বিক্রি করতে গেলে সোনার দাম কমে যায় কেন

সামনে যাঁরা সোনার গয়না বিক্রি করবেন, অদলবদল করবেন বা কিনবেন বলে ভাবছেন, এই লেখা তাঁদের জন্য।

হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে এখন ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪১ টাকা

গতকালই জানা গেছে, সোনার দাম ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪১ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দাম বাড়লেও সোনার চাহিদা কমে না। তাই সোনা কিনতে গিয়ে টাকা যেন একটু হলেও কম গুনতে হয়, সে জন্য একটা উপায়ই বেছে নিচ্ছেন অনেকে, সেটি হলো, পুরোনো সোনার গয়না বদলে এবং তার সঙ্গে বাকি টাকা যোগ করে নতুন সোনার গয়না নেওয়া।

ছেলের হবু বউয়ের জন্য গয়না কিনতে একই উপায় অবলম্বন করেছেন আশফিফা বেগম (ছদ্মনাম)। কিন্তু নিজের সংগ্রহের সাড়ে তিন ভরির একটি হার দিয়ে পেয়েছেন বর্তমান সোনার দামের প্রায় অর্ধেক দাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন, ‘ন্যায্যমূল্য পাইনি।’ অন্যদিকে বিক্রেতার দাবি, সনাতন ও মিনা করা স্বর্ণের নির্ধারিত দামই দিয়েছেন তাঁরা। এমন দ্বিধায় যেন পড়তে না হয়, সে জন্য সোনার দর নির্ধারণ, গুণেমানে কমবেশির পার্থক্যের কারণ ছাড়াও বেশ কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন।

পুরোনো সোনার গয়না বিক্রি করতে গেলে কেনা দামের ২০ শতাংশ কম দেওয়া হবে

অভিন্ন মূল্য, তবে দোকানভেদে পাবেন ভিন্ন সুবিধা

আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্য ওঠানামা, তেলের দাম, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী সোনার দাম একেক সময় একেক রকম হয়। মাপবিশেষে যখন যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, দেশের যেকোনো জায়গায় সে দামেই সোনা বিক্রি হয়। দেশে এই দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। নতুন সোনার দাম ছাড়াও পুরোনো সোনা বিক্রির দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেটি আজকের পুরোনো হোক কিংবা কয়েক মাসের। নিয়ম হচ্ছে, পুরোনো সোনার গয়না বিক্রি করতে গেলে কেনা দামের ২০ শতাংশ কম দেওয়া হবে। বদলাতে গেলেও একই। তবে ক্রেতার সুবিধার্থে ব্যবসায়ীরা সোনা বিক্রিতেও দিচ্ছেন সাময়িক ওয়ারেন্টি, জানালেন বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সুলতানা জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী প্রদীপ রঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, ‘আজকে কিনে নিয়ে গিয়ে পছন্দ না হলে কোনো রকম মূল্য হ্রাস না করেই বদলে নেওয়ার সুযোগ রাখি। সেটি কখনো তিন দিনের মধ্যে, কখনো সাত দিন সময় দেওয়া হয়।’ তবে বেশির ভাগ দোকানে এটি শুধু বদলে নেওয়ার জন্যই প্রযোজ্য, বিক্রির ক্ষেত্রে নয়। কোনো কোনো দোকানে কেনার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে গেলেও সাধারণত কর, তৈরির মজুরি ইত্যাদি কেটে রাখা হয়।

সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি সোনার গয়নায় ক্যারেট হিসাব না থাকায় এর দাম নতুন সোনার তুলনায় কম

সনাতন স্বর্ণের দাম সবচেয়ে কম, কিন্তু কেন

দাদি-নানির থেকে পাওয়া কিংবা আশি বা নব্বইয়ের দশকের সোনার খুব একটা দাম পাচ্ছেন না, দাবি অনেকের। সত্যিই কি তা–ই? বিক্রির জন্য এ ধরনের সোনার গয়না আজকাল তৈরিই হয় না। শুধু ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা কিনতে পারেন, জানালেন শতরূপা জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী দীপন কর্মকার। তিনি বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি সোনার গয়নায় ক্যারেট হিসাব থাকে না। তাই এর দাম নতুন সোনার তুলনায় কম।’ প্রীতম জুয়েলার্সের স্বর্ণকার প্রকাশ বললেন, ‘সনাতন পদ্ধতির অলংকারে রুপা, তামাসহ নানা ধরনের খাদ অনেক বেশি মাত্রায় মেশানো থাকে। ফলে বিশুদ্ধতা হয় অনেক কম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি অলংকারে বিশুদ্ধ সোনা থাকে ১৪ আনা ২ রতি। ২১ ক্যারেটে ১৪ আনা ও ১৮ ক্যারেটে পাওয়া যায় ১২ আনা বিশুদ্ধ সোনা। অন্য দিকে সনাতন পদ্ধতির অলংকারে খুব বেশি হলে বিশুদ্ধ সোনার পরিমাণ থাকে ১০ আনা।’ এখন সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ৯৩৩ টাকা বেড়ে প্রতি ভরি দাঁড়াবে ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা। তারপরও যারা সনাতন সোনার দাম কম বলে আফসোস করছেন, তাঁদের উদ্দেশে দীপন বলেন, ‘পুরোনো দিনে ২০-২৫-৩০ হাজার টাকা ভরির গয়নার দাম আজকাল কেনা দামের প্রায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি, সেটাই-বা কম কী?’

যে দোকানের সোনা, সে দোকানেই ফেরত

এক দোকান থেকে কেনা সোনা অন্য দোকানে বিক্রি করতে চাইলে দামটা ঠিকঠাক না-ও পেতে পারেন, বলছিলেন রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সের অধীর সরকার। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একটা ব্যবসানীতি বলা যায়। এর সঙ্গে বাকিরাও এক মত। তাই পরামর্শ হচ্ছে, যে দোকানের গয়না, সম্ভব হলে সেখানেই ফেরত দেওয়া।’

মিনাকারি নকশার সোনার দাম যেভাবে ধরা হয়

মিনাকারি নকশার সোনার দাম ঠিক কম হয় বলা যায় না, জানালেন দীপন কর্মকার। বিষয়টি বুঝিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রেতার কাছে বিক্রির সময় মিনাকারির মজুরি রাখা হয়। আর ক্রেতার থেকে কেনার সময় মিনাকারি বাদ দিয়ে সোনার ক্যারেট ও ভরি হিসাবে নিয়ম অনুযায়ী ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে দাম দেওয়া হয়।’