আজ ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস। তবে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবারের স্বাধীনতা দিবসের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এসেছে, ‘মেয়েরা রাত জাগো’ শিরোনামে আন্দোলনের ডাক। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন শেষ হতে না হতে উত্তাল সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সেই আগুন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। কলকাতা পুলিশ এ মামলার তদন্ত করলেও তাতে সন্তুষ্ট হননি মেডিকেলের আন্দোলনকারী চিকিৎসক, পড়ুয়া ও সাধারণ জনতা। ফলে তাঁরা তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত।
এক নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলনের সূত্রপাত। ৮ আগস্ট রাতে পশ্চিমবঙ্গের ১৩৮ বছরের পুরোনো আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করছিলেন ওই চিকিৎসক। দিবাগত রাত দুইটার দিকে বাইরে থেকে খাবার এনে দুজন বন্ধুর সঙ্গে নৈশভোজ সাড়েন তিনি। এরপর জরুরি ভবনের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান।
পরদিন শুক্রবার সকাল আটটার দিকে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা গিয়ে তাঁর মরদেহ দেখতে পান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই চিকিৎসকের বাড়িতে ফোন করে জানায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবির মুখে ময়নাতদন্তে গণধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারীরা। আর তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ভারতের বড় পর্দার তারকারাও।
এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে, সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের দাবিতে গতকাল বুধবার মধ্যরাত থেকে পশ্চিমবঙ্গে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষোভকারীরা।
বলিউড তারকা আলিয়া ভাট স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে পোস্ট করেন, ‘আরেকটি নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যা। আবারও প্রমাণিত হলো, নারীরা কোথাও নিরাপদ নন। এ জঘন্য ঘটনা আমাদের মনে করায়, নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের এক দশক পরেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি।’ এরপর তিনি কিছু সমীক্ষা জুড়ে দেন। সেখানে লেখা, ভারতের ৩০ শতাংশ চিকিৎসক ও ৮০ শতাংশ নার্স নারী। ২০২২ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা আগের বছররে তুলনায় বেড়েছে ৪ শতাংশ। ২০২২ সালে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর এ অভিনেত্রী নারীর নিরাপত্তার ওপর জোরদার করেন।
এই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, গবেষক ও নারী নেত্রী রিমঝিম সিনহা প্রথমে ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় মেয়েদের রাতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
টালিউড ও বলিউড তারকা স্বস্তিকা মুখার্জিও তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলের মাধ্যমে সাধারণ নারীদের রাত দখলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ডাকে সাড়া দেন। তিনি লেখেন, ‘প্রতিবাদের ভাষ্য তৈরি হচ্ছে। পিতৃতন্ত্রের শৃঙ্খল দুমড়েমুচড়ে ভেঙে বেরিয়ে আসবে সব নিপীড়িত লিঙ্গপরিচয়ের মানুষ! এগিয়ে আসুন, অংশ নিন। জোরদার করে তুলি এই লড়াইকে আমরা!’ রিমঝিমের ফেসবুক পোস্টের ভিডিওটিও ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন স্বস্তিকা।
পরের পোস্টে তিনি ১৪ আগস্ট রাত ১১টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে জড়ো হওয়ার ডাক দেন। লেখেন, ‘এই শহর আমাদেরও (নারীদেরও)। এই দেশ আমাদেরও। এই পৃথিবী আমাদেরও। সবাই আসুন। যে যেখানে পারবেন আসুন। নিজের এলাকায় জড়ো হোন। নিজের পাড়ায় জড়ো হোন। নিজের গ্রামে জড়ো হোন। নিজের পঞ্চায়েত এলাকায় জড়ো হোন। ওদের জানান, এই রাস্তা আমাদেরও।’
এরপর স্বস্তিকা লেখেন, ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও। শঙ্খধ্বনিতে শহর ভরিয়ে দাও।’
প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেনও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে।
আরেক টালিউড তারকা, মিমি চক্রবর্তী ভারতের স্বাধীনতা দিবসে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কি এখনো স্বাধীন?’ গতকাল দিবাগত রাতে অংশ নেন ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ আন্দোলনে। কিছু ভিডিও আর ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘ন্যায়বিচারে দেরি করা মানে ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করা। আজ আমার “আনন্দের শহর” কাঁদছে। আমরা মানুষ হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি। শহরের প্রতিটি কোনা এসে মিলিত হচ্ছে ন্যায়বিচারের দাবিতে।’
গত দুই রাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় উঠছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ রব। আরেক টালিউড তারকা নুসরাত জাহান লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার ৭৮তম বছরে দাঁড়িয়েও আমাদের এ রকম নৃশংস, জঘন্য ঘটনার মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। আমরা কিসের স্বাধীন? যাঁরা আন্দোলন করছেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি দ্রুততম সময়ে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এভাবে ভারতের নারী তারকারা অনলাইনে, ‘অফলাইনে’ যুক্ত হচ্ছেন প্রতিবাদে, বিক্ষোভে।