ঈদের ছুটি শেষে অনেকেই ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। কেউ কেউ শিগগিরই ফিরবেন। কারও কারও হয়তো ক্যাম্পাসের পথে লম্বা সময় যাত্রা করতে হবে। সময়টা যদি কাজে লাগাতে চান, কী করবেন?

শেখার জন্য পডকাস্ট এখন দারুণ জনপ্রিয় মাধ্যম। শিক্ষার্থীরা তো বটেই, অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারাও নাকি যাত্রাপথে কিংবা ব্যায়ামের সময় পডকাস্ট শুনে জানার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘পডকাস্টের সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে যেভাবে একাডেমিক জ্ঞান অর্জন করা যায়, তেমনি ভাষাদক্ষতাও বাড়ে। যাঁরা গবেষণা বা উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবছেন, তাঁরা ইউটিউবে এডসার্জ পডকাস্ট বা রিসার্চ ইন অ্যাকশনের মতো পডকাস্টগুলো শুনে দিকনির্দেশনা পেতে পারেন। যাঁরা সামনে পেশাজীবনে পা রাখবেন, তাঁরা ক্যারিয়ার গাইডলাইন, উদ্যোক্তা দক্ষতা ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে সহায়ক পডকাস্ট শুনে প্রস্তুতি নিতে পারেন। অনুপ্রেরণা পেতে বা নতুন কিছু জানার আগ্রহ থাকলে টেড টকের বক্তৃতাগুলোও খুব কাজের। বিজ্ঞান থেকে শুরু করে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, এআই, ক্লাউড কম্পিউটিং, নানাবিষয়ক পডকাস্ট আছে।’ পডকাস্টের সুবিধা হলো, পডকাস্ট শুনতে শুনতে অন্য কাজও করা যায়। এ কারণেই শেখার মাধ্যম হিসেবে পডকাস্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।
লম্বা যাত্রা কাজে লাগানোর জন্য ইংরেজি শেখাও একটা ভালো উপায়। বাসে আপনার পাশে যদি কোনো বন্ধু থাকে, তাহলে শেখাটা আরও আনন্দদায়ক হতে পারে। দুজন মিলেই নতুন কয়েকটা শব্দ শিখুন। তারপর নিজেদের মধ্যে সেই শব্দগুলো ব্যবহার করে ইংরেজিতে কথা বলতে চেষ্টা করুন। শব্দগুলো মনে থাকবে, আবার জড়তাও কেটে যাবে।
কেবল পাঠ্যবইয়ে মুখ গুঁজে থাকলে পেশাজীবনে ভালো করা কঠিন। জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে বাইরের আরও নানা বই পড়ুন। আপনি হয়তো ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ছেন। ব্যবসাসংক্রান্ত বেশ ভালো ভালো বই আছে, দুই-একটা পড়লে আপনার পড়ার বিষয়ের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক এইচ এম আতিফ ওয়াফিক বলেন, ‘আত্ম–উন্নয়নমূলক বই খুঁজলে দ্য সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল বা রবার্ট কিয়োসাকির রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড পড়তে পারেন। ইতিহাস, প্রযুক্তি, ব্যবসা ও রাজনীতিবিষয়ক বই পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন।’ বই শুধু তথ্য জোগায় না; মানসিক প্রশান্ত আনে, সৃজনশীলতা বাড়ায়। আত্মপ্রত্যয়ী হতে সাহায্য করে।
বর্তমানে অনেক বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্ল্যাটফর্ম অনলাইনে কোর্স অফার করছে। এডেক্স, কোর্সেরার মতো ওয়েবসাইট বা অ্যাপে আপনি টানা কয়েক ঘণ্টা সময় দিলেই ছোটখাটো কোর্স শেষ করে ফেলতে পারবেন। লিংকডইনেও নানা কোর্স পাওয়া যায়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বুশরা হুমায়রা বলেন, ‘ইউডেমিতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সাশ্রয়ী মূল্যের কোর্স পাওয়া যায়। বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স বিনা মূল্যে বা স্বল্পমূল্যে করার সুযোগ রয়েছে কোর্সেরাতে। হার্ভার্ড, এমআইটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সও করার সুযোগ আছে এডেক্সে।’
অনেকে যাত্রা অবস্থায় বই পড়তে পারেন না। মাথা ঘোরায় কিংবা ব্যথা করে। বই পড়তে না পারলে অডিও বুকও সময় কাটানোর একটা দারুণ উপায়। ইউটিউব তো বটেই, বিভিন্ন অ্যাপেও (যেমন অডিবল) আপনি বিশ্বসেরা বিভিন্ন বইয়ের অডিও সংস্করণ পেয়ে যাবেন। পথ চলতে চলতে কানে হেডফোন গুঁজে এমন কিছু বই শুনে নিতে পারেন। বিভিন্ন বইয়ের সারাংশ মাত্র ১০-১৫ মিনিটে বুঝিয়ে বলে, এমন কিছু অ্যাপও আছে। যেমন ব্লিংকিস্ট, হেডওয়ে। এসব অ্যাপ হয়তো আপনাকে পুরো বইটা পড়তে বা লেখক সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী করবে।
ডুয়োলিঙ্গো, মেমরাইজের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে নতুন ভাষা শেখা যেতে পারে লম্বা যাত্রার সময়। নিজের জন্য একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। যেমন ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে আমি অন্তত ২০টি নতুন শব্দ শিখব।’ মনে মনে এই শব্দগুলোই বারবার চর্চা করতে থাকুন। দেখবেন, সময়টা দিব্যি কেটে যাবে।
কুইজআপ, লুমোসিটির মতো কিছু কিছু অ্যাপ কুইজ খেলা ও মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বেশ কাজের। বুদ্ধিদীপ্ত খেলাধুলার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে চাঙা রাখার এমন আরও নানা অ্যাপ আছে। গুগল প্লে স্টোর বা আইওএসে পেয়ে যাবেন।
গুগল কিপ, এভারনোট বা নোশনের মতো বিভিন্ন অ্যাপে নতুন শেখা বিষয় সংরক্ষণ করুন। নতুন পরিকল্পনা বা ভবিষ্যতের লক্ষ্য, এসব অ্যাপে লিখে রাখলে পরে তা কাজে লাগবে। এই সময়ে নেটওয়ার্কিং ও পেশাদার যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন। লিংকডইনসহ বিভিন্ন ফোরামে অনলাইনের মাধ্যমে পেশাদারদের সঙ্গে যুক্ত হন। বিভিন্ন বিষয়ে পড়ুন, আলোচনা করে নতুন সুযোগ সম্পর্কে জানুন। যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী হন, লম্বা যাত্রায় এ নিয়ে কিছু ব্লগ পড়ে ফেলতে পারেন। ভিডিও দেখতে পারেন। পথ চলতে চলতেই হয়তো আপনার আগামীর পথের পরিকল্পনাও সাজানো হয়ে যাবে।