২০১৩ সালে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল যাত্রা। ২০১৪ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ‘কাজীপুর গণিত উৎসবে’ চ্যাম্পিয়ন হন। তারপর থেকে অনেক অলিম্পিয়াডে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন, জিতেছেন পুরস্কার। নিজ উপজেলায় সেরা বিতার্কিক খেতাবও পেয়েছিলেন। আর সর্বশেষ ৬ জুলাই আয়োজিত জাতীয় স্টিম অলিম্পিয়াড নামে একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রাশেদুল আলম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক করেছেন রাশেদুল। স্টিম অলিম্পিয়াড প্রসঙ্গে বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুব ভালো লাগছে। ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার জন্য বড় অর্জন।’
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, কলা ও গণিতের (স্টিম) ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় স্টিম অলিম্পিয়াড। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এ ধরনের অলিম্পিয়াড কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে আয়োজকেরা মনে করেন। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিভিন্ন উদ্ভাবন উপস্থাপন করেন। রাশেদুল আলমের আগে থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আগ্রহ। স্টিম অলিম্পিয়াডের মতো আইটি বিষয়ক প্রতিযোগিতায় সব সময়ই তিনি অংশগ্রহণের চেষ্টা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে রাশেদুল বিভিন্ন আইটি উৎসব, প্রকল্প উপস্থাপন, আইডিয়াথন, পোস্টার উপস্থাপন, রোবট অলিম্পিয়াড, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ও হ্যাকাথনে অংশ নিয়েছেন। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে ফাইনালেও ছিলেন; কিন্তু রাশেদুলের একটা দুঃখ ছিল, কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। সব সময় প্রথম রানারআপ, চতুর্থ বা পঞ্চম স্থান নিয়ে খুশি থাকতে হয়েছে।
স্টিম অলিম্পিয়াডে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রকল্প জমা পড়েছিল ২ হাজার ২২৭টি। সেখান থেকে ১২টি ক্যাটাগরিতে ১২০টি প্রকল্প চূড়ান্ত পর্বে জায়গা পায়, তার মধ্যে রাশেদুলের ‘অটো_সেক’ একটি। ওয়েব অ্যাপ বা পেজের দুর্বলতা খুঁজে বের করা এবং কোনো রিসোর্স ছাড়াই সমাধান করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
রাশেদুলের মাথায় প্রকল্পটির ধারণা এসেছিল ২০২৩ সালে, যখন ভিনদেশি একটি হ্যাকার দল বাংলাদেশের প্রায় ২৫টি ওয়েবসাইট হ্যাক করে। তিনি বলেন, ‘হ্যাকাররা ওয়েবসাইট হ্যাক করার পরপরই আমার প্রকল্পের কাজ শুরু করি। আইডিয়াটা ছিল, মাথাব্যথা হলে তো আর মাথা কেটে ফেলা যাবে না; বরং সারাতে হবে। হ্যাক হওয়া ওয়েবের সমস্যাগুলো বের করে সমাধান খুঁজতে হবে। এই কাজে সাধারণত কোনো বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দিতে হয়। কাজটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। আমার প্রকল্পে এসব সমস্যারই সমাধান করেছি।’
অন্য প্রতিযোগীরা যেখানে কয়েকজন মিলে একটা দল হয়ে কাজ করেছেন, সেখানে একাই অংশ নিয়েছেন রাশেদুল। তবে প্রকল্প সফল করতে তাঁকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা—দুটি নিয়েই তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। সবটাই করতে হয়েছে একা। তবে কাজটা সহজ হয়ে গেছে, কারণ বর্তমানে এই অটো_সেক নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস করছেন রাশেদুল।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এই তরুণ বলেন, ‘আমার প্রকল্পের উন্নতির জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। কারণ ভালোর তো শেষ নেই। সামনে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। নতুনভাবে কিছু আইডিয়া এসেছে। সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি, যেন নতুনভাবে সামনে আবার স্টিমে অংশ নিতে পারি। আর যে প্রকল্প নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, সেটিকে একটা বড় মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেন এর মধ্য দিয়ে একটা স্টার্টআপ শুরু করতে পারি।’