শীতকাল চলে এসেছে, সঙ্গে বাজারে এসে গেছে শীতের ‘অতিথি’ পালংশাকও। এই শাক কিন্তু সত্যিকার অর্থেই পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আমাদের দেশে পালংশাক সাধারণত তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়, তবে জুস হিসেবেও এর প্রচলন বাড়ছে। পালংশাকের জুস স্বাস্থ্যের জন্য নানা কারণেই উপকারী। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পাঁচটি উপকারিতার কথা জেনে নেওয়া যাক।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ
পালংশাকের জুসকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ‘কারখানা’ বলা যায়। এতে লুটেইন, বিটা ক্যারোটিন, কোমারিক অ্যাসিড, ভায়োলাজেনথিন এবং ফেরুলিক অ্যাসিডের মতো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। ৮ জনের ওপর করা ১৬ দিনের গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন ৮ আউন্স (২৪০ মিলি) পালংশাকের জুস পান করলে ডিএনএর অক্সিডেটিভ ক্ষতি প্রতিরোধ করা যায়। প্রাণীদের ওপর করা গবেষণাতেও পালংশাকের এই একই উপকারিতা পাওয়া গেছে।
চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি
পালংশাকের জুস লুটেইন ও জিয়াজেনথিন নামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় কার্যকর। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এই উপাদানগুলো বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। ছয়টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, লুটেইন এবং জিয়াজেনথিন চোখের ছানির ঝুঁকি কমাতে পারে। পালংশাকের জুস ভিটামিন ‘এ’র একটি ভালো উৎস, যা চোখের শুষ্কতা ও রাতকানা প্রতিরোধ করে।
ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পালংশাকে থাকা কিছু নির্দিষ্ট যৌগ ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি কমাতে কার্যকর। যদিও মানবদেহের ওপর এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে ইঁদুরকে পালংশাকের জুস খাওয়ানোর ফলে কোলন ক্যানসারের টিউমারের আকার ৫৬ শতাংশ কমে গেছে। পালংশাকে থাকা মনোগ্যালাকটোসাইল ডাইঅ্যাসিলগ্লিসারল (এমজিডিজি) যৌগ ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপির কার্যকারিতা বাড়ায়। তবে পালংশাকসহ সবুজ শাকসবজি খেলে ফুসফুস, প্রোস্টেট, স্তন এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
পালংশাকের জুসে প্রাকৃতিক নাইট্রেট থাকে, যা রক্তনালিকে প্রশস্ত করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন পালংশাকের স্যুপ খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে। ৩০ জনের ওপর করা আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নাইট্রেটসমৃদ্ধ পালংশাক খেলে সিস্টোলিক রক্তচাপ কমে এবং রক্তপ্রবাহ মসৃণ হয়। ১ কাপ (২৪০ মিলি) পালংশাকের জুসে পটাশিয়ামের দৈনিক চাহিদার ১৪ শতাংশ থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর
পালংশাকের জুস ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ভিটামিন ‘এ’ ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ‘সি’ ত্বকের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, প্রদাহ এবং ত্বকের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এটি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। আর এই কোলাজেন ত্বকের ক্ষত সারাতেও সহায়তা করে।
সূত্র: হেলথ লাইন