আজ চা দিবস। ঢাকার শত শত চায়ের টং বা দোকান গড়ে উঠেছে এ শহরের চা-প্রেমীদের জন্যই। ঘুরে আসতে পারেন। চেখে দেখতে পারেন ভিন্ন ভিন্ন চায়ের স্বাদ
এই শহরে চায়ের দোকানের অভাব নেই। রাস্তায়, ফুটপাতে, অলিগলিতে কোথায় নেই চায়ের টং। কোথাও জোট পাকিয়ে একসঙ্গে অনেকগুলো, কোথাও আবার একটা কি দুটি টং। আবার বড় রেস্তোরাঁয়ও পাওয়া যায় চা। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো দিকে পাঁচ মিনিট হেঁটে কোনো চায়ের দোকান না পাওয়ার ঘটনা বিরল। শহরের শত শত ধরনের চায়ের মধ্যেই চা-প্রেমীরা খুঁজে বের করেন তাঁদের সবচেয়ে প্রিয় চা। সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে যান সেখানে। তাঁদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এখানে রইল কয়েকটির বয়ান।
বছরের পর বছর ধরে সেই একই স্বাদ। দুধ আর লিকার ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি ঘন চায়ের ওপর পাতলা সরের প্রলেপ। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই মিষ্টি। চা-প্রেমীদের অনেকের দাবি, কেউ চা খেতে পছন্দ না করলেও স্টারের চা তার ভালো লাগবে। ঢাকায় স্টারের ১১টি শাখার প্রতিটিতেই মিলবে একই স্বাদের দুধ চা। দুপুরে খাবারের সময়টা যেহেতু রেস্তোরাঁর সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় তাই সে সময় চা দিতে একটু গড়িমসি করেন ওয়েটাররা। এ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা, যেকোনো বেলাতেই চা পাবেন। প্রতি কাপ চা ২৫ টাকা, আর প্লাস্টিকের কাপে করে নিয়ে যেতে চাইলে ৩০ টাকা।
সাদা ক্রিমের ফোম তৈরি করে দিয়ে দেওয়া হয় ঘন দুধের চা-ভর্তি লম্বাটে কাপে। ওপরে ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাদামের গুঁড়া। ব্যস, হয়ে গেল চা অ্যান্ড চিলের সিগনেচার মিল্ক টি। ক্রিম মালাই, রং চা, মসলা রং চা, লেবু চা ছাড়াও এখানে পাবেন নাশতার বিভিন্ন পদ, নানা ফলের জুস ও মিল্কশেক। চা অ্যান্ড চিলের ১২টি শাখার প্রতিটিই ঢাকার ব্যস্ততম এলাকাগুলোয়– মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোড, কলাবাগানের ডলফিন গলি, ১৭ নম্বর বনানী, ১ নম্বর বনশ্রী, মিরপুর ৬, সাগুফতা, ধানমন্ডি জিগাতলা, কাটাসুর, সিদ্ধেশ্বরী, পশ্চিম উত্তরা, খিলগাঁও তালতলা ও গুলশান লেক। আজকাল আরও নতুন তিন ধরনের চা নিয়ে এসেছে চা অ্যান্ড চিল। আমের মৌসুম তাই ম্যাঙ্গো টি, বিশেষ একধরনের কাটিং চা এবং কফি ও চায়ের সংমিশ্রণে চা-ফি।
গুলশান ২-এর গোলচত্বরের কাছের গলিতে এর অবস্থান। এই চায়ের দোকানে চা খেতে হলে রীতিমতো লাইন দিতে হয়। নাহ, একদমই বাড়িয়ে বলা না। গুলশানের অলিগলিতে খুব একটা চায়ের দোকানের দেখা না পাওয়া যাওয়াটাও হয়তো ভিড়ের একটা কারণ। তবে ভিড় ঠেলে চা খেতে মন্দ লাগবে না। যেহেতু নাম রংপুর, তাই বিশেষ কোনো রং চা আছে কি না জিজ্ঞাসা করতেই বিক্রেতা বললেন, ‘রং মসলা চা খেয়ে দেখতে পারেন।’ বললাম, ‘তাই দিন।’ এই চায়ের চেহারা বেশ লোভনীয়। টি-ব্যাগের রং চায়ে ভাসছে অনেক কিছু: দারুচিনি, লেবু, তিসি, কালিজিরা, তেজপাতার টুকরা, আদা, লং আর এলাচি। সব মিলিয়ে চায়ের কাপে উৎসব উৎসব ভাব। এগুলো সরিয়ে খেতে একটু ঝামেলা, কিন্তু স্বাদ অসাধারণ। সব মিলিয়ে রংপুরে পাবেন প্রায় ২৭ ধরনের চা। ৩০ থেকে শুরু করে পাবেন ২০০ টাকার জাফরান চা-ও। আরও পাবেন চার ধরনের ফলের রস এবং চার ধরনের নাশতার পদ।
কয়েক দিন পরপরই নতুন কোনো চায়ের প্রণালি নিয়ে ভাইরাল হয় টিএসসির টংগুলো। অপরাজিতা চা, গাঁদা ফুলের চা, মরিচ-চা, এমনকি বোম্বাই মরিচের চা—কিছু না কিছু চলতেই থাকে। সারি সারি চায়ের দোকান আলোচনায় থাকুক না থাকুক, সেখানকার ভিড় কোনো দিনই কমে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় একবার গিয়েছেন কিন্তু টিএসসির চা খাননি, এমনটা পাওয়া দুঃসাধ্য। সাধারণ রং বা দুধ চা থেকে শুরু করে যাঁর যেমনটা চাই, এমনকি নতুন কোনো রেসিপি বললে সেটাও তৈরি করে দিতে পারেন সেখানকার চা বিক্রেতারা।
এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রমরমা এক চায়ের দোকান। সেখানকার ছাত্র-শিক্ষক, চাকরিজীবী সবার আড্ডার স্থান হয়ে ওঠা টংঘর বছর তিন আগে হঠাৎ বিনা নোটিশে বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন হলো আবার খুলেছে সেই দোকান। আগের মতো বড় দোকান না হলেও সেখানকার চা-প্রেমীরা খুশি। এখানে প্রায় ৬০ রকমের চায়ের মধ্যে ১০ টাকার দুধ চা থেকে শুরু করে ২৫ টাকার বাবুমশাই চা, ৫১ টাকার আনারকলি, আকবরি, রজনীকান্ত চা, ১০১ টাকার সুলতান সুলেমান চা মিলবে। পাশাপাশি পাবেন নানা মৌসুমি ফলের চা।
চা-প্রেমীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে মতিঝিলের হীরাঝিল হোটেলের দুধ চা, ধানমন্ডি লেকের মালাই ও মটকা চা, রাব্বানী, মতিঝিল মোহামেডানের ক্লাবের গলির লেবু-কালিজিরার চা এবং শাপলা চত্বরের পাশের টঙের চা, গুলশানের শাহবুদ্দিন পার্কের গ্রাম চা, ধানমন্ডি লেকের মটকা ও মালাই চায়ের নাম।