নাহিন ও রাহিন
নাহিন ও রাহিন

ক্রিকেট ছিল ‘প্যাশন’, এখন ক্রিকেট ঘিরেই তাঁদের পেশা

সায়েব ইহসান ও সাজেদুল হাসান, দুজনই কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। একজন আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, অন্যজন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। শুধু পড়ার বিষয়ই না, দুজনের ডাক নামেও মিল। নাহিন-রাহিন। একজন বাংলাদেশ টেলিভিশনের, অন্যজন বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী। সব মিলিয়ে দুজনকে যমজ ভাইও মনে করেন কেউ কেউ।

আসলেই নানা দিক থেকেই বিশেষ তাঁদের বন্ধুত্ব। শুরুটা হয়েছিল নটর ডেম কলেজের সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে। গানের সূত্রেই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ততা, সেখান থেকে পরিচয়। এর মধ্যে মহামারির কারণে কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় গান-আড্ডায় জমে ওঠা বন্ধুত্বটা আরও গভীর হয়, যখন তাঁরা খেলার প্রতি, বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি একে অপরের অনুরাগ খুঁজে পান। দুই বন্ধু ভাবতে শুরু করেন, আগ্রহের বিষয়টা নিয়ে আরও কী করা যায়? এই চিন্তা থেকেই তাঁরা গড়ে তোলেন তাঁদের স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম ‘ক্রিকেটাঙ্গন’।

শখ থেকে পেশা

লক্ষ্য ছিল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষকেই আগ্রহী করবে। সবাই আলোচনায় অংশ নেবেন। সেই লক্ষ্যেই সব কনটেন্ট (আধেয়) ইংরেজিতে প্রকাশ করতে থাকেন তাঁরা। শুরুতে ছিল সাধারণ বিশ্লেষণ, যেকোনো ম্যাচের হালনাগাদ তথ্য, হাস্যরসাত্মক কনটেন্ট ইত্যাদি। ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্মটি বড় হলো, বাড়তে থাকল অনুসারীর সংখ্যা। বাইরের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নাহিন-রাহিনের উদ্যোগ। বর্তমানে ‘ক্রিকেটাঙ্গন’-এ ‘অডিয়েন্স’ আছে তিন লাখের বেশি, যার ৩১ শতাংশই বিদেশি। শুধু তা–ই নয়, অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার থেকে শুরু করে নানা দেশের ক্রিকেটাররাও ক্রিকেটাঙ্গনের পোস্ট বিভিন্ন সময় শেয়ার করেছেন।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দল ঢাকা ক্যাপিটালস সম্প্রতি তাদের কনটেন্ট তৈরির জন্য এই দুই তরুণকে নিয়োগ দিয়েছে। এর আগে টি-টেন লিগের দল বাংলা টাইগার্সের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। বাংলা টাইগার্সের থিম সংটি লিখেছেন রাহিন। গেয়েছেন দুই বন্ধু মিলেই। রাহিন বলেন, ‘জিম আফ্রো টি-টেন লিগের (জিম্বাবুয়ের একটি টুর্নামেন্ট) ম্যাচ চলাকালে যখন আমাদের গাওয়া থিম সংটি শুনতে পাই, অন্য রকম একটা অনুভূতি হয়। ক্রিকেট আর গান, দুই জায়গাতেই আমাদের প্যাশন। এ বিষয়টা বেশি স্পেশাল ছিল।’

শুধু ‘প্যাশন’ নয়, ক্রিকেটাঙ্গন এখন দুই বন্ধুর পেশাও বটে। গ্রামীণফোন, টি-স্পোর্টস, টফি, স্কয়ারের মতো নানা নামী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিও হয়েছে তাঁদের। নাহিন বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালে প্রথম আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে আয়ের সুযোগ পাই। শখের বশে শুরু করা কাজ থেকে আয়ও করতে পারছি, এ বিষয়টা খুব ভালো অনুভূতি দিয়েছে। এখন নিয়মিতই আমরা দেশের নানা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি।’

দুজনই কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী

স্বপ্ন আরও বড়

ক্রিকেটাঙ্গনকে একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চান নাহিন-রাহিন, যেখানে বৈশ্বিক নেটিজেনদের আরও বেশি আকৃষ্ট করা যাবে। নাহিন বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা, একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট। যেখানে ক্রিকেটের খবর, বিশ্লেষণ, আর অন্যান্য বিষয়বস্তু আরও সংগঠিতভাবে উপস্থাপন করা যাবে। ক্রিকবাজ যেমন ভারতে একটা ব্র্যান্ড। আমাদের দেশের তো তেমন কিছু নেই। আমরা একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে চাই।’

ভবিষ্যতে ভিডিও কনটেন্ট তৈরির কথাও ভাবছেন তাঁরা। যেখানে বিভিন্ন ম্যাচের প্রিভিউ, খেলোয়াড়দের বিশ্লেষণ এবং ক্রিকেটবিষয়ক নানা কিছু থাকবে। দুজনেই কম্পিউটারবিজ্ঞানের ছাত্র, তাই ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করার আগ্রহও আছে। সব মিলিয়ে ক্রিকেটকে ঘিরেই গড়তে চান ক্যারিয়ার।