কোন খাবার কত দিন ডিপ ফ্রিজে রাখা যায়?

ডিপ ফ্রিজে একটু বেশি দিনের জন্য খাবার সংরক্ষণ করা যায়, তবে সেটা ঠিক কত দিন?
ছবি: প্রথম আলো

একটু বেশি সময়ের জন্য খাবার সংরক্ষণ করতে ডিপ ফ্রিজে রাখা হয়। এই ‘বেশি সময়’টা ঠিক কত দিন? দিনের পর দিন, নাকি মাসের পর মাস? তা ছাড়া কীভাবে সংরক্ষণ করলে তা কাঙ্ক্ষিত সময় পর্যন্ত ভালো থাকবে, সেটিও জেনে রাখা দরকার।

ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা কম থাকায় অধিকাংশ জীবাণু সেখানে বাঁচতে পারে না। তাই খাবার ভালো থাকে। তবে ডিপ ফ্রিজে ওঠানোর আগে অসাবধান থাকলে কিংবা বারবার খাবার ওঠানো-নামানো হলেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিছু সাধারণ নিয়ম তাই জানা থাকতে হবে। যেমন কাঁচা মাছ সংরক্ষণ করতে চাইলে দ্রুততম সময়ে ডিপ ফ্রিজে উঠিয়ে নিতে হবে; কিন্তু মাংসের জন্য নিয়মটা আলাদা। যতক্ষণ পর্যন্ত না উষ্ণ ভাবটা দূর হয়, ততক্ষণ মাংস ফ্রিজে তোলা যাবে না। রান্না করা খাবারও নিয়মমাফিক সংরক্ষণ করলে বেশ কিছুদিন ভালো থাকে। দুধ, টক দই, মাখন, পনির কিংবা হিমায়িত (ফ্রোজেন) খাবারের মোড়কে বা পাত্রে মেয়াদ উল্লেখ করা থাকে। মেয়াদের মধ্যেই এগুলো খেয়ে নেওয়া উচিত। মৌসুমি সবজি, টমেটো পিউরি, বাটা মসলা প্রভৃতি নির্দিষ্ট নিয়মে সংরক্ষণ করলে স্বাদ ও পুষ্টিমান বজায় থাকবে। ডিপ ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের এসব দিক প্রসঙ্গে নানা পরামর্শ দিলেন রান্নাবিদ সিতারা ফেরদৌস।

কাঁচা মাছ

ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে হবে খুব সাবধানে, শুকনা অবস্থায়
  • ছোট মাছ কেটে, ধুয়ে পরিষ্কার করে ডিপ ফ্রিজে রাখলে মাসখানেকের ভেতর খেয়ে নেওয়াই ভালো।

  • মাঝারি আকারের মাছ কেটে, ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে প্রয়োজনমতো প্যাকেট করে ডিপ ফ্রিজে রাখুন। মাস দুয়েক ভালো থাকবে।

  • বড় মাছ ও সামুদ্রিক মাছও একইভাবে কেটে, ধুয়ে, পানি ঝরিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে। চার থেকে পাঁচ মাস এগুলোর স্বাদ ভালো থাকে। তবে এর চেয়ে বেশি সময় না রাখাই ভালো।

  • ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে হবে খুব সাবধানে, শুকনা অবস্থায়। মাছগুলো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে, বায়ুরোধী প্যাকেটে করে ডিপ ফ্রিজে ওঠাতে হবে গোটা অবস্থায়। তাহলে সাত থেকে আট মাস স্বাদ ও ঘ্রাণ ভালো থাকবে।

কাঁচা মাংস

ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করার আগে কিছু নিয়ম মেনে প্যাকেট করুন। মডেল: রাবেয়া রাবু
  • কোনো কাঁচা মাংস ডিপ ফ্রিজে ওঠানোর আগে ধোয়া যাবে না। তবে রক্ত সরিয়ে ফেলে সংরক্ষণ করা উচিত।

  • মুরগির মাংস মাস তিনেক ভালো থাকে। তবে মাংসের স্বাদ ও ঘ্রাণ অটুট রাখতে চাইলে আগে খেয়ে নেওয়াই শ্রেয়। তাই একবারে বেশি কিনলেও এক মাসের মুরগি কেনা ভালো।

  • কবুতর বা হাঁসের মাংস রাখলে অবশ্যই মাস দুয়েকের মধ্যে খেয়ে নিতে হবে।

  • গরু বা খাসির মাংস সাত থেকে আট মাসের মধ্যে খেয়ে নেওয়াই ভালো।

  • মগজ খেয়ে নিতে হয় ৭-১০ দিনের মধ্যে।

  • কলিজা, ফুসফুস, বৃক্ক (কিডনি), ভুঁড়ি প্রভৃতি অংশ দুই-তিন মাসের মধ্যে খেয়ে নেওয়া ভালো। এসব খাবারও ধুয়ে, বেছে, পানি ঝরিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখতে হয়।

অন্যান্য খাবারের ক্ষেত্রে

  • রান্না করা মাছ-মাংসের স্বাদ ভালো থাকবে ১০ থেকে ১৫ দিন। ভাত, পোলাও, খিচুড়িও দিন পনেরোর জন্য রাখা যায়। তবে রান্না করা সবজি দুই-তিন দিনের বেশি ডিপ ফ্রিজে রাখবেন না।

  • টমেটো পিউরি রাখা যায় ছয় থেকে সাত মাস।

  • ঘরে তৈরি সমুচা, সিঙ্গারা, রোল, কাবাব, যদি হিমায়িত (ফ্রোজেন) করে রাখা হয়, তাহলে মাসখানেক ভালো থাকে। ভাপানো সবজি (ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি) ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্য একই নিয়মে ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন আলুর টুকরা, ৭-১০ দিনের জন্য। বেরেস্তা বছরখানেক পর্যন্ত রাখা যায়।

খেয়াল রাখুন

  • কাঁচা মাছ-মাংস বা ভাপানো সবজি ডিপ ফ্রিজে রাখার সময় এমনভাবে প্যাকেট করা উচিত, যাতে তা একবার বের করা হলে ডিপ ফ্রিজে আর ওঠানো না লাগে। অর্থাৎ, একবারে যতটা রান্না করা হবে, ততটাই রাখতে হবে একটি প্যাকেটে। টমেটো পিউরিও এভাবে প্রয়োজন বুঝে ছোট পাত্রে রাখা হলে ভালো।

  • রান্না করা মাছ-মাংসও এমনভাবে রাখুন, যাতে একবার বের করে গরম করা হলে তা ওই বেলায়ই খাওয়া হয়ে যায়।

  • দুধের প্যাকেটের মুখ একবার খোলা হলে তা আর উঠিয়ে না রাখাই ভালো। নিতান্ত যদি রাখতেই হয়, তাহলে পরবর্তীবার ব্যবহারের আগে অবশ্যই খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। তবে টক দই, মাখন বা পনির প্যাকেট বা পাত্র থেকে খানিকটা নিয়ে আবার ডিপ ফ্রিজে উঠিয়ে রাখা হলে সমস্যা নেই।

  • বাটা মসলাও ছোট ছোট মুখবন্ধ পাত্রে রাখা ভালো, যাতে একবারে যা প্রয়োজন, কেবল ততটুকুই থাকে একটি পাত্রে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মসলা এভাবে মাস দুয়েক ভালো থাকলেও ঘ্রাণটা অন্য রকম হয়ে যেতে পারে।