যেভাবে ১৮ কেজি ওজন কমালেন অভিনেত্রী সারিকা সাবাহ

১৮ কেজি ওজন কমিয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী সারিকা সাবাহ
ছবি : সুমন ইউসুফ

মাত্র পাঁচ মাসেই ১৮ কেজি ওজন কমিয়ে বেশ ঝরঝরে হয়ে উঠেছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী সারিকা সাবাহ। ৬৬ কেজি থেকে তাঁর ওজন নেমে এসেছে ৪৮ কেজিতে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকার কারণে গত চার বছরে অনেকটাই মুটিয়ে গিয়েছিলেন। ওজন কমানোর জন্য নানা কিছু করেছেন।

২০২২ সালে সারিকার ওজন ছিল ৬৬ কেজি

পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েছেন, অনলাইনে নিউট্রিশনের ওপর কোর্স করেছেন, বাটি ভরে ভরে সালাদ খেয়েও কমছিল না তাঁর ওজন। এমনকি জিমে নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন। বুঝতে পারছিলেন না কেন এমনটা হচ্ছিল। কেন ফিরতে পারছিলেন না তাঁর কাঙ্ক্ষিত ওজনে। একদিকে শারীরিক সুস্থতার জন্য ওজন কমানো তো দরকার ছিলই। তা ছাড়া যেহেতু তিনি একজন অভিনেত্রী, তাই স্ক্রিনে সুন্দর দেখানোর জন্য ওজন কমানোটা জরুরি হয়ে পড়ে তাঁর।

ওজন কমানোর জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম মেনেছেন

ইতিমধ্যেই ডায়েট নিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানলেন যে টাইমিংয়ের একটা বিশাল ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ডায়েটে। আর যে খাবার খাচ্ছেন, তা–ও সঠিক পদ্ধতিতে তৈরি করছেন না। যে কারণে এত কিছু করেও সঠিক ওজনে ফিরতে পারছেন না তিনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই দিকগুলোকে মাথায় রেখে কঠোরভাবে ওজন কমানোর দিকে মনোযোগ দেন সারিকা।

কনে সাজে নকশার প্রচ্ছদে মডেল হয়েছিলেন সারিকা

এ জন্য প্রথমে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেন সব ধরনের বাইরের খাবার ও জাংক ফুড। চিনিও যুক্ত হয় এই বাদ দেওয়া খাবারের তালিকায়। এই সময় থেকে নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও শরীরচর্চা শুরু করেন।

সারিকার ওজন এখন ৪৮ কেজি

সারিকা সাবাহর মতে, ওজন কমানোর এই পাঁচ মাসের জার্নিটা একেবারেই কঠিন কিছু ছিল না। বরং আগে ওজন কমানোর জন্য যে শ্রম দিয়েছেন, তার চেয়ে অনেকটা কম কষ্টই করতে হয় তাঁকে। এ ক্ষেত্রে তিনি সাধারণ কিছু নিয়ম মেনেছেন। এই যেমন বেলা তিনটার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতেন। রাতের খাবার শেষ করতেন নয়টার মধ্যে। খাবারের তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ ছিল বেশি। আর প্রতিদিন পান করতেন তিন লিটার পানি। সব খাবার রান্না করতেন অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েলে।

গত চার বছর ধরে একই ওজনে স্থির ছিলেন সাবাহ

পাঠকদের জন্য সারিকা সাবাহ জানালেন তাঁর নিজস্ব ডায়েটের পদ্ধতি। ঘুম থেকে উঠতে কিছুটা দেরিই হয় তাঁর। ‘কখনো কখনো সকাল ১০টাও বেজে যায় আমার ঘুম থেকে উঠতে। উঠেই এক কাপ ব্ল্যাক কফি খাই। যেহেতু চিনি খাই না, তাই আধা চা–চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে নেই কফির সঙ্গে। এরপর দুই ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করি। এই যেমন কখনো ইয়োগা করি, কখনো ঘরের ভেতরেই টানা হাঁটি। আবার জগিং, অ্যারোবিক্সও করে থাকি।’ সারিকার কাছ থেকেই জানা গেল, শুরুর দিকে ২৫ মিনিট সময় নিয়ে ব্যায়াম করতেন। এরপর সময় বাড়িয়ে ৪০ মিনিটে আনেন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের জন্য ২ ঘণ্টা সময় রাখেন।

ওজন কমানোর পুরো প্রক্রিয়ার সময় ধৈর্য ধারণ করতে হবে

এরপর দুপুরের খাবারের সময়। দুপুরে সাধারণত প্রচুর সবজি দিয়ে আধা কাপ ভাত খান। প্রতি দুপুরেই খাবারের তালিকায় ১টি ডিম রাখেন। সঙ্গে কখনো থাকে মাছ অথবা মুরগির মাংসের ২ টুকরা। বেশির ভাগ সময় সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর বিকেলে যদি ক্ষুধা লাগে, তাহলে আধা কাপ টক দই আর এক মুঠ বাদাম খেয়ে নেন। রাতে লাল আটার ২টি রুটি ১ বাটি সবজি খান। এই খাবারে কখনো একঘেয়েমি লাগলে রুটির পরিবর্তে ১ বাটি চিকেন স্যুপ খেয়ে থাকেন। আবার কখনো ওটসের সঙ্গে আধা কাপ টক দই আর আধা কাপ নাটস থাকে এই রাতের খাবারের তালিকায়।

যেহেতু তিনি অভিনেত্রী, তাই পর্দায় সুন্দর দেখানোর জন্য ওজন কমানোটা জরুরি হয়ে পড়ে

যেহেতু ১৬ কেজি ওজন কমেছে—এর প্রভাব কি ত্বক ও চুলে পড়েছে? জানতে চাইলে সারিকা বললেন, আমি নিয়মিত যোগাসন করি। তাই ত্বক ঝুলে পড়া ও চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে হয়নি। এ ছাড়া ডায়েট করার সময় প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার অর্থাৎ পানি পান করতেন। এ কারণে ত্বক ও চুলের ওপর ডায়েটের প্রভাব পড়েনি।

মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০২২–এর অনুষ্ঠানে সারিকা সাবাহ

ফেব্রুয়ারি থেকে জুন—এই ৫ মাসে তাঁর ওজন ৬৬ কেজি থেকে ৪৮–এ নেমে আসে। এই ১৮ কেজি ওজন কমিয়ে এখন বেশ ঝরঝরে সারিকা। জানালেন, প্রথমেই ওজন কমানোর পুরো প্রক্রিয়ার সময় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। শুরুতে একেবারেই খাবার কমিয়ে না দিয়ে ধীরে ধীরে তা কমানোর পরামর্শ দিলেন তিনি। কারণ, যদি স্বাভাবিক খাবারটা একবারে কমিয়ে দেন, তাহলে দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়বে শরীর। একই কথা বললেন শরীরচর্চার বেলাও। প্রথম দিকে একটানা বেশি সময় ধরে শরীরচর্চা না করে ধীরে ধীরে এই সময়টা বাড়ানো ভালো বলে মনে করেন তিনি। আর এভাবেই যে কেউ তাঁর কাঙ্ক্ষিত ওজনে ফিরতে পারবেন বলে জানান এই অভিনেত্রী।