যে ৫টি ইনডোর প্ল্যান্ট শুধু পানিতেও ভালো হয়

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবেন অনেকেই। বাড়িতে পরিবার নিয়ে ঈদ কাটানোর যে আনন্দ, তার তুলনা চলে না। তবে এই আনন্দের মধ্যেও অনেকের মন খচখচ করবে ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরের গাছের জন্য। কারণ, লম্বা ছুটিতে গাছে পানি দেওয়ার যে কেউ নেই! তবে কেমন হয় যদি গাছটিই বসানো থাকে কোনো পানির পাত্রে? গাছ মাটিতেই হয়, তবে কিছু প্রজাতি আছে, যেসব শুধু পানিতে রাখতে পারেন বছরজুড়ে। পানিতে হয়, এমন পাঁচটি ইনডোর প্ল্যান্ট ও সেসবের যত্নআত্তি জেনে নিন আজ—

১. পোথোস বা মানি প্ল্যান্ট

পোথোস বা মানি প্ল্যান্ট
ছবি: আনস্প্ল্যাশ

পোথোস অতিপরিচিত ইনডোর প্ল্যান্ট। একে আমরা মানি প্ল্যান্ট নামেই বেশি চিনি। বেশির ভাগ ইনডোর বাগানের শুরুই হয় এই লতানো পোথোস দিয়ে। মাটি বলুন, পানি বলুন—যেকোনো জায়গায় স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে বলে এর কদর অনেক। লতানো এই গাছের প্রতি পর্বে পর্বে সবুজ পাতার সৌন্দর্য। পানিতে রাখা পোথোসে যেমন থাকে ছোট আকৃতির পানপাতার মতো পাতা, মাটিতে লাগানো হলে ওই একই পোথোসের পাতা হতে পারে বেশ বড়।

২. লাকি ব্যাম্বু

লাকি ব্যাম্বু

প্রতি পর্বে একটি করে পাতা নিয়ে সোজা বেড়ে ওঠে লাকি ব্যাম্বু। পাতা গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ, হলদেটে সবুজ ও সবুজের মাঝে সাদা কিংবা হলুদ দাগের উপস্থিতিও দেখা যায়। এর সৌন্দর্য ধরা পড়ে মূলেও। স্বচ্ছ কাচের পাত্রে এর কমলা রঙের শিকড়গুচ্ছ এককথায় নয়নাভিরাম। নার্সারি কিংবা বৃক্ষমেলায় বিশেষ কৌশলে প্যাঁচানো লাকি ব্যাম্বুও বিক্রি হয়। চাইলে আপনিও লাকি ব্যাম্বুকে এমন আকৃতি দিতে পারেন। ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন।

৩. অ্যারোহেড প্ল্যান্ট বা সিঙ্গোনিয়াম

অ্যারোহেড প্ল্যান্ট বা সিঙ্গোনিয়াম

অ্যারোহেড প্ল্যান্ট বা সিঙ্গোনিয়ামকে নিশ্চিন্তে এনে ঠাঁই দিতে পারেন ঘরে। শুধু পানিতেই রাখতে পারবেন, তবে পাতার কাণ্ডটি একটু লম্বাটে হওয়ায় একটু বড় পানির পাত্র ব্যবহার করা ভালো। লম্বাটে কাচের গ্লাস, ছোট অ্যাকুয়ারিয়ামের পাত্র বা স্রেফ প্রয়োজনে ফুরিয়ে যাওয়া কফির বয়াম, মধু কিংবা আচারের বয়ামও পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে পারেন। উজ্জ্বল সাদাটে সবুজ রঙের পাতার গঠন অনেকটা কচুপাতার মতোই। এর আছে ঘরের অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষমতা।

৪. স্পাইডার প্ল্যান্ট

স্পাইডার প্ল্যান্ট

অল্প যত্নেই বাঁচে, এমন গাছের তালিকায় থাকা এই স্পাইডার প্ল্যান্টকেও দিব্যি পানিতে বসিয়ে রাখতে পারেন। তবে সরাসরি সূর্যালোকে রাখবেন না। এই গাছের চিরল সবুজ পাতার কিনারা সাদা রঙের। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, যেন সবুজ চুলে পাক ধরছে! ঝোপাল এই গাছের গোড়া থেকে লতার মতো চিকন ও বাঁকানো কাণ্ড বেরোয়। এই কাণ্ডের মাথা থেকে ছোট একগুচ্ছ চুলের মতো নতুন চারা বের হয়ে ঝুলতে থাকে চারপাশে। ঝুলতে ঝুলতে একসময় মাটির স্পর্শ পেয়ে শিকড় ছেড়ে নতুন গাছে পরিণত হয়। চাইলে আপনি এখান থেকে কেটে নিয়ে অন্যত্র রোপণ করে নতুন গাছের দেখা পেতে পারেন। তবে এই গাছ পানিতে রাখার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যেন শুধু গোড়া পানিতে ডুবে থাকে, পাতা যেন পানির স্পর্শ না পায়। পাতা পানিতে ডুবে গেলে পচে যাবে। এ ক্ষেত্রে বেটেখাটো কাচের পাত্র বেছে নিন। প্রয়োজনে পাত্রের নিচে নুড়িপাথর দিয়ে অনেকটা অংশ পূর্ণ করে তারপর স্পাইডার প্ল্যান্ট স্থাপন করুন। আর সপ্তাহে অন্তত এক দিন রোদে রাখার ব্যবস্থা করুন।

৫. স্নেক প্ল্যান্ট

স্নেক প্ল্যান্ট

সাপের মতো এঁকেবেঁকে বেড়ে ওঠে বলে একে ডাকা হয় স্নেক প্ল্যান্ট। কোনোটা সবুজ, গাঢ় সবুজ, কোনটা সাদাটে সবুজ; কোনটার পাতায় দেখা যায় শাড়ির পাড়ের মতো হলুদ রঙের ডোরা। পুরু ও রসাল পাতার দিকে তাকালে মনে হবে, যেন মোজাইক করা। পুরো গাছ বা স্রেফ পাতা কেটে এনে বসিয়ে দিন পানিতে, ঠিকই শিকড় বের করে টিকে যাবে।

পানির গাছের যত্নে কিছু পরামর্শ

ইনডোর প্ল্যান্টের পানি নিয়মিত বিরতিতে পাল্টে দিন
  • স্বচ্ছ কাচের গ্লাস, পানির পাত্র, অ্যাকুয়ারিয়াম, টেস্টটিউবেও বসাতে পারেন এসব গাছ। স্বচ্ছ কাচে ছড়ানো শিকড়ের সৌন্দর্য চোখে পড়বে।

  • যে গাছটি পানিতে রাখবেন, তার নিচের ২-৩টি পর্বের পাতা পরিষ্কার করে পানিতে বসান। নুড়িপাথর, পোড়ামাটির ক্লে বল বা স্রেফ ইটের খোয়াও ছোট ছোট টুকরা করে গাছের চারপাশে ঘিরে দিতে পারেন। এতে গাছটি কোনো একপাশে ঢলে না পড়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে।

  • ইনডোর প্ল্যান্ট বলে ঘরের যেকোনো জায়গায় রাখা গেলেও চেষ্টা করুন এমন জায়গায় রাখতে, যেখানে উজ্জ্বল থেকে মাঝারি পরোক্ষ সূর্যের আলো পায়।

  • সপ্তাহে অন্তত এক দিন সরাসরি সূর্যের আলোতে দিন।

  • পানির নিচে যেন পাতা ডুবে না যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে পানির সংস্পর্শে থাকা পাতাগুলো ছেঁটে দিতে পারেন।

  • নিয়মিত বিরতিতে পানি পাল্টে দিন। মশার ঘরবসতি ঠেকাতে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন পানি পাল্টে দেওয়া জরুরি।

  • পানিতে রাখা যে গাছটার অবস্থান জানালার কাছে এবং তুলনামূলকভাবে বেশি সূর্যালোক পায়, সেই গাছের পানিতে দ্রুত শেওলা জমতে পারে। পানিতে সবুজ শেওলার উপস্থিতি দেখামাত্রই দ্রুত পানি পরিবর্তন করে দিন।