আমাদের উদ্যোগটা ছিল খুব ছোট। হলের শিক্ষার্থীদের কাপড় ধোয়ার বন্দোবস্ত করেছিলাম আমরা। নাম দিয়েছিলাম ‘ধুয়ে দিই’। করোনার দীর্ঘ বন্ধের পর যখন ক্যাম্পাসে ফিরলাম, পড়াশোনার চাপ আর মানুষের সমালোচনায় ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, ব্যবসাটাই বন্ধ করে দেব।
ঠিক সেই সময় আমাদের নিয়ে খবর প্রকাশ করে প্রথম আলোর রোববারের ক্রোড়পত্র ‘স্বপ্ন নিয়ে’। এর পর থেকেই দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। বন্ধুবান্ধব, বড় ভাইবোন, শিক্ষকেরাও আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। যাঁরা আগে ঠাট্টা–বিদ্রূপ করতেন, তাঁরাও ফিরে তাকান নতুন করে। শিক্ষকেরা অনেকে অভিনন্দন জানান। এমনকি পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন স্যার ক্লাসে এসে আমাদের হাতে উপহারস্বরূপ তুলে দেন চারটি মগ। উপাচার্য স্যারের সঙ্গেও আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। স্যার আমাদের শুভকামনা জানান। মনের জোর ফিরে পেয়ে আমরা ব্যবসাটা আরও বড় করার পরিকল্পনা করি।
পরিবারের কাছে লুকিয়ে, বাসায় না জানিয়ে ব্যবসাটা চালু করেছিলাম। পত্রিকা পড়েই মা-বাবা প্রথম আমাদের উদ্যোগের কথা জানতে পারেন। সেটাও এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
‘স্বপ্ন নিয়ে’র সেই প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। ফোনে কিংবা মেইলে কেউ কেউ বলছিলেন, নিজেদের ক্যাম্পাসে আমাদের শাখা খুলতে চান তাঁরা। তবে আমরা হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলিনি। ঠান্ডা মাথায় কাজ করে গেছি।
মনে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক কর্মকর্তা একবার বিদ্রূপ করে বলেছিলেন, ‘এসব কী ধোপাগিরি করছ! তোমাদের তো বিয়ে হবে না।’ ‘ধোপাগিরি’ই একটা পরিপূর্ণ উদ্যোগের মর্যাদা পেয়েছে ‘স্বপ্ন নিয়ে’র হাত ধরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এখন অনেক ক্যাম্পাসে আমাদের পরিচিতি আছে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা বলে পরিচয় দিই।
এখন ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লন্ড্রিসেবা দেওয়া শুরু করেছি আমরা। শিগগিরই গাড়ি ধোয়াসহ আরও কিছু সেবা যুক্ত করব। আরও আরও শাখা চালুর বিষয়ে আলাপ–আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে আমরা একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। ধীরে ধীরে স্টার্টআপের দুনিয়ায় একটা শক্ত জায়গা করে নিতে চাই।
‘স্বপ্ন নিয়ে’র সেই প্রতিবেদন ফ্রেমে বাঁধিয়ে আমার ঘরে রেখেছি। যখনই কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই, অজান্তেই চোখ চলে যায় সেই ফ্রেমের দিকে। মনে পাই অন্য রকম এক শক্তি।