জেন–জিদের সামলাচ্ছেন এই মিলেনিয়াল, যে ৪টি জিনিস শিখলেন

৩২ বছর বয়সী হানাহ টুকার যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন গ্রাহক সেবা বিভাগে। ছয় বছর হলো সেখানে কর্মরত তরুণদের ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন তিনি। সম্প্রতি নিজে একজন মিলেনিয়াল হিসেবে জেন–জিদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। জেন–জিদের কাছ থেকে কী শিখেছেন, এ বিষয়ে লিখেছেন মার্কিন আর্থিক ও ব্যবসায়িক সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারে। হানাহ টুকারের লেখাটির সংক্ষিপ্ত অনুবাদ পড়ুন।

হানাহ টুকার

জেন–জিদের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। ওরা নির্ভীক আর সৃজনশীল। ছয় বছর হলো ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছি। এই মুহূর্তে যে সাতজনের দলের সঙ্গে কাজ করছি, ওরা সবাই জেন–জি। (এর আগে আমি মিলেনিয়ালদের ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেছি।) ওরা যাতে পেশাগতভাবে নিজেদের সেরা সংস্করণ হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করাই মূলত আমার কাজ। ওদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা আমরা উভয় পক্ষ মিলে আলাপ করে ঠিক করি। মিলেনিয়াল (যাঁদের বয়স ২৮ থেকে ৪৩ বছর) আর জেন–জি (যাঁদের বয়স ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে)—এই দুই প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। অনেকে বলেন, জেন–জিদের সঙ্গে কাজ করা কঠিন। আমার তো বেশ লাগে। ফোকাসটা ইতিবাচকতার ওপর রাখলেই আর কোনো ঝামেলা নেই।

আমি যদি কোনো জে–জিকে এমন কোনো কাজ দিই, যে বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, সে ঠিকই ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে করে ফেলবে। কেবল যে ওরা আমার কাছ থেকে শিখছে, বিষয়টা এমন নয়। আমিও প্রতিনিয়ত ওদের কাছ থেকে শিখছি। ওদের সেরাটা বের করতে গিয়ে আমিও নিজের সেরা সংস্করণ হয়ে উঠছি। অল্প কথায় আমি জানাব এমন চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেসব আমি ওদের কাছ থেকে শিখেছি আর এর ফলে আমার জীবন বদলে গেছে।

জেন–জিরা নির্ভীক আর সৃজনশীল

১. অনেকভাবেই যোগাযোগ হতে পারে

আপনি কীভাবে পেশাগত যোগাযোগ করেন? ই–মেইলে? ফোনে? জুম মিটিংয়ে? হোয়াটসঅ্যাপে? ওরা এসবের ধার ধারে না। ওরা দিনের একটা বড় সময় কাটায় টিকটক আর ইনস্টাগ্রামে। সেখান থেকে ওরা বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া পায়। আর সেসব সরাসরি সেখানেই আলাপ করে। এতে দুটি সুবিধা। যোগাযোগটা তাৎক্ষণিক হয়। আর যা ভাবছে, সরাসরি সেটাই প্রকাশ করতে পারে। সামাজিকীকরণ, মি–টাইম আর পেশাগত জীবনের ভারসাম্য রেখে সুন্দর এই সমাধান ওরা নিজেরাই বের করেছে। শুরুতে আমার কিঞ্চিৎ অস্বস্তি হলেও এখন দিব্যি ওদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।

২. যেকোনো কিছু জানতে চাইতে পারা একটা ক্ষমতা

ওরা যেকোনো কিছু জানতে চাওয়ার ব্যাপারে দ্বিধাহীন। প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই ভাবি, এই প্রশ্ন কি ওনাকে করা যায়? ওদের মতে, সবাইকে সব প্রশ্ন করা যায়। আমি এখন বুঝি, এটা একটা দারুণ দক্ষতা। একবার একজনকে ওর প্রস্তাবের বিভিন্ন জায়গা চিহ্নিত করে ফেরত দিয়েছিলাম। ও দাগ দেওয়া প্রতিটা বাক্য নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। ও কী চিন্তা করে লিখেছে, তা–ও ব্যাখ্যা করেছে। সেখানে ভুল বা ঝুঁকি কোথায় জানতে চেয়েছে। আমি কী চিন্তা করে দাগিয়েছি, তা–ও জিজ্ঞেস করেছে। ওর জায়গায় কোনো মিলেনিয়াল হলে হয়তো সেসব বদলে আবার জমা দিত। মোদ্দাকথা, ওরা যোগাযোগ বিষয়টাকে একটা ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে।

অন্যান্য যেকোনো প্রজন্মের তুলনায় পেশাজীবনে জেন–জিদের আবেগপ্রবণ চাহিদা বেশি

৩. দলের সদস্যদের আবেগপ্রবণ চাহিদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

পেশাগত জীবনে এই বিষয় আমরা প্রায়ই অগ্রাহ্য করি। তবে জেন–জিদের কাছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য যেকোনো প্রজন্মের তুলনায় ওদের আবেগপ্রবণ চাহিদা বেশি। আর ব্যবস্থাপক হিসেবে এই দিকটি দেখা আমার সবচেয়ে জরুরি কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেন-জিদের ব্যক্তিজীবনের একান্ত অনুভূতি কাজের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। ওরা পেশাজীবনের নানা সিদ্ধান্ত ব্যক্তিজীবনের আবেগ–অনুভূতি দ্বারা তাড়িত হয়ে নেয়। এমন সব আবেগপ্রবণ মুহূর্তের কথা ওরা বললে আমি বলি, বিরতি নাও। নিজের সঙ্গে আগে বোঝাপড়াটা সেরে ফেলো। এখন আমি বুঝি, মানুষকে আবেগপ্রবণভাবে সমর্থন দেওয়া ব্যবসার জন্য কতটা জরুরি।

৪. পেশাজীবন–ব্যক্তিজীবনের টেকসই ভারসাম্য

‘ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স’ কথাটি আপনি প্রায়ই শুনে থাকবেন। তবে জেন–জিদের মতো করে কেউ বিষয়টি আগে অনুধাবন করেছে কি না সন্দেহ! জেন–জিরা অফিসের কাজের ফাঁকে কী নিয়ে কথা বলে, এটা জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। পারতপক্ষে ওরা পেশাগত জীবন নিয়ে কথা বলে না। ব্যক্তি, পারিবারিক আর সামাজিক নানান কিছু নিয়ে আড্ডা দেয়। ছুটির দিনে কী করে, অফিস শেষে কোথায় যায়, সঙ্গীর সঙ্গে কী হলো, এসব তো আছেই। অনেকে সহকর্মীদের মধ্যেই দিব্যি বন্ধু পাতিয়ে ফেলে। ফলে ওদের আলাদা করে পেশাজীবন, ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন নিয়ে ভাবতে হয় না। এই টেকসই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই দরকারী।


সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার