স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মমাফিক শরীরচর্চা ও রোদে সময় কাটানোর সু-অভ্যাস ভবিষ্যতে সামান্য আঘাতে হাড় ভাঙার মতো সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে
৩০ পেরোনো নারীর নিজের খেয়াল রাখার ফুরসত কই? ঘরে-বাইরে ব্যস্ততা। সংসার-সন্তান সামলে, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবাশুশ্রূষা করে নিজের যত্ন করার মতো সময় বা শক্তি এই বয়সে থাকে না। অনেকেই তাই নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। সবার পাতে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে গিয়ে অনেকে আবার নিজের স্বাস্থ্যকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেন। ৩০ পেরোলেই কমতে থাকে হাড়ের শক্তি। বাড়ে ওজন।
এই বয়সের জীবনধারার প্রভাব পরবর্তী সময়ে গিয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মমাফিক শরীরচর্চা ও রোদে সময় কাটানোর সু-অভ্যাস ভবিষ্যতে সামান্য আঘাতে হাড় ভাঙার মতো সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে। এমনটাই বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
সপ্তাহে ২-৩ দিন ১৫-২০ মিনিট সানস্ক্রিনসামগ্রী ছাড়াই রোদে থাকা জরুরি। চাইলে কেবল মুখে সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন। হাতে-পায়ে রোদ মাখুন, যতটা সম্ভব।
ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে রোজ। দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, নরম কাঁটাসহ মাছ ও প্রচুর রঙিন শাকসবজি খান। ফলমূল, নানা ধরনের বাদাম ও বিভিন্ন বীজ খান। তেল-চর্বি আর শর্করাজাতীয় খাবার কমিয়ে দিন। অতিরিক্ত লবণ, অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন না। কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
হাড় ও পেশি মজবুত রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। হালকা ব্যায়াম করলে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট সময় শরীরচর্চায় ব্যয় করুন আর মাঝারি ধাঁচের ব্যায়াম করলে সপ্তাহে অন্তত ৭৫ মিনিট। জোরে দৌড়ানো, দ্রুত সাইকেল চালানো, দড়িলাফ প্রভৃতি মাঝারি ধাঁচের ব্যায়াম।
এ ছাড়া সপ্তাহে ১-২ দিন ৫-১০ মিনিট করে ‘রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম’ করুন। বিভিন্ন পেশি স্ট্রেচিং (টান টান), ওজন উত্তোলন, স্কোয়াটিং (বিশেষ ভঙ্গিতে বসা), যোগব্যায়াম প্রভৃতি রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম। নির্দিষ্ট ব্যায়ামে পেশি এবং অস্থিসন্ধির (জয়েন্ট) ব্যথাবেদনাও কমবে।
হারবাল বা কবিরাজি ওষুধে প্রায়ই স্টেরয়েড থাকে, যা দীর্ঘদিন সেবনে হাড়ক্ষয় হয়। ত্বকের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, একই ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
যা করতে ভালো লাগে, তা ছেড়ে দেবেন না। নিজের যত্ন নিন। ত্বক, চুল রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়তে পারে। হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন ত্বক, চুল সুস্থ রাখার নানা উপায়—
৪ টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ, মধু ১ চা-চামচ, ৪-৫টি জাফরান ও সামান্য পানি মিশিয়ে কাচের বয়ামে করে ফ্রিজে রেখে ফেসওয়াশের বিকল্প হিসেবে সপ্তাহজুড়ে ব্যবহার করুন।
ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।
সেরাম কিংবা রাতের ক্রিমের বিকল্প হিসেবে ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার নির্যাস, ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস ও ১ চা-চামচ গ্লিসারিনের মিশ্রণ কাচের বয়ামে করে ফ্রিজে রেখে দিন। ১ সপ্তাহ ব্যবহার করা যাবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ১ চা-চামচ নারকেল তেল বা কাঠবাদামের তেল যোগ করে নিন।
২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস ও ১ চা-চামচ গ্লিসারিনের মিশ্রণ বানিয়ে নিতে পারেন। রাতের ক্রিম হিসেবে ব্যবহারের জন্য ১ সপ্তাহ ফ্রিজে রাখা যায়।
আধা লিটার নারকেল তেলের বোতলে ১ টেবিল চামচ মেথি ও ১ চা-চামচ কালিজিরা মিশিয়ে নিন। সপ্তাহে ৩ দিন রাতে মাথায় এই তেল মালিশ করুন। সকালে শ্যাম্পু করুন।
তিসির বীজবাটা ১ টেবিল চামচ। ১ টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ আর সিকি চা-চামচ মধু মেশালেই হয়ে যাবে আর্দ্রকারী ফেসপ্যাক।
আতপ চালবাটা (১ টেবিল চামচ) আর দ্বিগুণ পরিমাণ গুঁড়া দুধের মিশ্রণও ফেসপ্যাক হিসেবে ভালো কাজ করবে।
টক দই বা দুধের সঙ্গে ১ চা-চামচ লাল আটা, আধা চা-চামচ মধু আর দুই ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন (ত্বক তৈলাক্ত হলে ১ টেবিল চামচ টক দই, শুষ্ক হলে ২ টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ নিন)।
২ টেবিল চামচ মেথিগুঁড়া, ২ টেবিল চামচ আমলাগুঁড়া, ১ কাপ টক দই, ১ চা-চামচ নারকেল তেল ও ১টি ডিম নিন। চুলের বৃদ্ধির জন্য কারিপাতাবাটা যোগ করুন ১ টেবিল চামচ আর খুশকি বা ছত্রাকের সংক্রমণ থাকলে নিমপাতাবাটা ১ টেবিল চামচ নিন। মেথিগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, অ্যালোভেরার নির্যাস ২ টেবিল চামচ, পাকা কলা ১টি, টক দই আধা কাপ ও ডিম ১টি। একসঙ্গে ব্লেন্ড করুন। প্যাকটি সপ্তাহে ১ দিন ব্যবহারে চুল ভালো থাকবে।