যত দিন যাচ্ছে, তত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠছে চাকরির বাজার। এক পদের বিপরীতে এতজন আবেদন করেন যে তখন আর বেতন নিয়ে আলোচনা করার সুযোগই থাকে না। চাকরি পাওয়াটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ার ঘটনা কেবল দেশের বাজারেই নয়, ঘটছে বিশ্বজুড়েই। ফলে সবখানেই বেতন নিয়ে আলোচনা করা প্রার্থীর সংখ্যা কম। সবার ভয়, যদি তা করতে গিয়ে চাকরিটাই হাতছাড়া হয়ে যায়! জেনে নিন সে ভয় এড়িয়ে কীভাবে বেতন নিয়ে কার্যকর আলোচনা করতে হবে।
গবেষণায় পূর্ব–প্রস্তুতি
ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটা সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নিন।
রীতিমতো গবেষণা করুন। যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, সেটা আগে ভালো করে বুঝে নিন। কী কাজ, কতখানি দায়িত্ব। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বেতন কাঠামো সম্পর্কেও ভালো করে জেনে নিন। এতে কেবল বেতন নিয়ে আলোচনা করতেই সুবিধা হবে না, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণাও হয়ে যাবে। বুঝতে পারবেন সেখানকার পরিবেশ কেমন হতে পারে, তারা কতটা কর্মীবান্ধব ইত্যাদি। আর না করলে দেখা যাবে, আপনি কম বেতনেই রাজি হয়ে বসে আছেন।
নিজের মূল্য জানুন
আপনার বেতন কত হবে, তাতে ভূমিকা আছে আপনার যোগ্যতা-দক্ষতা, কী কাজ করবেন—এসবেরও। আপনি যে সেক্টরে কাজ করছেন, সেটার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে সম্যক খোঁজখবর রাখুন। আপনি যে কাজ করবেন, তার ভূমিকা ও প্রভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকুন। হিসাব করুন, সেই কাজে আপনি কতটা দক্ষ, কতটা অভিজ্ঞ।
এসবই আপনার বেতন নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। কাজেই বেতন নিয়ে আলোচনার সময় এসব মাথায় রাখুন এবং প্রয়োজন ও প্রসঙ্গ অনুসারে উপস্থাপন করুন।
সঠিক মূল্যায়ন ও আত্মবিশ্বাস
আকাঙ্ক্ষিত বেতন বলার সময় সতর্ক থাকুন। অতিরিক্ত বেতন চাইলে হতে পারে হিতে বিপরীত। আবার কম বেতন চাইলে আপনাকে পরবর্তী পুরো কর্মজীবনেই ভোগাবে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলাকে সাধারণত নিরুৎসাহিত করা হয়। আবার এ ব্যাপারে একদম অস্পষ্ট থাকাটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাতে নিয়োগকর্তার মনে হতে পারে, আপনি এ ব্যাপারে যথেষ্ট খোঁজখবর করে আসেননি। যেটা আবার আপনার অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এ জন্য প্রয়োজন সঠিক গবেষণা করে সম্ভাব্য বেতন সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া এবং আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী সেটাকে মূল্যায়ন করা। তার ভিত্তিতে আলোচনা করতে হবে আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে।
আরও যা বিবেচনায় নিতে হবে
আলোচনার সময় বেতনের বাইরেও বেশ কিছু বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। যেমন বেতনের বাইরে আপনি আর কী কী সুবিধা পাবেন। সেসব হতে পারে উৎসব ভাতা, যোগাযোগ ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়িটি, বীমাসুবিধা ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে শুরুতেই পরিস্কার ধারণা নিয়ে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি কাজের অন্যান্য দিক নিয়েও কথা বলে নিন। যেমন কর্মঘণ্টা কত, সেটা কাজের চাপ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নমনীয় কি না, কোন কোন ছুটি কত দিন করে পাবেন ইত্যাদি। এসবের ভিত্তিতে চিন্তা করুন চাকরিটা করার ফলে আপনার জীবনে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে। কোন কোন ব্যাপারে সুবিধা পাবেন, আর কোন কোন বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এসবও আপনার বেতন নিয়ে ভাবনায় থাকা উচিত।
তথ্যসূত্র : অন্ট্রাপ্রেনার ডটকম