এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে বেকারত্ব থাকবে না

‘আই হেইট পলিটিকস’ প্রজন্ম, মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকা প্রজন্ম, কেবল ‘আমি-আমি’ করা প্রজন্ম—আরও কত কী ‘অপবাদ’ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। অথচ এই কিশোর-তরুণেরাই জেগে উঠেছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলনের শুরু, এখন তা রাষ্ট্র সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। কী সংস্কার চান তাঁরা? কোন কোন ক্ষেত্রে কী পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন?

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মৌলিক পরিবর্তন চাই

তানজিম মুনতাকা

তানজিম মুনতাকা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

দেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। কোনো ধরনের দুর্নীতি যাতে ফের প্রতিষ্ঠিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রধান প্রত্যাশা, দলীয় বলয়মুক্ত শিক্ষাঙ্গন ও বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মৌলিক পরিবর্তন। যে শিক্ষায় শিক্ষিতরা ধারণ করবে দেশপ্রেম, মানবিকতা ও নৈতিকতা। শুধু উচ্চতর ডিগ্রি ও ভালো চাকরিই যেন পড়াশোনার প্রকৃত উদ্দেশ্য না হয়। বয়স অনুযায়ী যতটুকু জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন, ততটুকুই যেন অর্জন করা হয়। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়েরও যথোপযুক্ত পরিমার্জনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। সরকারি সব পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা যেন বজায় থাকে, সবাই যেন সমান সুযোগ পায়। সর্বোপরি আমার প্রত্যাশা, দেশ পরিচালনায় একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগে ভারসাম্য আনতে নিশ্চিত করা হবে সাংবিধানিক ব্যবস্থাপনা; যে ব্যবস্থাপনায় তৈরি হবে না কোনো স্বৈরাচারী, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন হবে না প্রাণের নির্মম বিনিময়। 

শিক্ষাব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনা উচিত, যা তরুণদের কর্মসংস্থানের উপযোগী করে তুলবে

রিজওয়ান আজম রাইয়ান

রিজওয়ান আজম রাইয়ান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আমি এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে বেকারত্ব থাকবে না; প্রতিটি নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। দেশে এখন কর্মহীন লোকের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ ৯০ হাজার, যা ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে ছিল প্রায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার। সুতরাং দেশে বেকারত্বের হার কমাতে প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনা উচিত, যা তরুণদের কর্মসংস্থানের উপযোগী করে তুলবে। আমি বিশ্বাস করি, দক্ষতার উন্নয়ন, শিক্ষার আধুনিকায়ন এবং নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে একটি কর্মমুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। 

সংসদ সদস্যদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা উচিত

সুবহা নাজ শওকত

সুবহা নাজ শওকত, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আমাদের প্রথমে শিক্ষা, পরিবেশ ও সুশাসনের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারি স্কুল-কলেজের বিজ্ঞান ল্যাবগুলো এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। পাশাপাশি পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেশের নেতৃত্বে শিক্ষিত ও দক্ষ ব্যক্তিদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই সংসদ সদস্যদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দেশের বনজ সম্পদ রক্ষা এবং ব্যাপক বৃক্ষরোপণ জরুরি। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব পরিবর্তন সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।