কলকাতার অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটিতে এআইইউবির ১০ শিক্ষার্থী

১০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিডিয়া অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন (এমএমসি) বিভাগের শিক্ষক নিয়াজ মজুমদার
ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ কার?

এ–ই ছিল বিতর্কের বিষয়। জমজমাট বিতর্কের শেষে আমরা আরও একবার বুঝতে পেরেছিলাম, রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাস-কবিতাকে আসলে দেশ বা জাতির গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা সম্ভব নয়।

তেমনি গণ্ডিতে বাধা সম্ভব নয় শিক্ষাকেও। বরং নিজ ক্যাম্পাসের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ, দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বকে জানাই তো বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে আমরা কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী গিয়েছিলাম ভারতের কলকাতার অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে নানা কার্যক্রমের মধ্যে একটি ছিল বিতর্ক। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’ বা বিনিময় কর্মসূচির আয়োজন করেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন (এমএমসি) বিভাগের শিক্ষক নিয়াজ মজুমদার।

গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে আমরা ট্রেনে চেপে রওনা হই। কলকাতায় পৌঁছেই প্রথমে গন্তব্য—অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি। সারা দিনের যাত্রার ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, প্রকৃতি। রাতটা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলেই কাটিয়েছি।

পরের ৯ দিনজুড়ে ছিল নানা আয়োজন। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান, মাস্টার ক্লাস, ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার পাশাপাশি কফি হাউস, কলেজ স্ট্রিট, আলিপুর জেল ও শান্তিনিকেতন ভ্রমণ আমাদের দিনগুলোকে স্মরণীয় করেছে।

১১ সেপ্টেম্বর এআইইউবির এমএমসি বিভাগ এবং অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির স্কুল মিডিয়া অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এর মধ্য দিয়ে আমরা দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাব।

কফি হাউসে জমেছিল আড্ডা

আমাদের ছোট্ট দলটির আর সব সদস্যের মতো আমারও খুব ইচ্ছা ছিল কলকাতা শহরটা ঘুরে দেখব। কলেজ স্ট্রিটের সেই বিখ্যাত কফি হাউসে পা রেখেই আমরা যেমন মনের অজান্তেই গেয়ে উঠেছিলাম, ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই।’ তবে আমাদের আড্ডা ঠিকই জমেছিল সেদিন।

ইতিহাসের শহর, সংস্কৃতির শহর, ভালোবাসার শহর কলকাতা আমরা ঘুরেছি দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে নানা খাবারের স্বাদ নেওয়া, সেটিও এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

১৫ সেপ্টেম্বর আমরা পুরো দল চলে যাই শান্তিনিকেতন। ছোটবেলায় বিভিন্ন গল্পে শান্তিনিকেতন নিয়ে পড়েছি। কিন্তু এভাবে যাওয়া হবে, কখনো ভাবিনি। শান্তিনিকেতন নামটির সার্থকতা সেখানে পা রাখলেই টের পাওয়া যায়। শব্দের অত্যাচার নেই, শহরের বিষাক্ত ছোঁয়া নেই। কবিগুরু পুরো জায়গাকে ঠিক তাঁর কবিতার মতো ছন্দে বেঁধে সাজিয়েছেন।

তিন দিনের জন্য আমাদের ঠিকানা হয়েছিল শান্তিনিকেতনের একটা গেস্টহাউস। আমরা সেখানে রবীন্দ্রভবনে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। আনাচকানাচ ঘুরে গিয়েছিলাম শনিবারের সোনাঝুরির হাটে। হাটটি মূলত সেখানকার স্থানীয় মানুষের জন্য হলেও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন হাটে কেনাকাটার জন্য।

শান্তিনিকেতন থেকে দুদণ্ড শান্তি নিয়ে আমরা ১৭ সেপ্টেম্বর আবার ফিরি অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটিতে। পরদিন দুপুরে এআইইউবির পক্ষ থেকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করি। অনুষ্ঠানে আমাদের দেশীয় নাচ, গান, প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় বাংলাদেশের রূপ ও সংস্কৃতি। ১৯ সেপ্টেম্বর ভোরে রওনা হই দেশের উদ্দেশে।

এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামটি শেষ হলেও আমাদের দুই ক্যাম্পাসের মধ্যে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব থেকেই যাবে। এই ১০ দিনে আমরা শুধু যে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, তা নয়, পেয়েছি ভালোবাসা, আন্তরিকতার ছোঁয়া। পাঠ্যবইয়ের বাইরে পাওয়া এসব শিক্ষা নিশ্চয়ই আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে কাজে আসবে।