ছাত্রজীবনের একতাটাই কাজে লাগাতে পারেন কোনো না কোনো ভালো কাজে
ছাত্রজীবনের একতাটাই কাজে লাগাতে পারেন কোনো না কোনো ভালো কাজে

ছাত্রজীবনে করতে পারেন এই ৫ স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ

আমরা অনেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই ছাত্রজীবনে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হতে চাই, দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখতে চাই। এ ধরনের কাজ নিজেকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মনেও আনে একটা অন্য রকম প্রশান্তি। জাগায় আত্মবিশ্বাস। ক্যাম্পাসগুলোয় স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের নানা সংগঠন আছে, এসব সংগঠনে যোগ দিতে পারেন। কয়েকজন বন্ধু মিলেও কিন্তু নিয়ে ফেলতে পারেন এমন ভালো কাজের উদ্যোগ। কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছেন মো. জান্নাতুল নাঈম

রক্তদান

শিক্ষাজীবনের অন্যতম বড় শক্তিই হলো একতা। একতা আছে বলেই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কারও রক্তের প্রয়োজন হলে সাধারণত রক্তদাতা পেতে সময় লাগে না। এই ‘একতার বল’ই কাজে লাগান। ক্যাম্পাসের কার কী রক্তের গ্রুপ, সব তথ্য সংগ্রহ করে ফেলতে পারেন কয়েকজন বন্ধু মিলে। গোছানো একটা তথ্যভান্ডার থাকলে জরুরি পরিস্থিতিতে রক্ত পাওয়া সহজ হয়। শুধু ক্যাম্পাসের ভেতরে নয়, বাইরের মানুষকেও চাইলে সেবা দিতে পারবেন।

দেশের অনেক ক্যাম্পাসেই এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে ‘সন্ধানী’। স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করে স্বাধীনতা পদক পেয়েছে এই ছাত্রসংগঠন। কথা হলো সন্ধানীর সদস্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘পেশাগত কারণেই একজন ডাক্তারকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের রোগী সামলাতে হয়। সন্ধানীর সদস্যরা ছাত্রজীবনেই এসব প্রশিক্ষণ পেয়ে যান। একটা সময় আমরা উপলব্ধি করি, সন্ধানীর অফিসটাই আমাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জায়গা। প্রত্যেক সন্ধানীয়ান এই জায়গা থেকে কী নিয়ে যায়, সেটা ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে টের পাওয়া হয়। এমনকি আমার মতো অন্তর্মুখী মানুষও সবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করে যেতে পারছে। ফলে বলাই যায়, মানবতার সেবা ছাড়াও সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জনেও সন্ধানী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ানো

এই উদ্যোগও আমাদের দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশ পরিচিত। তবে আপনার ক্যাম্পাসে যদি এমন কোনো কার্যক্রম না থাকে, চাইলে নিজেরা শুরু করতেই পারেন।

পুরোপুরি শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত শিশুরা তো আছেই, বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিশুর হারও অনেক। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক শিশু খুব ছোটবেলায়ই কাজে যুক্ত হয়ে যায়। এ রকম একজন শিশুকে পড়ানোর দায়িত্ব আপনি ও আপনারা নিতেই পারেন।

ঠিক এই কাজই করছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী আতিকুজ্জামান। বলছিলেন, ‘আমাদের স্কুলের নাম এইচএসটিইউ মজার ইশকুল। কার্টুন, অ্যানিমেশনের মাধ্যমে বা খোলা মাঠে বিভিন্ন মজার খেলার ছলে শিশুদের আমরা পড়াই। হাবিপ্রবির আশপাশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাই এই স্কুলের শিক্ষার্থী। মূলত শুক্র, শনি ও ছুটির দিনে আমরা অভিভাবকদের কাছে গিয়ে, তাঁদের বুঝিয়ে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করি।’

এ ধরনের কাজে যুক্ত হওয়ার আনন্দের কথাও বলছিলেন আতিক, ‘২০১৯ সাল থেকে এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত থেকে অনেক হাসিমুখের সাক্ষী হয়েছি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছি, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য যে মানবিক গুণ থাকা দরকার, এ রকম সংগঠন থেকে একজন শিক্ষার্থী তা অর্জন করতে পারে। তাই সব শিক্ষার্থীরই এ ধরনের কাজে যুক্ত থাকা উচিত বলে মনে করি।’

মানুষের পাশে দাঁড়ানো

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো নানা কার্যক্রম হাতে নিতে পারেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই চর্চাটাও আমাদের ক্যাম্পাসগুলোয় বেশ পরিচিত। অনেকে যেমন শীতকালে দল বেঁধে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। বন্যার্তদের সাহায্যেও এগিয়ে যান ছাত্রছাত্রীরা। সমমনা শিক্ষার্থীরা মিলে একটা দল গঠন করলে এ ধরনের কাজ করা সহজ হয়।

কী কী ধরনের কাজ করা যায়? জানতে চেয়েছিলাম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটি ও সার্ভিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর কাছে। বললেন, ‘সব বয়সীর জন্যই আমরা নানা রকম ক্যাম্পেইন করি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বই দিয়ে সাহায্য করা, রক্তদান কর্মসূচি, শীতকালে গরম কাপড় বিতরণ, ইফতারি বিতরণ, স্কুলে আর্ট প্রতিযোগিতা আয়োজন, নানা উদ্যোগ আছে আমাদের। বিভিন্ন সময়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে আনন্দ ছড়াতে আমরা কাজ করেছি। বিশেষ করে শীতের কাপড় তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও তাঁদের জন্য ইফতারের আয়োজনের শেষে যে হাসি ও কৃতজ্ঞতাবোধ দেখেছি, তা আমাদের ভবিষ্যতে কাজ চালিয়ে নিতে অনুপ্রাণিত করেছে।’

বৃক্ষরোপণ

ধরা যাক, ক্যাম্পাসে ৩০ জন মিলে একটা দল গঠন করলেন। ঠিক করলেন, প্রতি মাসে আপনারা প্রত্যেকে একটা করে গাছ লাগাবেন। মাসে ৩০টি হলে বছরে প্রায় ৩৬৫টি। অর্থাৎ ৪ বছর পর যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবেন, তখন মাথা উঁচু করে বলতে পারবেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে আমি প্রায় দেড় হাজার গাছ লাগিয়েছি!’

এই আনন্দ পেতে চাইলে একটা দল গঠন করে ফেলতেই পারেন। ক্যাম্পাসের ভেতরে গাছ লাগাতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া বাইরেও জায়গা নির্বাচন করে নিয়মিত আপনারা গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। বিচ্ছিন্নভাবে অনেকেই বৃক্ষরোপণের কাজ করেন। তবে শুধু গাছ নিয়ে কাজ করে, এমন সংগঠন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় খুব বেশি নেই।

পরিচ্ছন্নতা অভিযান

শিক্ষার্থীরা এক হয়ে নিজেদের ক্যাম্পাস বা ক্যাম্পাসের আশপাশের একটা বড় এলাকা পরিষ্কার করেছেন, নতুন করে সাজিয়েছেন, এমন উদাহরণ আমরা দেখেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল শিক্ষার্থী যেমন একটি পরিত্যক্ত সুইমিং পুল পরিষ্কার করে পুরো জায়গাজুড়ে দেয়ালচিত্র আঁকার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। এই একটি উদ্যোগ পুল-এলাকার চেহারাই বদলে দিয়েছে। যে জায়গাটা কিছুদিন আগেই ছিল ময়লার ভাগাড়, এখন সেখানে ছাত্রছাত্রীরা আড্ডা দেন। দর্শনার্থীরাও ক্যাম্পাসের এসব দেয়ালচিত্র দেখতে আসেন আগ্রহ নিয়ে।

এ ধরনের উদ্যোগও কয়েকজন মিলে নিতেই পারেন। পরিবেশদূষণ রোধে যেমন ভূমিকা রাখতে পারবেন, তেমনি দল বেঁধে বড় একটা কাজের অভিজ্ঞতাও হবে।