ইতিবাচক চিন্তার সুফলের কথা আমরা নিশ্চয়ই শুনেছি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ইতিবাচক চিন্তা করেন, তাঁরা অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারেন সহজেই, তাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হয় বেশি, কমে যায় হৃদ্রোগের ঝুঁকি। ইতিবাচক চিন্তা সর্বরোগের ওষুধ নয়। তবুও নেতিবাচক চিন্তার চেয়ে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিছু কাজ আছে, যেসব করলে আপনি শিখতে পারবেন কীভাবে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হয়—
ইতিবাচক চিন্তাভাবনার কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ইতিবাচক চিন্তা করেন, তাঁদের কয়েকটি রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা হ্রাস পায়। যেমন—
স্তন ক্যানসার
কলোরেক্টাল বা মলাশয়ের ক্যানসার
ইনফেকশন বা সংক্রমণ
হৃদ্রোগ
ফুসফুসের ক্যানসার
গর্ভাশয়ের ক্যানসার
শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ
স্ট্রোক
গবেষকেরা আরও দেখেছেন, আশাবাদী মানুষেরা নৈরাশ্যবাদীদের চেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশি সুস্থ থাকেন। ইতিবাচক চিন্তা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায়, বিষণ্নতার মাত্রা কমায়।
তাহলে কী করে ইতিবাচক চিন্তায় অভ্যস্ত হয়ে উঠব? কিছু কৌশল আছে, যেসব জানলে নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করা যায়। সেই সঙ্গে চিন্তাগুলোকে ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখবেন, আপনার মনে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনাআপনিই চলে আসছে।
মনে মনে নিজেকে যেসব কথা বলেন, সেটিই হলো ‘সেলফ টক’ বা নিজের সঙ্গে কথোপকথন। একে আপনার মনের ভেতরের একটি কণ্ঠ হিসেবে চিন্তা করুন। এটি কীভাবে কাজ করা উচিত, কীভাবে আপনার চারপাশের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত, এসব বিশ্লেষণ করে। আপনার ‘সেলফ টক’ যদি শুধু নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ঘিরেই চলতে থাকে, তাহলে আপনার আত্মমর্যাদাও কমে যেতে পারে।
তাহলে এসব নেতিবাচক ‘সেলফ টক প্যাটার্ন’ মোকাবিলা করবেন কীভাবে? এই প্যাটার্ন ভাঙার একটি উপায় হলো, এসব চিন্তা কখন আসে, সেটি খেয়াল করা। তারপর এসব চিন্তা বদলাতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করা। আত্মসমালোচনামূলক চিন্তা যখন করবেন, তখন একটু সময় নিয়ে ভাবুন ও মূল্যায়ন করুন।
ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা শুরু হতে পারে ‘সেলফ টকের’ দিকে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে। আপনি যদি খেয়াল করেন ‘নেগেটিভ সেলফ টকের’ প্রতি আপনার ঝোঁক বেশি, তাহলে আপনি আপনার চিন্তার ধরন পরিবর্তন করার উপায় খুঁজতে শুরু করতে পারেন এবং আপনার নিজের আচরণগুলোকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন।
আপনার জীবনে যদি একেবারেই কোনো হাসি-আনন্দ না থাকে, তাহলে আশাবাদী থাকা খুব কঠিন। এমনকি যখন আপনি কঠিন কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, তখনো জীবনে কিছু হাসি-ঠাট্টার প্রয়োজন আছে। হাসির নাটক বা সিনেমা দেখা, বই কিংবা অনলাইনে হাসির গল্প, কৌতুক ইত্যাদি পড়া ইতিবাচক চিন্তার জন্য সহায়ক।
ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখা অনেকটা মাংসপেশি মজবুত করার মতো। আপনি যত চেষ্টা করবেন, ততই আপনার ভালো ভালো চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, আপনার নিজের জীবনের কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার ভঙ্গির সঙ্গে আপনি আশাবাদী নাকি নৈরাশ্যবাদী, তার সম্পর্ক আছে। আশাবাদীরা জীবনের কোনো ঘটনার বর্ণনা দিতে গেলে ঘটনাটির ভালো দিকগুলো বেশি বেশি করে তুলে ধরেন। তাঁরা জীবনে ভালো কিছু অর্জন করলে তার কৃতিত্ব দেন নিজের চেষ্টা এবং দক্ষতাকে। অন্যদিকে যাঁরা নৈরাশ্যবাদী, তাঁদের জীবনে ভালো কিছু ঘটলে সেসবের কৃতিত্ব নিজেদের বাদে বাকি সবাইকে দেন।
কোনো খারাপ ঘটনা বর্ণনা দেওয়ার সময়ও এমনটা লক্ষ করা যায়। আশাবাদীরা জীবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মেনে নেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, যা ঘটেছে তার ওপর তাঁদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অন্যদিকে নৈরাশ্যবাদীরা দুর্ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেন এবং সবকিছুর জন্য নিজেদেরই দোষারোপ করতে থাকেন।
জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, সেটা নিয়ে একটু ভাবুন। আপনার অর্জনগুলোর জন্য যতটুকু কৃতিত্ব আপনার প্রাপ্য, ততটুকু নিজেকে দিন। যেসব দুর্ঘটনার ওপর আপনার কোনো হাত ছিল না, সেসবের জন্য নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ করুন। এভাবেই আপনি আরও আশাবাদী হয়ে উঠতে শুরু করবেন।
ডায়েরি লেখা শুরু করতে পারেন। ডায়েরিতে আপনি নিয়মিত লিখবেন কোন কোন ঘটনার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতার চিন্তাগুলো লিখে রাখলে আপনার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি আপনাকে সব মিলিয়ে সুস্থ থাকতেও সহায়তা করবে।
যখন আপনি অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তা আর অনুভূতিতে ডুবে যান, তখন কিছু সময় নিয়ে যেসব বিষয় আপনাকে আনন্দ দেয়, সেসব লিখে রাখুন। এই ছোট্ট কাজ আপনাকে আরও আশাবাদী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
ইতিবাচক চিন্তাভাবনার কোনো সুইচ নেই, যেটা চালু করলেই চিন্তা শুরু হবে, বন্ধ করলেই শেষ। আপনি জন্মগতভাবেও যদি একজন আশাবাদী মানুষ হন, চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ধরে রাখা কঠিন। তাই সব সময় চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এমনকি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনি সব সময় শুধু নেতিবাচক চিন্তাভাবনাতেই ডুবে আছেন, ‘নেগেটিভ সেলফ টক’ কমান এবং মনে ইতিবাচকতার বীজ বপন করুন। প্রয়োজনে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের মানুষদের সাহায্য নিন।
যখন দেখবেন আপনি ভালো কিছু ভাবতেই পারছেন না, বরং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনার জীবনকে শেষ করে দিচ্ছে, তখন কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
সূত্র: ভেরিওয়েলমাইন্ড ডটকম