প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন স্ত্রী

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

মিতি সানজানা
মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি একজন প্রবাসী। আমার তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। আমার স্ত্রী অন্য একটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায়। সেই ছেলের সঙ্গে কিছুদিন থাকার পর আবার সে ফিরে এসেছে; কিন্তু আমি তাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমস্যা আমার মেয়েটি নিয়ে। আমার স্ত্রী মেয়েকে কিছুতেই দিতে চাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমি আমার মেয়েকে পাওয়ার জন্য আইনি কী পদক্ষেপ নিতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ অনুসারে ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানকে নাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ওই সন্তানের অভিভাবক হলেন তিনি, যিনি ওই সন্তানের শরীর কিংবা সম্পত্তি অথবা উভয়ের তত্ত্বাবধান ও ভরণপোষণে আইনগতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই আইন অনুযায়ী নাবালকের স্বাভাবিক এবং আইনি অভিভাবক হলেন বাবা অর্থাৎ আপনি। তবে নাবালকের সার্বিক মঙ্গল ও কল্যাণের গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী মাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদারির অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মেয়েশিশুকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মা তাঁর জিম্মায় রাখবেন। সন্তানের জিম্মাদারির নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই যে সন্তান বাবার জিম্মায় যাবে, তা নয়। এ সময় অতিক্রম করার পরও সন্তানের সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করে সন্তানের হেফাজত আবার মায়ের ওপর ন্যস্ত হতে পারে।

নাবালক সন্তানের ভরণপোষণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য ব্যাপারে নৈতিক ও অর্থনৈতিক সব সুবিধা প্রদান করা একজন অভিভাবকের দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে আপনাকে এই ভরণপোষণ প্রদান করতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের কথা আইনে উল্লেখ করা নেই। আপনি অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে বাচ্চার ভরণপোষণের টাকা প্রদান করতে পারেন।

আইন অনুযায়ী আপনার মেয়ে মায়ের হেফাজতেই থাকবে। আপনি আপস-মীমাংসার মাধ্যমে আপনার সন্তানকে নিজের কাছে আনতে পারেন। তবে তিনি (মা) রাজি না হলে নাবালক সন্তানের জিম্মাদারির জন্য পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজের আদালতে আপিল করা যায়।

আদালতের মাধ্যমে শিশুর বিষয়ে কোনো আদেশ প্রদান করা হয়ে থাকলে যদি কেউ আদালতের এখতিয়ারের সীমা থেকে তাঁকে সরিয়ে নেন, তাহলে আদালতের আদেশে ওই ব্যক্তি অনূর্ধ্ব এক হাজার টাকার জরিমানা অথবা ছয় মাস পর্যন্ত দেওয়ানি কারাবাস ভোগ করতে বাধ্য থাকবেন। ওই দেওয়ানি কারাবাসের খরচসহ মামলার খরচ এই আইন মোতাবেক হাইকোর্ট ডিভিশনে প্রণীত কোনো বিধি সাপেক্ষে যে আদালতে মামলাটি চলছে, তার বিবেচনার ওপর নির্ভর করে আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

একটি শিশুর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মা এবং বাবা দুজনের ভালোবাসারই প্রয়োজন আছে। আশা করি, আপনারা দুজনেই সন্তানের সর্বোত্তম কল্যাণের কথা ভেবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে পারবেন।

চিঠি পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA