২০২৩ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকেরই নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা গল্প আছে। পড়ুন ব্যতিক্রম একজনের কথা।
দোকানে দোকানে জর্দা বিক্রি করতেন বাবা। আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন মা। দুজনের যা আয়, তাতে সংসার টেনেটুনে চললেও লেখাপড়ার খরচ মিটত না। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাই টিউশনি শুরু করেন সাদিয়া। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অন্যকে পড়িয়ে নিজে পড়েছেন। কিন্তু নবম শ্রেণিতে উঠে পড়লেন বিপদে। পড়ালেখার খরচ এত বেশি যে কিছুতেই পেরে উঠছিলেন না। সে সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্কুলের শিক্ষকেরা।
সাদিয়ার লড়াকু জীবনের গল্প এখানেই শেষ নয়। বলছিলেন, ‘এমনও দিন গেছে, সারা দিন না খেয়ে থেকেছি। কখনো নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি। ঈদের সময় নতুন জামা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য মায়ের ছিল না। মূল বইয়ের পাশাপাশি সহায়ক যে বইয়ের প্রয়োজন হয়, সেগুলো বড় ভাই-আপুদের থেকে ধার নিয়ে পড়েছি।’
সেই সাদিয়া মনি এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। লালমনিরহাটের সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এই ফল অর্জন করেন তিনি।
সাফল্যের দিনে মায়ের আত্মত্যাগের কথাই বেশি করে মনে পড়ছে সাদিয়ার, ‘অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন মা। নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন। মাকে কখনো নতুন কাপড় পরতে দেখিনি। এগুলো আমাকে খুব কষ্ট দিত। লুকিয়ে কাঁদতাম আর প্রতিজ্ঞা করতাম, একদিন সফল হয়ে মায়ের সব কষ্ট দূর করব, তাঁর মুখে হাসি ফোটাব।’
সেই লক্ষ্যেই একটু একটু করে এগোচ্ছেন সাদিয়া মনি। ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে মানুষের সেবা করতে চান তিনি।