সাহায্য করার মানুষ আছে, ত্রাণ আছে—কিন্তু বন্যাদুর্গত মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার মতো যান নেই, চলমান বন্যায় এমনটা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা তো চাইলেই হুট করে তৈরি করা যাবে না, চটজলদি বাইরে থেকে কিনে আনাও যাবে না। তাই প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে নৌকা (যা দেখতে অনেকটা ভেলার মতো) তৈরি করেছেন পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট-ফ্রেন্ডলি টেকনোলজি, এডুকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের (সিটিইই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব সুমন। সঙ্গে ছিল শিক্ষার্থী, শ্রমিক, উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী ও স্থপতিদের একটি দল। শিক্ষার্থীদের দলে ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের সাজ্জাদ হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোলাম হাফিজ ফাহিম, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী শোয়াইবা সুলতানা ও এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির রাঈমান দরিয়া।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নৌকাগুলো ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে পাঠানো হবে বলে জানালেন সুমন। বিনা মূল্যেই এসব নৌকা দেবেন তিনি। সুমন বলেন, ‘স্রোত ও পানি কমলে স্পিডবোট এবং অন্যান্য বড় নৌকার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। ছোট নৌকাতে করেই তখন ত্রাণ, খাবার, ওষুধ দিতে হবে। তাই নৌকা বানানোর কাজে হাত দেওয়া।’
জলবায়ু ও পরিবেশবিষয়ক গবেষক মাহবুব সুমন যোগ করেন, ‘অনেকগুলো মডেল নকশা ও বিশ্লেষণের পর ড্রাম মডেলে এসেছি। এটা বানানো সহজ। অন্যরাও দেখে বানিয়ে নিতে পারবেন। কয়েকটি ড্রাম, বাঁশ, বাঁশের মাচা ও দড়ি দিয়েই বানানো যায়।’
প্রতিটি নৌকা বানাতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। খরচও তুলনামূলক কম। ১০ হাজার টাকা হলেই বানানো যায়। নৌকাগুলো যথেষ্ট টেকসই বলেও দাবি করলেন নির্মাতারা।
স্বেচ্ছাসেবীদের ৫০টি নৌকা বানানোর লক্ষ্য রয়েছে। ইতিমধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। এসব নৌকা ফেনী, ফটিকছড়ি, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হবে। সেনাবাহিনী, রেড ক্রিসেন্টের মতো সংস্থাকে দেওয়া হবে। মাহবুব সুমন বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। সাপোর্টিং বোট হিসেবে কোনো কিছু বহন করার জন্য তাঁদের যদি প্রয়োজন হয়; তারা ব্যবহার করবে। নোয়াখালী, ফেনী থেকে রেড ক্রিসেন্ট আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের কাছেও যাবে। এর বাইরে বিভিন্ন ভলান্টিয়ার টিমের কাছে পাঠাব। আজকে (২৩ আগস্ট) ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির একটা দল উদ্ধারকাজে যাচ্ছে। তারাও বোট নিয়ে যাচ্ছে।’
পরে বিদ্যুৎ ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যা সমাধানেও কাজ করার পরিকল্পনা আছে বলে জানালেন মাহবুব সুমন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন, তাঁরা শিগগিরই বাড়ি ফিরতে পারবেন না। ফিরলেও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ভাবছি।’