‘কৃতজ্ঞতা হলো সৌজন্যের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট রূপ,’ কথাটি বলেছেন ফরাসি দার্শনিক জাক মারিত্যাঁ। প্রাচীন রোমের রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক সিসেরোর বিবেচনায় কৃতজ্ঞতাবোধ কেবল একটি শ্রেষ্ঠ গুণই নয়, অন্য সব গুণেরও জনক। সত্যিই কৃতজ্ঞতাবোধের চেয়ে সুন্দরতম বোধ ও মনুষ্য বৈশিষ্ট্য আর হয় না। কৃতজ্ঞ মানুষ সবচেয়ে সুন্দর। কৃতজ্ঞতা অনেক শীতল সম্পর্ককে যেমন উষ্ণ করে, তেমনি সদ্য পরিচিত মানুষের সঙ্গে দ্রুততম সময়ে সুন্দর সম্পর্কও তৈরি করে।
গবেষণা বলছে, কৃতজ্ঞ মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি। অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। তাঁরা খুব শক্ত মনোবলের অধিকারী হয়ে থাকেন। এটি মানবচরিত্রের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য হ্রাস করে ইতিবাচক অনুভূতিগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়ায়। অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় তাঁরা অনেক বেশি সুখী জীবন যাপন করেন। কৃতজ্ঞ মানুষ আচরণগতভাবে অনেক স্থির, ধৈর্যশীল ও আন্তরিক হয়ে থাকেন। তাঁদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ প্রবল। তাঁরা অল্পে তুষ্ট থাকেন। ফলে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ নিয়ে তাঁরা খুব বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন না। স্বাভাবিকভাবেই আফসোস বা হতাশার মতো বিষয়গুলো তাঁদের খুব একটা ছুঁতে পারে না।
আজ ২১ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব কৃতজ্ঞতা দিবস। ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘের ধ্যানকক্ষে (ইউনাইটেড নেশনস মেডিটেশন রুম) আয়োজিত এক নৈশভোজে ভারতীয় আধ্যাত্মিক নেতা ও ধ্যানগুরু শ্রী চিন্ময় ‘কৃতজ্ঞতা দিবস’–এর ধারণা তুলে ধরেন। ১৯৬৬ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি প্রথমবারের মতো পালিত হয়। এর পর থেকে নিয়মিতই পালিত হচ্ছে।
সুন্দর এই দিবস পালন করতে পারেন। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী, পরিচিতজন—জীবনে চলার পথে নিয়মিত অবদান রেখে যাচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের প্রতি নিঃশর্ত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন। কৃতজ্ঞ থাকুন সব পেশার মানুষের প্রতি, যাঁদের কাছ থেকে নিত্যদিন বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা গ্রহণ করছেন। আর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন হোক মুখ ফুটে, নীরবে নয়। আমেরিকান লেখক উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ডের কথাটি মাথায় রাখবেন—কৃতজ্ঞতা বোধ করা এবং তা প্রকাশ না করা হচ্ছে কারও জন্য একটি উপহার মুড়িয়েও তাঁকে না দেওয়ার মতো।
ন্যাশনাল টুডে ডটকম অবলম্বনে