সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে, এমন জীবনই তো বেছে নিয়েছি

নাম টম হল্যান্ড। তবে ‘স্পাইডারম্যান’ হিসেবেই লোকে চেনে বেশি। একজন অভিনেতার সার্থকতা তো এখানেই! জয় শেঠির পডকাস্টে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এই ব্রিটিশ অভিনয়শিল্পী। পড়ুন তার চুম্বক অংশ।

স্পাইডারম্যান চরিত্রে টম হল্যান্ড
ছবি: সংগৃহীত

বাবা ছিলেন কমেডিয়ান। আমি আর আমার ভাইয়েরা যখন বিছানায় যেতাম, মূলত তখনই শুরু হতো বাবার কাজ। মা ছিলেন আলোকচিত্রী। বাড়িতেই থাকতেন বেশির ভাগ সময়। অতএব আমরা মনে করতাম, মা-বাবা বুঝি কোনো কাজ করেন না। সব সময় বাড়িতেই থাকেন। সম্ভবত এ কারণেই সন্তানকে বাড়িতে রেখে কাজে যাওয়ার ধারণাটা কখনো আমার মাথাতেই আসেনি। সব সময় মা-বাবাকে পাশে পাওয়া একটা দারুণ ব্যাপার।
‘কমেডিয়ান’ পেশা হিসেবে কিন্তু বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কখনো সময় ভালো যায়, কখনো খুব খারাপ। কিন্তু মাথার ভেতর কী চলছে, কখনোই বুঝতে দিতেন না বাবা। ‘চলো পার্কে যাই’, ‘চলো গলফ খেলি’—বাবার এই হাসিখুশি রূপটাই দেখেছি সব সময়। মা-বাবা আর আমরা ভাইয়েরা সব সময় একটা ‘টিম’ হয়ে থেকেছি। এ কারণেই বোধ হয় এক ধরনের নিরাপদ বোধ করতাম।
জীবনের অনেক শিক্ষাই বাবার কাছ থেকে পাওয়া। যেভাবে নানা সমস্যা মোকাবিলা করেছেন, এমনকি যেসব কাজে খুব একটা সাফল্য পাননি, সবই আমাকে প্রভাবিত করেছে। ক্রিশ্চিয়ান বেলের একটা উক্তি বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল। অবশ্য ঠিক নিশ্চিত নই, উক্তিটি সত্যিকার অর্থেই ক্রিশ্চিয়ান বেলের কি না। মানুষটাকে আমি খুব পছন্দ করি। তাঁর উক্তিটি অনেকটা এ রকম, ‘তোমার যদি আমাকে নিয়ে কোনো সমস্যা থাকে, টেক্সট পাঠাও। আর যদি আমার নম্বর না থাকে, তার মানে তুমি আমাকে যথেষ্ট চেনোই না। অতএব আমাকে নিয়ে তোমার সত্যিকার অর্থে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।’ কথাটা আমার দারুণ লেগেছে।

একজন তারকার জীবনটাই কাটে একধরনের মঞ্চে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে, এমন একটা জীবনই তো আমি বেছে নিয়েছি। এই জীবনে ভালোবাসা কিংবা অভিযোগ, সবই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে সবার অভিযোগ তো আমলে নেওয়া সম্ভব নয়। হ্যাঁ, আমার পরিবার কী বলছে, বন্ধুরা কী বলছে, প্রতিবেশীরা কী ভাবছে, সেটা আমাকে ভাবায়। যে এলাকায় বড় হয়েছি, সেখানে সবাই সবাইকে চেনে। রাস্তায় বের হব আর মায়ের কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে না, এটা মোটামুটি অসম্ভব। মানুষের কথা আমাকেও প্রভাবিত করে। কিন্তু আমি এটাকে ইতিবাচকভাবেই নেওয়ার চেষ্টা করি।

টম হল্যান্ড


একটা সময় আমাকে ইনস্টাগ্রামের নেশায় পেয়ে বসেছিল। শুটিং সেটে এসেই সারাক্ষণ ফোন নিয়ে বসে থাকতাম। কে আমাকে নিয়ে কী বলছে, কী ভাবছে, এসবে বুঁদ হয়ে থাকতাম। ঠিক করলাম, আমার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটা মুছে ফেলব। কারণ, মনে হচ্ছিল নিজের একটা ‘মিথ্যা সংস্করণের’ (ফলস ভার্সন) প্রতি খুব বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছি। ঘোষণা দিয়ে দিলাম, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিচ্ছি। কারণ আমার মনে হয়, এতে করে আমার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।’
কিন্তু এরপর যা হলো, তা খুবই দুঃখজনক। সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবরটাকে খুবই নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করল। ভুল দিকে নিয়ে গেল। তারা বলল, টম হল্যান্ড মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। অথচ তারা বলতে পারত, ‘বাহ, টম হল্যান্ডও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নশীল, তাহলে আপনি কেন নন?’
সংবাদমাধ্যমগুলো বলতে শুরু করল, ‘দেখো! যাকে তোমরা সৌভাগ্যবান, নিখুঁত, সুখী মানুষ হিসেবে ধরে নাও, সে কেমন ভেঙে পড়েছে!’ এটা তো সাংবাদিকতা নয়। যাঁদের মানসিক সহায়তা প্রয়োজন, এসব দেখে তাঁরা আরও নিরাশ হবেন।
দ্য ক্রাউডেড রুম সিরিজেও আমরা এটাই বলতে চেয়েছি। সাহায্য চাওয়াটাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। কেউ যদি খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়; যদি কোনো বন্ধু, শিক্ষক, মা-বাবা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাকারীর কাছে গিয়ে বলে, ‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?’ তার পিঠ চাপড়ে দেওয়া উচিত। বলা উচিত, ‘নিশ্চয়ই। আমি তোমার সঙ্গে আছি। আমি খুব খুশি যে তুমি সাহায্য চেয়েছ।’
সংবাদমাধ্যমের এই নেতিবাচক প্রচার আমাকে দ্য ক্রাউডেড রুম সিরিজটা করতে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। মনে মনে বলেছি, তুমি যদি আমার ব্যক্তিগত মতটা গ্রহণ করতে না পারো, অন্তত আমার অভিনয় থেকে বার্তাটা নাও। (সংক্ষেপিত)