এখনকার তারুণ্যকে অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলেন ‘সেলফি জেনারেশন’। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো তো বটেই, পারলে দিনের প্রতিটি মুহূর্তকেই সেলফিতে তুলে রাখতে চান তাঁরা। কিন্তু কেন? জার্মানবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে নিন এর উত্তর।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতিতে আমূল বদলে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। সবার হাতে হাতে এখন মুঠোফোন। সেলফি তোলাটা এখন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি মুঠোফোনে সাধারণ ছবি তোলার জন্য একটা ক্যামেরার পাশাপাশি শুধু সেলফি তোলার জন্য আলাদা ক্যামেরা থাকে।
সেলফি যে কতটা জরুরি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঢুকলেই বোঝা যায়। এসব মাধ্যমই তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার অন্যতম কারিগর। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ঢুকলেই দেখা মেলে শত শত ব্যবহারকারী একের পর এক সেলফি প্রকাশ করছেন। কেউ হয়তো কোথাও ঘুরতে গেছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে একটা সেলফি তুলেছেন। কেউ কোনো কাজ করছেন, সে অবস্থায় তুলেছেন সেলফি। এমনিভাবে সবাই সেলফি তোলেন পরিবারের সঙ্গে, প্রিয়জনের সঙ্গে, প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে, কিংবা ছোটবেলার স্মৃতিবিজড়িত কোনো জায়গায়।
সাধারণভাবে এই সেলফি–আসক্তিকে অনেকেই ভালো চোখে দেখেন না। বিশেষ করে প্রবীণ ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিরা। তাঁদের কাছে এটা একধরনের অসুস্থতা। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় দাম্ভিকতা। কারণ, সবাই সাধারণত সেলফি তোলেন ভালো কোনো জায়গায় গেলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কারও সঙ্গে দেখা করলে। সোজা কথায়, যেসব ঘটনার কথা মানুষ বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ান, সেগুলোর সেলফিরই জায়গা হয় তাঁদের সামাজিক যোগাযোগাধ্যমের দেয়ালে। তাই এটা তাঁদের কাছে একটা ‘লোকদেখানো’ কাজ।
কিন্তু সম্প্রতি জার্মানবিজ্ঞানীদের এক গবেষণা বলছে অন্য কথা। তাঁরা বলছেন, মানুষ সাধারণত সেলফি তোলেন তাঁদের মনের গভীরের অনুভূতিকে ধরে রাখতে। যেমন সুন্দর কোনো জায়গায় গেলে মানুষের মধ্যে ভীষণ ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়, সেই অনুভূতি ধরে রাখতেই তখন তোলেন সেলফি। কারণ, সেখানে সুন্দর জায়গাটার সঙ্গে তাঁর নিজের ছবিও থাকে। পরে সেই ছবিটা দেখলে তাঁর মনে পড়ে সামগ্রিক সেই অনুভূতিটা।
সেলফির আরেকটি সুবিধা হলো ছবিটা আপনি নিজেই তোলেন। এর ফলে সেটা তোলা হয় একদম আপনার পছন্দমাফিক। ছবিটার সঙ্গে আপনার সর্বোচ্চ মানসিক সংযোগ হয়। আর সে কারণেই মানুষ তাঁর জীবনের মনে রাখার মতো সব ঘটনায়, সব স্থানে, সব মানুষের সঙ্গে সেলফি তোলেন তাঁর মনের আবেগ ধরে রাখতে। তারপর সেই আবেগ সবার কাছে প্রকাশ করতে সেলফি দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট