এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের হয়ে লড়বেন তাঁরা

২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে এশিয়ান গেমসের ১৯তম আসর। সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাংখেঅং খুমী ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের আবু সাঈদ রাফি—দুজনই অংশ নেবেন ভিন্নধর্মী খেলা জিমন্যাস্টিকসে। তাঁদের কথা শুনেছেন তানভীর রহমান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাংখেঅং খুমী ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের আবু সাঈদ রাফি
ছবি: সংগৃহীত

‘দেশের সম্মান রাখতে চাই’

সাংখেঅং খুমী তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়তেন। জিমন্যাস্টিকসের সঙ্গে পরিচয় তখন থেকে। প্রথম প্রথম কিছু বুঝতেন না। ঝোঁকের বশেই শুরুটা করেছিলেন। যখন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন, তখন থেকেই জিমন্যাস্টিকসের সঙ্গে সখ্য।

নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে এই তরুণকে। কোয়ান্টাম কসমো স্কুলটি ছিল ছোট, টিনের চালা দেওয়া। সেখানে জায়গা স্বল্প, ছাদও নিচু। বাধ্য হয়েই কর্তৃপক্ষ ইভেন্ট কমিয়ে দিয়েছিল। ছয়টির জায়গায় তিনটি ইভেন্ট দিয়ে চলছিল কোয়ান্টাম কসমোর জিমন্যাস্টিকস কার্যক্রম। আবার প্যারালাল বারস চর্চা করলে পা বেঁধে যেত ছাদের সঙ্গে। কী আর করা! যেসব ইভেন্ট নিচু জায়গায় করা যায়, সাংখেঅং সেগুলোই চালিয়ে গেছেন।

মাধ্যমিক পরীক্ষার পরপরই জুনিয়র এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে সাংখেঅং ইন্দোনেশিয়া যান। ২০১৯ সালে খেলেন সিঙ্গাপুর ওপেন জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপ। সর্বশেষ ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে অংশ নিয়ে সেরা আটে জায়গা করে নেন তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এই ছাত্র আসন্ন এশিয়ান গেমসে মোট চারটি ইভেন্টে অংশ নেবেন—পমেল হর্স, রিং, ভল্টিং টেবিল ও প্যারালাল বারস। এত বড় মঞ্চে সুযোগ পেয়ে বেশ রোমাঞ্চিত সাংখেঅং। জানালেন, এই পর্যায়ে আসতে খাটতে হয়েছে অনেক। ভোর ৫টা ১৫ থেকে শুরু হতো জিমন্যাস্টিকস চর্চা। খেলাধুলার জন্য পড়ালেখায় খুব একটা সময় দিতে পারেননি। নিশ্চিত ফেল করবেন, এই আশঙ্কায় প্রথমবার জেএসসি পরীক্ষাও তাঁর দেওয়া হয়নি।

জিমন্যাস্টিকসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শরীর ঠিক রাখা। সহজ করে বললে, শরীরের নমনীয়তা ধরে রাখা। বয়স যত বাড়ে, নমনীয়তা তত কমে। বাড়ে ইনজুরির শঙ্কাও। নিয়মিত অনুশীলন করে তাই শরীর ফিট রাখতে হয়। এই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন বান্দরবানের ছেলে সাংখেঅং। এশিয়ান গেমস সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সেরা খেলাটা খেলতে চাই। দেশের সম্মান ধরে রাখতে চাই।’

‘লক্ষ্য থাকবে ফাইনাল’

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-বিকেএসপির ব্যাপারে রাফি জানতে পারেন ২০১১ সালে। তখনো অবশ্য তাঁর কাছে পড়ালেখাই ছিল মুখ্য। বিকেএসপিতে পড়তে গেলে পড়ার পাশাপাশি একটা খেলা বেছে নিতে হয়। রাফি শুরুতে অনেকগুলো খেলায় নাম লিখিয়েছিলেন। শেষমেশ সুযোগ হয় জিমন্যাস্টিকসে। এই খেলার সঙ্গেই আছেন এক যুগ ধরে।

২০১৮ সালে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস দলে। একের পর এক জাতীয়, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে পেয়েছেন পুরস্কার। বাংলাদেশ যুব গেমসে বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। পরের বছর সিঙ্গাপুর ওপেন জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ভল্টিং টেবিলে হন চতুর্থ। ২০২০ সালে রাশিয়ার ভরোনিন কাপে ব্রোঞ্জ জেতেন। এ ছাড়া কমনওয়েলথ ও ইসলামিক সলিডারিটিতে অংশ নিয়ে মূল পর্বে পৌঁছেছিলেন তিনি।

এবারের এশিয়ান গেমস রাফির জন্য বড় সুযোগ। প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছেন। প্রতিযোগিতা করবেন ভল্টিং টেবিল ও পমেল হর্স ইভেন্টে। উচ্ছ্বাস নিয়ে বলছিলেন, ‘এত বড় জায়গায় অংশগ্রহণ করতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার। লক্ষ্য থাকবে ফাইনাল।’

রাফির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়েই প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বলছিলেন, ‘বাইরের দেশের খেলোয়াড়দের মতো পূর্ণ সুবিধা পেলে বাংলাদেশেও জিমন্যাস্টিকসকে অনেক দূর নেওয়া সম্ভব।’ তাই বলে ভিনদেশি খেলোয়াড়দের সামনে মাথা নোয়াবেন না, সেই প্রত্যয়ও জানিয়ে দিলেন দৃঢ়ভাবে। বলছিলেন, ‘বিদেশের মাটিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার যে অনুভূতি, দেশের পতাকা ওড়ানোর যে গর্ব, এই স্বাদ বারবার পেতে চাই। সেরা আটে জায়গা পেলে পদকের জন্য লড়ব।’