গাড়ি, নৌকা বা স্পিডবোট—কোনো যানবাহনই যখন বন্যাদুর্গত এলাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছে না, সেখানে ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছাতে প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে তরুণদের কয়েকটি দল। কীভাবে নেওয়া হলো এসব উদ্যোগ?
‘নাবিক’ নামের একটি জল-রোবট প্রস্তুত করেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ‘নাবিক অটোমেশনস’ দল। ২৮ আগস্ট তাঁরা প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। দলের সদস্যরা হলেন আদিল হোসেন, ফারদিন খান, মাশরুজ্জামান, মো. সাকলাইন নেওয়াজ, ফারিয়ান শাহ ফাহী, ভুবন মজুমদার, মিফতাহুল জান্নাত ও আবু অহন রহমান।
দলের সদস্য আবু অহন রহমান বললেন, ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র আদিল হোসেনের তত্ত্বাবধানে বর্তমান শিক্ষার্থী ফারদিন খান ও মাশরুজ্জামান দলটি গঠন করেন। সমুদ্রকেন্দ্রিক রোবোটিকসশিল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে একটি বহুজাতিক (বাংলাদেশ ও কানাডা) স্টার্টআপ হিসেবে আমরা যাত্রা শুরু করি। পরে ব্র্যাকের শিক্ষার্থী ও এই সেক্টরের পেশাজীবীদের সহযোগিতায় আমরা কাজ করতে থাকি৷ ভূমি ও ডুবোজলের রোবট নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজ করার ফলে আমাদের এ ধরনের রোবট প্রস্তুত ছিল।’
বন্যায় কাজ করার মতো সুযোগ এর আগে হয়নি। তাই এবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করতে চাচ্ছিলেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি ও ল্যাব সুবিধা নিয়ে এগিয়ে এসেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রোবোটিকস ক্লাব।
ফেনী জেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের সিলোনিয়া বাজার এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করে নাবিক অটোমেশনস। দলনেতা ফারদিন খান বলেন, ‘আমাদের রোবটটি প্রায় ৬০ কেজি ওজন বহন করতে পারে। দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিন ঘণ্টা কাজ করতে সক্ষম। সরু পথ বা আঁটসাঁট জায়গা, যেখানে নৌকা যাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে আমরা কাজ করতে চেয়েছি। ভালো লাগার বিষয় হলো, সফলভাবেই বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করতে পেরেছি। কাজ শেষে ফেরত আসার সময় রোবটে তাপকেন্দ্রিক কিছুটা সমস্যা আমাদের চোখে পড়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি, যা পরে কাজে লাগবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাজের অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারব।’
রোবটের সাহায্যে কাজ করলে সময় ও ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন এই তরুণেরা। একই সঙ্গে দুর্গম এলাকায় আটকে পড়া মানুষের খোঁজ নেওয়া সহজ হয়, তথ্য পৌঁছানো যায়। তাই নিজেদের উদ্যোগটিকে আরও বেগবান করার স্বপ্ন দেখছে নাবিক অটোমেশনস।
দুর্গম এলাকায় রোবটের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য কাজ করছে টিম অ্যাটলাস নামের একটি দল। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোবোটিকস ও বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীরা দলের সদস্য। টিম অ্যাটলাসের দলনেতা ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সানি জুবায়ের বলেন, ‘বন্যা শুরুর পর ১৫ দিন ধরে আমরা একটি রোবটের নকশা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছি। প্রাথমিক ট্রায়ালের পর রোবটটি নিয়ে বন্যা এলাকায় যাত্রা শুরু করি। সরেজমিনে গিয়ে খেয়াল করেছি, বিদ্যুৎ না থাকায় ওই এলাকার অনেকেরই মুঠোফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম বাধা। তাই ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি আমরা মুঠোফোনের ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা করেছি। এটি আমাদের কার্যক্রমের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
টিম অ্যাটলাসের রোবটটি ২৮ আগস্ট কাজ শুরু করে। এটি বন্যাদুর্গত এলাকায় জরুরি খাবার, পানি, স্যালাইন, ওষুধ এবং মুঠোফোনের চার্জের সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। রোবটের মাধ্যমে বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা জানান জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি টিম অ্যাটলাসের আরেকটি শাখা ‘কোড ব্ল্যাকের’ দলনেতা। ‘আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম, সবকিছু প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়েছে। কুমিল্লায় কাজ করেছি। নির্দিষ্ট দুর্গম এলাকায় ত্রাণ ও মুঠোফোন চার্জিং সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে পেরেছি। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা রোবটটি আরও উন্নত করব, এর কার্যকারিতা বাড়াতে চেষ্টা করব।’
দলটির কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন নুসরাত জাহান, ইজহার হোসেন, মোস্তাকিম রহমান, জিয়া মোহাম্মাদ সায়েফ উল্যাহ, ত্রিশা পাল ও পাল বাড়ি।