৫ মার্চ সকালে আচমকা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার শিরিন ভবন। এ ভবনের যে তলায় বিস্ফোরণের সূত্রপাত, পাশের ভবনের সেই তিনতলাতেই মা-বাবা, ভাই-ভাবি, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন মাহবুবুল আকরাম। নিজের ফেসবুকে সে ঘটনার যে বয়ান তিনি দিয়েছেন, প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো
আমার পরিবারের জন্য ভয়ংকরতম একটা দিন ছিল ৫ মার্চ। অথচ বিস্ফোরণ হয়েছে আমাদের পাশের ভবনে, বেলা পৌনে ১১টার দিকে। আর সেই বিস্ফোরণে ৫ ফুট দূরের প্যারালাল ফ্লোরে আমাদের বাসার ওয়াল ভেঙে চুরমার। আব্বু ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পেপার পড়ছিলেন। সেই অবস্থাতেই আচমকা আব্বু অজানা ধাক্কায় সামনের দিকে ছিটকে আরও প্রায় ৬ ফুট দূরে চলে যান। পেছন থেকে ভাঙা দেয়াল আর গ্রিলসহ পুরো জানালা এসে পড়ে আব্বুর শরীরের ওপর। বিকট শব্দ, তীব্র কম্পন, আগুন আর কালো ধোঁয়ায় পুরো ঘর আচ্ছন্ন। তার মধ্যে আমার ৭৪ বছর বয়সী আব্বুর বাঁচার আকুতি!
আমি আর ভাইয়া তখন অফিসে। খবর পেয়ে দৌড়ে ছুটে আসি। ফায়ার ব্রিগেড, বম্ব ডিসপোজাল টিম আর পুলিশ আমাদেরই ঢুকতে দিচ্ছিল না এলাকায়। এসে দেখি তখন মাত্র আব্বুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হয়েছে। পুরো কাপড়ে রক্তমাখা। দ্রুত আব্বুকে নিয়ে আসি পপুলার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। আল্লাহপাক আসলে নিজ হাতে রক্ষা করছেন ওনাকে, অশেষ রহমতে লাইফ থ্রেটেনিং কিছু হয়নি। ঠিক ওই মুহূর্তে বাসায় বাকিরা অন্য রুমে থাকায় সরাসরি তাদের কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়নি।
এখন আব্বু হাতে মারাত্মক জখম নিয়ে হাইকেয়ার ইউনিটে ভর্তি। হাতের একটা অংশ কেটে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। মাথায়, পিঠে আর হাঁটুতেও জখম হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, সিটি স্ক্যান আর এক্স-রে রিপোর্ট খারাপ আসেনি। কিন্তু উচ্চ ডায়াবেটিক আর প্রেশার থাকায় সেলাই দিতে দেরি করা লাগছে। আজ আব্বুকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
হ্যাঁ, আমরা যে কেউ কাল হয়তো মারা যেতে পারতাম, যদি ওই সময়ে ওই রুমে থাকতাম। এমনিতে প্রায়ই আমার ৯ মাসের শিশু ওখানে বসে খেলে। আমার স্ত্রী, আম্মু বা ভাবি টিভি দেখে, চা খায়। কোনো কারণে অফিসে দেরি করে গেলে হয়তো আমিই থাকতাম না আজকে এই লেখাটি লেখার জন্য।
দুর্ঘটনার পর অনেক কাছের মানুষ ফোন করেছেন, এসএমএস দিয়েছেন, আপডেট জানার জন্য। ব্যস্ততায় সবার বার্তার সাড়া দিতে পারিনি বলে দুঃখিত। শুধু দোয়া করবেন আমাদের জন্য। আর আমি দোয়া করি—এমন দিন যেন কারও জীবনে না আসে!
(লেখাটি ঈষৎ পরিমার্জিত)