ক্লাস কিংবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, চাকরির ইন্টারভিউ বা ব্যক্তিগত কোনো কাজ, কখনোই কোথাও নির্ধারিত সময়ে হাজির হতে পারেন না তাঁরা। আশপাশের মানুষেরা কখনো বিরক্ত হয়ে, কখনো–বা মজার ছলে তাঁদের নাম দেন ‘লেট লতিফ’। কারণ, তাঁরা সব সময় সবকিছুতেই দেরি করে আসেন। কিন্তু কেন? তাঁরা কি শুধুই অলস, নাকি রয়েছে অন্য কোনো কারণ?
‘হতে পারে মস্তিষ্কের অসুখ’
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, আপনার যদি এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার) থাকে, তাহলে সময়ের হিসাব বুঝতে আপনাকে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি পরিশ্রমী হতে হবে। বিষয়টির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মাইন্ড টু হার্টের পরিচালক ও মনোবিদ মোহাম্মদ মেহেদি হাসান বলেন, ‘এ ধরনের রোগীরা যেকোনো পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে অপ্রস্তুত থাকেন। সময় কীভাবে কোনো দিক দিয়ে যাচ্ছে, বুঝে উঠতে পারেন না।’
মস্তিষ্কের এই রোগের প্রধান কিছু লক্ষণ হচ্ছে—
কাজে অসাবধানতা, অব্যবস্থাপনা ও অমনোযোগিতা।
একটি কাজ শেষ হওয়ার আগেই নতুন আরেকটি কাজ শুরু করা।
যেকোনো একটি কাজকে অগ্রাধিকার দিতে না পারা।
ক্রমাগত জিনিস হারানো বা ভুল জায়গায় রাখা।
দিবাস্বপ্ন দেখা।
স্মৃতিভ্রম।
তবে এডিএইচডি একমাত্র কারণ নয়। সামাজিক উদ্বেগ ও বিষণ্নতাও হতে পারে সময় অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত অতিকেন্দ্রিকতা
যাঁরা দেরি করেন, অন্যের বিরক্তির কারণ হন এবং কোনোভাবেই বিষয়টি অনুধাবন করেন না, তাঁদের মনোভাবই একটু অন্য রকম। এমনই একজন জানান, তাঁর জন্য কেউ অপেক্ষা করলে তাঁর ভালো লাগে। মনে হয়, আগে না গিয়ে ভালোই হয়েছে। এ ধরনের মনোভাবকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অতিরিক্ত অতিকেন্দ্রিকতা। এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ বা পরোক্ষ-আক্রমণাত্মক হন। অন্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপেক্ষা করিয়ে তাঁরা নিয়ন্ত্রণ জাহির করেন এবং এর মাধ্যমে আত্মতৃপ্ত হন।
‘সময়কানা’
কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে ঠিক কত সময় লাগতে পারে, এর আন্দাজ করতে পারেন না তাঁরা। সময়ের হিসাব রাখতে না পারা সময়কানা এই ব্যক্তিরা সব সময় ইচ্ছা করেই যে এমনটি করেন, তা–ও নয়। সামাজিকভাবে নানা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়ে শুধরে যাওয়ার চেষ্টা করেও অনেক সময় ব্যর্থ হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই এক বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র বলছিলেন, ‘নিজের ওপর নিজেরই বিরক্ত লাগে। কিন্তু পরদিন আবার একই কাহিনি। চেষ্টা যে করিনি, এমন নয়। কিন্তু হয়ে ওঠে না।’
সমস্যার সমাধান দিয়ে মনোবিদ মেহেদি হাসান বলেন, ‘দেরি করা অনেকটা চক্রের মতো কাজ করে। অভ্যাসে পরিণত হয়। এটি থেকে বের হওয়ার প্রাথমিক উপায় হচ্ছে উপলব্ধি করা। দ্বিতীয়ত, বর্তমানকে প্রাধান্য দিতে হবে। অতীতের দুঃখ-হতাশাকে জয় করে প্রয়োজনীয় কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। তা ছাড়া নিজের খারাপ দিকগুলো সত্যিকার অর্থে বুঝে উঠতে পারলে সহজেই সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।’