সারা দুনিয়াতেই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে চ্যাটজিপিটি। বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর এই উদ্যোগটি বিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। চ্যাটজিপিটির প্রস্তুতকারক ওপেনএআই নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান। সাফল্য নিয়ে ৩৭ বছর বয়সী এই তরুণের ভাবনা কী? নিজের ব্লগে সে কথা লিখেছেন তিনি। পড়ুন নির্বাচিত অংশের অনুবাদ।
হাজারো উদ্যোক্তাকে খুব কাছ থেকে আমি দেখেছি। আর ভেবেছি, বড় অঙ্কের টাকা আয় করতে হলে কিংবা বড় কিছু দাঁড় করাতে হলে কী করতে হয়। অনেকেই টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে কাজে নামে। কিন্তু এক সময় বড় কিছু করাটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। কীভাবে সাফল্য পেতে হয়, সে সম্পর্কে আমার কিছু মত তুলে ধরা যাক।
(প্রায়) অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস রাখুন
আত্মবিশ্বাসের শক্তি অভাবনীয়। আমি যত সফল মানুষ দেখেছি, তাঁদের অধিকাংশই নিজের ওপর অস্বাভাবিক বিশ্বাস রাখেন। বেশ কয়েক বছর আগে ইলন মাস্ক আমাকে স্পেসএক্সের ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। রকেটের প্রতিটি যন্ত্রাংশ তৈরির খুঁটিনাটি তিনি আমাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেছিলেন। কিন্তু যা এখনো আমার চোখে লেগে আছে, তা হলো তাঁর আত্মবিশ্বাস। যখন বলছিলেন তিনি মঙ্গলে রকেট পাঠাবেন, তাঁকে দেখেই মনে হচ্ছিল তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত।
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আত্মসচেতনতার একটা সামঞ্জস্য থাকতে হয়। এক সময় আমি সমালোচনা শুনতে খুব অপছন্দ করতাম। সমালোচনা এড়িয়ে যেতাম। এখন মন দিয়ে শুনি। আর বোঝার চেষ্টা করি, আমার কি এ ব্যাপারে কিছু করা উচিত কি না। সত্য খোঁজাটা কঠিন, কখনো কখনো কষ্টদায়কও। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ও আত্মবিভ্রমের মধ্যে পার্থক্য করতে হলে সত্যানুসন্ধান করতেই হবে।
স্বাধীনভাবে ভাবতে শিখুন
কীভাবে উদ্যোগ নিতে হয়, এটা শেখানো খুব কঠিন। কারণ, মৌলিক চিন্তা কাউকে শেখানো যায় না। স্কুলে এসব শেখানো হয় না, বরং উল্টোটার জন্যই পুরস্কৃত করা হয়। অতএব মৌলিক চিন্তা আপনাকে নিজ থেকেই করতে হবে।
গোড়া থেকে ভাবনার ডালপালা মেলে দেওয়ার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে। ভাবনাটা জানানোর মতো কিছু মানুষ খুঁজে বের করা এগোনোর একটা দারুণ উপায়। আর এরপরের কাজই হলো সত্যিকার পৃথিবীতে ভাবনাটা কতখানি কার্যকর, তা সহজে ও দ্রুততর উপায়ে পরীক্ষা করা।
‘আমি বহুবার ভুল করলেও একবার ঠিক হব’—এটিই হওয়া উচিত একজন উদ্যোক্তার ধরন। ভাগ্য পরীক্ষার জন্য নিজেকে বহুবার সুযোগ দিতে হবে। কোনো সমাধান নেই—এমন সব সমস্যায় পড়াই হলো সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
ভালো ‘বিক্রেতা’ হোন
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাই যথেষ্ট নয়, যদি অন্যেও আপনার ওপর বিশ্বাস না রাখে। দিন শেষে যেকোনো পেশার কাজই এক ধরনের ‘বিক্রি করা’। গ্রাহক, সম্ভাব্য কর্মী, সংবাদমাধ্যম কিংবা বিনিয়োগদাতার কাছে আপনার পরিকল্পনার প্রচার তো করতেই হবে। এ জন্য দূরদৃষ্টি, দারুণ যোগাযোগ দক্ষতা, কিছু কিছু ক্যারিশমা এবং করে দেখানোর সক্ষমতা লাগে।
যোগাযোগ, বিশেষ করে লিখিত যোগাযোগ দক্ষতা ভীষণ জরুরি। যথাযথ যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো—আপনি নিজে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝেছেন, আগে সেটা নিশ্চিত করুন। তারপর সহজভাবে বুঝিয়ে বলুন।
আর ভালো বিক্রেতা হওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো—আপনি যা বিক্রি করছেন, তার ওপর সত্যিই মন থেকে আস্থা রাখা। আমার আরও একটি পরামর্শ হলো—কোনো কিছু বিক্রি করতে হলে সামনাসামনি দেখা করুন।
ঝুঁকি নেওয়াটা আরও সহজ করুন
বেশির ভাগ মানুষ ঝুঁকি সম্পর্কে অতিরিক্ত ভাবেন। কিন্তু এর পুরস্কার সম্পর্কে ততটা ভাবেন না। ঝুঁকি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সব সময়ই আপনি সঠিক হবেন, এটা সম্ভব নয়। আপনাকে যেমন অনেক কিছু চেষ্টা করতে হবে, তেমনি শিখতেও হবে।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই ঝুঁকি নেওয়া ভালো। কারণ, তখন খুব বেশি কিছু হারানোর থাকে না। কিন্তু অনেক কিছু পাওয়ার সুযোগ থাকে। এমন বাজিই ধরুন, যাতে ক্ষতির আশঙ্কা ১ গুণ হলে লাভের সম্ভাবনা ১০০ গুণ হয়।
মানুষ যখন একটা আরামদায়ক জীবন, সফল পেশাজীবন পেয়ে যায়, তখন এই সব ছেড়ে ঝুঁকি নেওয়া খুব কঠিন (পরের বছরের বেতনের সঙ্গে জীবনযাপনের ধরন মানিয়ে নেওয়ার এক অসম্ভব ক্ষমতা মানুষের আছে)। দীর্ঘমেয়াদি পরিপূর্ণতার চেয়ে স্বল্পমেয়াদি অর্জনকে মানুষ গুরুত্ব দেয়—এটাই নিয়ম।
সাহসী হোন
আমি মনে করি, সহজ স্টার্টআপের চেয়ে একটা জটিল স্টার্টআপ চালু করা সহজ। কারণ, মানুষ রোমাঞ্চকর কোনো কাজে যুক্ত হতে চান। তাঁরা চান তাঁদের কাজের কোনো একটা প্রভাব পড়ুক।
আপনি যদি কোনো একটা সমস্যা সমাধানের কাজ এগিয়ে নিতে পারেন, সঙ্গে সব সময় আরও কিছু মানুষ পাবেন। অতএব আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হোন, যা চান তার পেছনে লেগে থাকতে ভয় পাবেন না।
যখন সবাই মিম বানানোর প্রতিষ্ঠান করছে, সেই সময়ে একটি জিন সম্পাদনার প্রতিষ্ঠান যদি দাঁড় করাতে চান, ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দ্বিতীয়বার ভাববেন না। আপনার আগ্রহকে অনুসরণ করুন। আপনার কাছে যা রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে, তা অন্যের কাছেও মনে হতে পারে।
সূত্র: ব্লগ ডট স্যামঅল্টম্যান ডটকম