যিনি কখনো ড্রোন ওড়াননি, তিনিও চালাতে পারবেন এই ড্রোন, কীভাবে?

আগে যিনি কখনো ড্রোন ওড়াননি, তিনিও আমাদের ড্রোন চালাতে পারবেন। ভয়েস কমান্ড (কণ্ঠ নির্দেশনা) বাংলা ভাষায় থাকার কারণে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যও এটা উপযোগী। যাঁরা ঠিকমতো বাংলা লিখতে ও পড়তে পারেন না, তাঁরাও এ ড্রোন চালাতে পারবেন।

নিজেদের বানানো ড্রোন হাতে দলের সদস্যরা

রিমোট নয়, বাংলা আদেশ শুনেই আকাশে উড়বে ড্রোন। এ ধরনের একটি ড্রোন তৈরি করেছে আর-পাস টাস্কফোর্স নামের তরুণ একটি দল। ‘আচার্য’ নামের ড্রোনটির আওতা প্রায় চার কিলোমিটার। এটি পরিচালনা করতে লাগে একটি রেডিও টেলিমেটরি মডিউল। ল্যাপটপ বা মুঠোফোনের সঙ্গে মডিউলটি সংযুক্ত করে ট্রান্সমিটারের কাজ সম্পন্ন করা যায়।

আর-পাস টাস্কফোর্স দলটির প্রধান এস এম ইশতিয়াক ইবনে সালাম। তিনি লালমনিরহাটে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উড়োজাহাজ প্রকৌশল (অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের প্রভাষক। দলের অন্য সদস্যরা হলেন ঝলক ব্যানার্জি, হিমেল ইসহাক, তাসদিদ তাহসিন, সাইফুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মারুফ রায়হান, হলিজিত পাল, খালিদ সাইফুল্লাহ। সবাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।

এ রকম একটি প্রকল্প নিয়ে ভাবনা বেশ আগে থেকেই ছিল। তবে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে আর-পাস টাস্কফোর্স। দলটির দাবি বাংলাদেশে এ রকম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ড্রোন এটাই প্রথম।

আর-পাস টাস্কফোর্স দলটির প্রধান এস এম ইশতিয়াক ইবনে সালাম

মুঠোফোনে দলনেতা এস এম ইশতিয়াক ইবনে সালামের কাছে ড্রোনটির বিশেষত্ব নিয়ে জানতে চাইলাম। বিস্তারিত জানালেন তিনি, ‘ড্রোন চালাতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। আমরা সেটাকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ প্রশিক্ষণহীন বা অদক্ষ একজন ব্যক্তি, আগে যিনি কখনো ড্রোন ওড়াননি, তিনিও আমাদের ড্রোন চালাতে পারবেন। ভয়েস কমান্ড (কণ্ঠ নির্দেশনা) বাংলা ভাষায় থাকার কারণে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যও এটা উপযোগী। যাঁরা ঠিকমতো বাংলা লিখতে ও পড়তে পারেন না, তাঁরাও এ ড্রোন চালাতে পারবেন।’

সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুধু ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে উড্ডয়ন, চালনা, ছবি তোলা, ভিডিও করা, যে স্থান থেকে উড্ডয়ন করেছে সেই স্থানে ফিরে আসা, অবতরণ—ইত্যাদি কাজ করতে সক্ষম এই ড্রোন। জানালেন এই প্রভাষক। বিদ্যমান অন্য ড্রোনেও এই প্রযুক্তি সংযোজন করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ড্রোনের ফ্লাইট কম্পিউটার রি-প্রোগ্রামেবল হতে হবে।

প্রশিক্ষণহীন বা অদক্ষ একজন ব্যক্তিও বাংলায় কথা বলেই আচার্য নামের এই ড্রোন চালাতে পারবেন

ড্রোনটি তৈরি করতে গিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন দলের সদস্যরা। এ বিষয়ে ইশতিয়াক ইবনে সালাম জানান, ‘কাঁচামাল কিনে একদম স্ক্র্যাচ থেকে শুরু করে অনেক ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়া, কোডে বাগ থাকায় ভূপাতিত হওয়া, ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট গড়বড় হওয়া ইত্যাদি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তবে এর মধ্য দিয়ে দল একদম খুঁটিনাটি বিষয়েও শিখতে পেরেছে।’

‘স্পিচ টু টেক্সট’ রূপান্তরের দিক দিয়ে বাংলা একটি সহজ ভাষা, মনে করেন ইশতিয়াক ইবনে সালাম। এর কারণ, উচ্চারণ অনুযায়ী বানান এবং বানান অনুযায়ী উচ্চারণ। ফলে ইংরেজিতে ভয়েস কমান্ডের থেকে বাংলায় কাজ করা সহজ।

এখনই খুব বেশি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা না দেখলেও ভবিষ্যতে নানা কাজে এর ব্যবহার বাড়বে বলে মনে করে দলটি। কৃষিকাজ, নজরদারি, ভূমি জরিপ, সামরিক নিরাপত্তা, ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি কাজে লাগানো যাবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে দলনেতা বলেন, ‘ড্রোনটির আরও আধুনিকায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া কেউ তাদের ড্রোনে বাংলা ভয়েস কমান্ড যুক্ত করতে চাইলে তাদের সঙ্গে কাজ করতে আমরা আগ্রহী। তবে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এশিয়ার সবচাইতে স্মার্ট ড্রোন তৈরি করা। আমরা ইমেজ প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে ড্রোন দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো একটি লক্ষ্যবস্তুকে অনুসরণ, কোনো বাধা এড়িয়ে যাওয়া, নির্দিষ্ট ঠিকানায় পণ্য সরবরাহ,অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা ইত্যাদি জায়গাগুলোতে কাজ করতে চাই।’ সরকার চাইলে এয়ার ট্যাক্সির মতো অত্যাধুনিক প্রকল্পেও কাজ করতে তাঁরা আগ্রহী।