খাবার ভালো রাখার জন্যই তো ফ্রিজ। তবে সব খাবার সব অবস্থায় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা উচিত না। খাবারের গুণগত মান, স্বাদ এবং ঘ্রাণ ঠিক রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। ভুলভাবে খাবার সংরক্ষণের ফলে জীবাণুও জন্মাতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে।
ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খানের কাছে জেনে নিন কোন কোন খাবার কোন অবস্থায় ফ্রিজে রাখা যাবে না—
শাক
শাক টাটকা খাওয়াই ভালো। কাঁচা বা সেদ্ধ কোনো অবস্থায়ই শাক ফ্রিজে রাখা উচিত না। রান্না করা শাক ফ্রিজে রাখা হলেও এক দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে।
কাটা ফল, কাটা সবজি
ফলমূল ও সবজি কেটে ফেলার পর ফ্রিজে রাখবেন না। পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। রাখতে হলে গোটা অবস্থাতেই রাখুন। গোটা অবস্থাতেও ফলমূল এক-দুই দিনের বেশি না রাখাই ভালো।
পানীয়
ঘরে তৈরি পানীয় ফ্রিজে রেখে দেওয়া উচিত নয়। শরবত, ফলের রস, জিরা পানি বা অন্য যেকোন পানীয় কেবল অল্প কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করতে পারেন। তবে ঠান্ডা পানীয় খেতে চাইলে তুলনামূলক ঠান্ডা পানি এবং বরফ ব্যবহার করা ভালো। পানীয়ের অন্যান্য উপকরণও পানীয় তৈরির আগেই ঠান্ডা করে নিতে পারেন। তাহলে পানীয়কে ঠান্ডা করতেও খুব একটা বেশি সময় ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন হবে না। ফ্রিজে রাখা পানীয়ের পুষ্টিমান কমে যেতে পারে, ঘ্রাণ বদলে যেতে পারে, এমনকি পানীয় নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
ক্যান বা প্যাকেটের পানীয় একবার খোলার পর ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়।
রান্না করা খাবার
গরম থাকা অবস্থায় খাবার ফ্রিজ বা ডিপফ্রিজে তুলবেন না।
রান্না করা যেকোন খাবারের বক্স একবার ফ্রিজ বা ডিপফ্রিজ থেকে নামিয়ে খাওয়ার পর সেই বক্স পুনরায় ফ্রিজে বা ডিপফ্রিজে রাখা উচিত নয়। তাই শুরুতেই ছোট ছোট বক্সে করে একবেলার প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবারটুকুই রাখুন।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা খাবার ফ্রিজে বা ডিপফ্রিজে রাখবেন না।
প্লাস্টিকের বক্সে খাবার ফ্রিজে না রাখাই ভালো। কাচ বা চিনামাটির পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।
রান্না করা শাকসবজি চুলায় গরম করলেও পুনরায় ফ্রিজে রাখবেন না। রান্না করা মাছ-মাংস ফ্রিজে রাখলেও সেটা এক দিনের মধ্যেই খেয়ে নেওয়া ভালো, সপ্তাহ খানেক পর্যন্ত রাখতে হলে ডিপফ্রিজে রাখুন।
দই
দই ভাঙার পর ফ্রিজে রাখলেও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খেয়ে ফেলতে হবে। একবার ভাঙা হলে সেই দই বারবার ফ্রিজে রেখে বের করা উচিত নয়। একবার ভাঙার পর সর্বোচ্চ দুবার ব্যবহার করা যাবে পাত্রের দই। বারবার ভাঙলে দইয়ের পানি বাড়ে, যার মধ্যে ক্ষতিকর জীবাণু জন্মাতে পারে। দইয়ের মূল পাত্রটির বদলে অন্য কোনো পাত্রেও দই রাখা উচিত নয়।
দুধ
ইউএইচটি পদ্ধতিতে পরিশোধিত দুধের টেট্রাপ্যাক খোলার পর ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবে একবার প্যাক খুলে ফ্রিজে রাখা হলে পুনরায় ব্যবহারের পূর্বে ফুটিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া সাধারণভাবে পাস্তুরিত দুধ প্যাকেট খোলার পরপরই ব্যবহার করে ফেলুন। প্যাকেট খোলার পর এই দুধ ফ্রিজে না তোলাই ভালো।
গোটা মসলা, কাটা মসলা
পেঁয়াজ, রসুন, আদা গোটা অবস্থাতে বাইরেই রাখুন। এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে ভালোভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। কাটা অবস্থাতেও এগুলো ফ্রিজে না রাখাই ভালো। বরং কাটার পরই ব্যবহার করে নেওয়া উচিত। আদা কেটে রেখে দিলে সুঘ্রাণ থাকে না। মরিচ কেটে রেখে দিলে পুষ্টিমান কমে যায়।
নিতান্তই প্রয়োজন হলে কাটা পেঁয়াজ বা রসুন ফ্রিজে রাখতে পারেন মোটা টিস্যু পেপার বা কিচেন টাওয়েল দিয়ে মুড়িয়ে, একটি আলাদা বক্সে মুখ বন্ধ করে। সেটিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখুন, এগুলো কাটা অবস্থায় ফ্রিজে যেনতেনভাবে রাখা হলে ফ্রিজে গন্ধ ছড়াতে পারে।
চা-কফি
চা–পাতা এবং কফি ফ্রিজে রাখবেন না। এগুলো ফ্রিজের আর্দ্রতায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আরও যা
আধপাকা কলা কিংবা আধপাকা অ্যাভোকাডো ফ্রিজে রাখলে পাকতে চায় না। তাই এগুলো পাকার জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বাইরে রাখা উচিত।
আলু, মিষ্টি আলু কিংবা মধু ফ্রিজে রাখার কোনো প্রয়োজনই নেই।