পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমি মা–বাবার একমাত্র ছেলে। সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। আমার বড় তিন বোন রয়েছে। আমরা সবাই বিবাহিত। ২০০৪ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এককভাবে সব সম্পত্তি মা-ই ভোগ করছিলেন। ২০২১ সালে আমরা বাবার নামে থাকা সম্পত্তি ওয়ারিশদের নামে নামজারি করাই। তারপর বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য একটি জায়গার ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ ডেভেলপার কোম্পানিকে প্রদান করি। আমার ৩ নম্বর বোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করলেও পরে অন্যান্য দাপ্তরিক কাগজে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। সে তার স্বাক্ষরের গুরুত্ব বুঝে ব্ল্যাকমেল করছে। সে দাবি করছে, ভবনের ভালো ভালো অংশ তাকে দিতে হবে, প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি দিতে হবে এবং কাজ শুরুর আগেই তাকে লিখে দিতে হবে। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। আমাদের এই অবস্থায় রেখেই সে পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে গেছে। তিন বছর ধরে তার কোনো খোঁজখবর আমরা পাচ্ছি না। ডেভেলপারও কাজ শুরু করছে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এমন অবস্থায় একজন অংশীদারের (১৭.৫ শতাংশ) অনুপস্থিতিতে আমাদের সম্পত্তিগুলো কীভাবে ডেভেলপ ও সঠিক প্রক্রিয়ায় বণ্টন করতে পারি?
মো. তৌহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। কেউ যদি দেশে অবস্থানরত কাউকে ‘ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’-এর মাধ্যমে যেকোনো কাজ তাঁর অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করেন বা দেশে বসেই কোনো ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ প্রদান করেন, তাহলে সেই দলিলে অর্পিত ক্ষমতাবলে সেই ব্যক্তি পাওয়ার অব অ্যাটর্নিদাতার পক্ষে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।
‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২’-এর ধারা-২ অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা এমন একটি দলিল, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে আরেকজন ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করেন। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়।
যেহেতু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একটি আইনগত দলিল, কাজেই এটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে এবং দেশে অবস্থানরত অবস্থায় প্রদান করার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি করতে হবে। বিদেশে থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে তাঁকে প্রথমে একজন ভালো আইনজীবীর মাধ্যমে দলিলটি সঠিকভাবে ড্রাফট করাতে হবে। এরপর সেই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে। ওই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনস্যুলারের সামনে দলিলে সই করতে হবে। কনস্যুলারের মাধ্যমে সত্যায়িত হওয়ার পর ক্ষমতাদাতা তা ক্ষমতাগ্রহীতা বা আমমোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দেবেন। ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। পরে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বিদেশে সম্পাদিত আমমোক্তারনামা দলিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে সরকারি কোনো স্বার্থ জড়িত আছে কি না, তা যাচাই করে দেখেন। একই সঙ্গে দাগ-সংক্রান্ত তথ্য প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন। আরেকটি চিঠি পাঠাতে হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (কনস্যুলার) বরাবর।
জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে সব তথ্য আসার পর সেখান থেকে সরকারকর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের স্ট্যাম্প লাগাতে হবে। এরপর সেখানে আমমোক্তারনামা দলিলের ওপর একটি নম্বর ও তারিখ পড়বে। এ রকম বিদেশি আমমোক্তারনামার সত্যতা যাচাই করতে হলে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে গিয়ে ওই নম্বর দিয়ে যাচাই করে নেওয়া যায়। এরপর এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করলে বসতবাড়ি ডেভেলপারকে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা থাকে না। আপনার বোন যদি আইনগত পদ্ধতি মেনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে যাকে দেওয়া হয়েছে, তিনি আপনার বোনের পক্ষে তাঁর অনুপস্থিতিতেও সব ধরনের কাজ করতে পারবেন। তবে সেটা অবশ্যই পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে উল্লেখ করা থাকতে হবে। আপনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলটি একজন আইনজীবীকে দেখিয়ে নিন। যদি তা ঠিক থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনার বোনের অনুপস্থিতিতে সম্পত্তিগুলো ডেভেলপ ও সঠিক বণ্টন করার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা থাকার কথা নয়।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA