বাজার করার আগে কিছু বিষয় মাথার রাখলে খরচ কমে আসবে। মডেল: উল্কা হোসেন
বাজার করার আগে কিছু বিষয় মাথার রাখলে খরচ কমে আসবে। মডেল: উল্কা হোসেন

ছোট ছোট এই অভ্যাসে বাজার খরচ কমিয়ে আনতে পারেন

দিন দিন জিনিসপত্রের দাম যে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেটা নিত্যপণ্যের বাজারে গেলেই বোঝা যায়। এক আঁটি লালশাক ৫০ টাকা হতে পারে, এটা কে ভেবেছে কবে! ডিমের দাম তো যাচ্ছেতাইভাবে বেড়েই যাচ্ছে। বেড়েছে আসলে সব ধরনের পণ্যের দামই। তাই এই সময়ে নিত্যপণ্যের বাজারে গিয়ে একটু কৌশলী না হলে চলছে না। তাই বলে প্রতিদিন যে পুষ্টি দরকার, সেটাও কমিয়ে দিলে চলবে না। গ্রোসারি পণ্যের কেনাকাটায় খরচ কমিয়ে কীভাবে টেবিলে প্রতিদিনের পুষ্টি ঠিক রাখবেন, তা–ই জেনে নিন।

১. কেনার আগে পরিকল্পনা

আপনার কোন জিনিস কতটা লাগবে, সেটা পুরোপুরি আগেই আন্দাজ করা কঠিন। তবে আপনার মাসিক বা ১৫ দিনের পরিকল্পনা ঠিকঠাক করে নিতে পারলেই অনেক অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা এড়াতে পারবেন। অনেকেই বাজারে গেলে এমন কিছু জিনিস কিনে ফেলেন, যেটা তার কাছাকাছি সময়ে ব্যবহারের সম্ভাবনা নেই। আবার অনেকে ছাড় দেখে দরকার ছাড়া কেনাকাটা করে ফেলেন, হয়তো একই উপকরণ বাসায় আরও আছে। এমন কেনাকাটা করার আগে নিজের প্রয়োজন ভাবুন। যা দরকার নেই, সেটা এক্ষুনি কেনার কোনো মানে হয় না। বরং ওই টাকাটা নিজের দরকারে সংরক্ষণ করুন। গবেষণার তথ্য বলছে, পরিবারগুলো তাদের কেনা খাবারের ৩০ শতাংশ নষ্ট করে ফেলে দেয়।

যা দরকার নেই, সেটা এক্ষুনি কেনার কোনো মানে হয় না

আপনি যদি বাসায় সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের একটা সাপ্তাহিক পরিকল্পনা ঠিক রেখে সেভাবে বাজার করেন, তাহলে আপনার অনেক বাড়তি খরচ কমে যাবে। অনেক সময় কর্মব্যস্ততার কারণে শহুরে পরিবারগুলো রাতের খাবার রান্নার বদলে বাইরে থেকে অর্ডার করে নেয়। সাপ্তাহিক পরিকল্পনা থাকলে এই অভ্যাসও কমবে। এ ছাড়া কোন দিন কী রান্না করবেন, সেটা ঠিক করে রাখলেও বাড়তি বাজার এড়িয়ে চলা সহজ হবে।

২. সহজলভ্য উপকরণে রান্না

বাজার করার আগে আপনি হয়তো একধরনের পরিকল্পনা করলেন যে কী কী রান্না করবেন। এবার সেই অনুযায়ী রান্নার উপকরণ কিনতে গেলেন। ধরা যাক, আপনি কাউকে বাসায় দাওয়াত দিয়েছেন। এবার অতিথিদের জন্য বিশেষ পদ হিসেবে একটা কিউই বা বেরির স্মুদি ও মাংসের সালাদ বানাবেন। এবার বাজারে গিয়ে দেখলেন কিউই ফলের কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, ফ্রেশ বেরিও হাজারের ওপরে। স্মুদিতে মূল উপকরণ যে ফলটি সেটাই তৎক্ষণাৎ বদলে ফেলতে পারেন। হয়তো ফ্রেশ বেরির বদলে আপনি ক্যানে থাকা বেরি কিনলেন, সেটার দাম বেশ কমই। অথবা কিউই ফলের বদলে বাজারে পর্যাপ্ত থাকা ড্রাগন দিয়ে বানালেন আপনার স্মুদি। এ ক্ষেত্রে দুধ কিছুটা বেশি ঘন করে নিলে খেতেও দারুণ হবে। সালাদের ক্ষেত্রেও মাংস কেনার ক্ষেত্রে যদি গরুর পরিকল্পনা থাকে, সেটার বদলে মুরগির মাংস কিনুন। চিকেন সালাদে কিছুটা বাড়তি বাদাম দিলে স্বাদ বরং বেশি ভালো হবে। একইভাবে সালাদে চায়নিজ ক্যাবেজের বদলে দেশি বাঁধাকপিও কিন্তু ভালো লাগবে। তবে শুরুতেই আপনি যা কিনছেন, তার সবটাই খেতে পারবেন কি না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

সহজলভ্য উপকরণে রান্নার চেষ্টা করুন

৩. ছাড় বা সস্তায় কেনাকাটার চেষ্টা করুন

বাজারে যখন যে মাছটি বেশি পাওয়া যায়, সেটার দাম তখন কিছুটা কম থাকে। একই কথা শাকসবজির ক্ষেত্রেও সত্য। মৌসুমি শাকসবজি ও ফলের দাম মৌসুমেই কম থাকে। তাই বর্ষায় পালংশাক না কিনে পুঁইশাক কিনুন, পালংশাক বরং শীতে কম দামে পাবেন। অনেক সুপারশপে আজকাল একটা কর্নার থাকে যেখানে ছাড়ের পণ্য রাখা হয়। এই কর্নার থেকে নিজের দরকারি জিনিস কিনলে খরচ বাঁচাতে পারবেন। সুপারশপে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষেধ। তাই বাজার করতে যাওয়ার আগে কেনা চটের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন, এতে বাড়তি খরচ করে ব্যাগ কিনতে হবে না। অনলাইন কেনাকাটায়ও অনেক রকম কুপন, পয়েন্ট যোগ হয় ক্রেতার অ্যাকাউন্টে। সেসব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার না করলে বাতিল হয়ে যায়, তাই সেসব ব্যবহারের চেষ্টা করে খরচ কমাতে পারেন। পয়েন্ট ভেঙে কেনাকাটা করলেও নগদ অর্থে কম টান পড়বে। এ ছাড়া অনেক দোকানে কিছুটা কম খরচে কেনাকাটা করা যায়, সেসব জায়গা থেকে কেনাকাটা করতে পারেন।

আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে, ছাড়ে কী কী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটা আগে দেখা। তারপর সেসব পণ্যে আপনার কী কী রান্না হতে পারে সেই পরিকল্পনা ঠিক করে সেইমতো কিনে নিতে পারেন।

৪. পণ্যের দাম দেখে কিনুন

কেনাকাটার আগে পণ্যের দাম যাচাই করে নিতে পারেন

কিছু পণ্য কেনার আগে অবশ্যই দাম দেখে কিনবেন। ধরুন, বাজার থেকে আপনি এক প্যাকেট গুঁড়া মসলা বা এক বোতল তেল কিনবেন। এখানে ব্র্যান্ডভেদে একই পরিমাণ পণ্য ২ থেকে ১০ টাকা কমবেশি হতে পারে। আটা, ময়দা, ডাল, লবণ, চিনি ইত্যাদি পণ্যেও এই তারতম্য চোখে পড়বে। চাল কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই কয়েকটা ধরন দেখে যাচাই করে কিনবেন। পাশাপাশি দুই মুদি দোকানে একই চালের দুই রকম দাম দেখা যায়। তাই কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে দাম যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। আবার অনেক পণ্য পরিমাণে বেশি কিনলে দাম কিছুটা কম পড়ে, তবে লোভে পড়ে দরকারের চেয়ে বেশি কিনবেন না। যেমন লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ ছোট্ট বোতল কিনলে এক রকম দাম আবার এক লিটার বা পাঁচ লিটারের গ্যালন নিলে আরেক দাম। এসব পণ্য যেহেতু নিয়মিত লাগে একবারে বড়টাও কিনতে পারেন। ধরা যাক, আপনি রোজ সিরিয়াল খান বা ওটস। এসব খাবারের প্যাকেট ছোট কেনার চেয়ে বড়টা কেনায় অনেক টাকা সাশ্রয় হতে পারে।

৫. দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে

আমাদের প্রতিদিনকার খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন বড় মাছ, মাংস ইত্যাদি খেতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায়। তাই বলে এসব খাবার তো প্লেট থেকে সরিয়ে রাখাও যাবে না। তবে কিছুটা বুদ্ধি খাটিয়ে বিকল্প খাবার দিয়েও প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন।

উদ্ভিজ্জ কিছু প্রোটিন আছে যাতে কম খরচে চাহিদা মিটবে, স্বাদেও বদল আসবে। যেমন শিমের বিচি, টফু, সয়ার মতো খাবারগুলোতে প্রোটিন মেলে। এক বেলার খাবারে মাংস বাদ দিয়ে তাই টফু বা সয়া খেলে অবশ্যই কয়েক শ টাকা বাঁচিয়ে নেওয়া যাবে চারজনের পরিবার থেকে। মুরগির মাংসে বুকের অংশ বেশি লাভজনক। তাই আলাদাভাবে কিনলে এমন অংশ বেছে নিতে চেষ্টা করুন, যাতে পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়।

সূত্র: হেলথলাইন