আগামীর জন্য তৈরি হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

ঢাকার বাড্ডার সাতারকুলে অবস্থিত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস
ছবি: জাহিদ হোসাইন খান

‘আমি সৈয়দ ফারাহ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।’ ভিনদেশি এক তরুণের মুখে বাংলা শুনে একটু অবাকই হতে হলো। ঢাকার বাড্ডার সাতারকুলে অবস্থিত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের কাছেই তাঁর সঙ্গে দেখা। তিনিই পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন ভেতরে। যেতে যেতে বললেন, ‘আমি এখানে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়ছি। আফ্রিকার দেশগুলোয় এখন প্রযুক্তিনির্ভর অনেক স্টার্টআপ চালু হচ্ছে। সেখানে কম্পিউটারবিজ্ঞানীদের চাহিদা অনেক। তাই আমরা ছয় বন্ধু সোমালিয়া থেকে এখানে পড়তে এসেছি। এখন সপ্তম সেমিস্টারে আছি। পড়ালেখা শেষে দেশে ফিরে আমি নিজের কোনো স্টার্টআপ শুরু করব।’

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) ৪টি অনুষদে ১২টি বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। প্রথম বর্ষের বিবিএর শিক্ষার্থী জুবাইদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলো। বলছিলেন, ‘আমার নিজের একটা স্টার্টআপ আছে। গত মাসে ৩৮ হাজার টাকা লাভও করেছি। চেষ্টা করছি বড় কোনো উদ্যোগবিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ফান্ডিং জোগাড় করতে। আমার বিজনেস প্ল্যান, পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিতই আলোচনা করি। তাঁরাও সাহায্য করেন।’

ব্যবহারিক শিক্ষা এখানে গুরুত্বপূর্ণ

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শাম্মী চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হলো ক্যাম্পাসের ল্যাবে। বলছিলেন, ‘আমাদের দেশে প্রকৌশলশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণের হার অনেক কম। তবে আমি বলব, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু মেয়েদের জন্য অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা আছে। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা অনেকে থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি হোস্টেল আছে। দেশের নানান প্রান্তের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ছে।

একটা ক্যাম্পাসেই অনেক জেলার মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।’ বিবিএর শিক্ষার্থী রাবেয়া তালুকদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে গবেষণা ও প্রকাশনা সেল আছে। যারা বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছে, তাদের কাজ ডিআইইউ জার্নালে স্থান পায়। শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা যৌথভাবেও আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।’

২৯ বছর আগে ১৯৯৫ সালে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের খ্যাতিমান অধ্যাপক এ বি এম মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারী বাংলাদেশে আধুনিক শিক্ষা ও ব্যবহারিক পাঠ্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। আমরা বাংলাদেশের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যক্রম সাজিয়েছি। গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশের বহু বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নত বাংলাদেশের জন্য মানবসম্পদ ও গবেষক তৈরি করছি আমরা। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরির জন্য বিভিন্ন ল্যাবরেটরি–সুবিধা রেখেছি। এর বাইরে যোগাযোগদক্ষতা ও ভাষাদক্ষতা গড়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন কর্মবাজার উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা রাখে। সে জন্য নানা ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমকে নিয়মিত উৎসাহ দিচ্ছি।
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, উপাচার্য, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ডিআইইউ ক্যাম্পাসে ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব ও সোশ্যাল বিজনেস একাডেমিক সেল চালু আছে। শিক্ষার্থীরা যেন ইংরেজি ভাষায় স্বাচ্ছন্দ্যে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে, বক্তৃতা দিতে পারে, সেটি এখানে গুরুত্ব পায়। রাবেয়া বলছিলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সময় নানা সম্মেলন আয়োজন করা হয়, এটাও একটা দারুণ ব্যাপার। শিক্ষা, জলবায়ুসহ বিভিন্ন বিষয়ে এসব সম্মেলনে দেশ-বিদেশের গবেষক ও শিক্ষকেরা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সহযোগী হিসেবেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত থাকে। এসব আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হচ্ছে।’ ডিবেটিং সোসাইটি, স্পোর্টস ক্লাব, কালচারাল ক্লাবসহ নানা সংগঠন সারা বছরই ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা যেন সমসাময়িক কর্মবাজার সম্পর্কে ধারণা পায়, সে জন্য শিক্ষাসফরের অংশ হিসেবে শিল্পকারখানা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানেও তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়।

ডিআইইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বিশেষ বৃত্তি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পান যাঁরা, তাঁদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ আছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই লিংকে: www.diu.ac। এ ছাড়া ফোন: +৮৮০৯৬৭৭৭৭৭৩৪৮।