে গুনতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ মার্কিন ডলার!
পাভেল-দারিয়া দম্পত্তির দুটি সন্তান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পাভেল স্পার্ম ডোনেট করে চলেছেন। একটি টেলিগ্রাম পোস্টে পাভেল জানান, এভাবে প্রায় ১০০ সন্তানের ‘বায়োলজিক্যাল’ বাবা হয়েছেন তিনি।
হ্যাঁ, যা শুনছেন, তা অনেকটাই সত্য। এক্সে (সাবেক টুইটার) সম্প্রতি পাভেলের এক ভিডিও সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, মাত্র ৩০ জন প্রকৌশলী নিয়ে টেলিগ্রাম চালাচ্ছেন। এমনকি তাঁর প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক। এ তথ্য ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা নানা রকম মন্তব্য করছেন। মাত্র ৩০ জন কর্মী নিয়ে দুবাইয়ে বসে এত বড় প্রতিষ্ঠান চালানোয় টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তবে টেকক্রাঞ্চকে টেলিগ্রামের মুখপাত্র বলেছেন, ৩০ জন প্রকৌশলী ছাড়াও আরও ৩০ জন কর্মী টেলিগ্রামের ‘কোর টিমে’ কাজ করেন।
সূত্র: টেম্পো, রাশিয়া বিয়ন্ড ও টেকক্রাঞ্চ