পৃথিবী দ্রুত বদলে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। কয়েক বছর আগেও যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করলে নিজের ও পরিবারের সব প্রয়োজন মিটিয়েও মাস শেষে কিছু সঞ্চয় করা যেত, এখন দেখা যাচ্ছে সেই পরিমাণ অর্থ টিকে থাকার জন্যও যথেষ্ট নয়। এই অবস্থায় অনেকেই স্থায়ী চাকরির পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের দ্বিতীয় কোনো উপায় খোঁজেন। ‘প্যাসিভ ইনকাম’ হতে পারে উপার্জনের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। প্যাসিভ ইনকাম হলো উপার্জনের এমন কিছু উৎস, যেসবের পেছনে ধরাবাঁধা নিয়মে সময় এবং শ্রম দিতে হয় না। প্যাসিভ ইনকামের উৎসগুলোয় কার্যকরভাবে একবার সময় দিতে পারলে তা আপনাকে সারা বছর, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সারা জীবন টাকা এনে দিতে পারবে। প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা এখন আগের চেয়ে সহজ। নতুন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে যদি প্যাসিভ ইনকাম করতে চান, তাহলে আপনাকে কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ইন্টারনেটে আমরা যা কিছু দেখি বা পড়ি, তার সবই কনটেন্ট। এই কনটেন্ট হতে পারে বিভিন্ন ধরনের। যেমন পডকাস্ট, ভিডিও, ব্লগ, ই-বুক, ছবি, মিম, ইনফোগ্রাফিকস ইত্যাদি। কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে অনেকেই এখন ফুল টাইম পেশা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থ উপার্জন করছেন, অর্জন করছেন খ্যাতি। কনটেন্ট ক্রিয়েশন প্যাসিভ ইনকামের একটি ভালো উপায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ইউটিউবার একটি ভিডিও একবারই নির্মাণ করেন। কিন্তু সেই ভিডিও আপলোড করার পর ভিডিও থেকে তিনি বছরের পর বছর রেভিনিউ অর্জন করতে পারেন, যদি ভিডিওর বিষয়বস্তু যথেষ্ট কৌতূহল সৃষ্টিকারী বা উপকারী হয়।
আকর্ষণীয় পোস্ট লেখা।
ছোট ছোট ভিডিও ধারণ করা (যেমন রিলস, টিকটক)।
ভিডিও এডিটিং।
ক্যানভা (গ্রাফিকস এডিটিংয়ের জন্য)।
ক্যাপকাট (ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য)।
ইউটিউব অ্যাড মনিটাইজেশন।
পেইড নিউজলেটার।
ডিজিটাল পণ্য (যেমন ই–বুক, প্রিসেট, টেমপ্লেট ইত্যাদি বিক্রি করা)।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য রেফার করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা। ধরা যাক, আপনি ইউটউবে নিজের একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। সে ভিডিওতে আপনার পরনে আছে একটি আকর্ষণীয় টি–শার্ট। ওই টি–শার্ট একটি অনলাইন শপে পাওয়া যায়। সেই অনলাইন শপের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে। এ ক্ষেত্রে আপনি সেই ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট তৈরি করে এর মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকামের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। টি–শার্টটির একটি অ্যাফিলিয়েট লিংক জেনারেট করে নিজের ভিডিওর ডেসক্রিপশন বা কমেন্ট বক্সে দিয়ে দিন। ওই লিংক ব্যবহার করে কেউ টি–শার্টটি কিনলে আপনার অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্টে কমিশন জমা হবে। এভাবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট এবং বিভিন্ন ব্লগসাইটের মাধ্যমেও অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব।
একটি নির্দিষ্ট নিশ বা উপযুক্ত ভোক্তাগোষ্ঠী নির্বাচন করে ব্লগ লেখা।
টার্গেটেড অ্যাড ক্যাম্পেইন।
ভালো কনটেন্ট লেখা।
দেশি–বিদেশি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
বিভিন্ন পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিংক তৈরি করে সেসব পণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত গ্রুপ ও ফোরামে লিংক পোস্ট করুন। পণ্যগুলো নিয়ে ব্লগ লিখুন, ভিডিও বানান। তারপর অ্যাফিলিয়েট লিংকসহ ব্লগ ও ভিডিও পোস্ট করুন।
সম্ভাব্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এসইও এবং ই–মেইল মার্কেটিংয়ের সহযোগিতা নিন।
আপনার কোনো বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে সে বিষয়ে অনলাইন কোর্স চালু করতে পারেন। কোর্সটি হতে পারে প্রোগ্রামিং, রোবোটিকস, রান্না, সেলাই বা যেকোনো দরকারি বিষয়ের ওপর।
স্কিলশেয়ার, ইউডেমি ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে কোর্স তৈরি।
ডিজিটাল ইবুক এবং টেমপ্লেট তৈরি।
মার্কেটিং অটোমেশন।
দেশি-বিদেশি কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোর্স বিক্রি করার মাধ্যমে শুরু করতে পারেন।
এক্সক্লুসিভ পিডিএফ এবং ওয়ার্কবুক তৈরি করতে পারেন।
বিক্রি বাড়াতে ই–মেইল ফানেল ব্যবহার করতে পারেন।
স্টক ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করতে হলে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে উন্নত মানের কনটেন্ট আপলোড করতে হবে। একবার আপলোড করা কনটেন্ট বারবার বিক্রি হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে আয় এনে দিতে পারে।
ভালো মানের ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ।
অ্যাডোবি লাইটরুম এবং প্রিমিয়ার প্রো ব্যবহার করে ভিডিও এডিটিং।
বাজারে কোন পণ্যগুলো ভালো বিক্রি হবে, সে সম্পর্কে আইডিয়া থাকতে হবে।
শাটারস্টক, অ্যাডোবি স্টক, পেক্সেলসের মতো ওয়েবসাইটে ছবি আপলোড করা।
নিজের ওয়েবসাইটে প্রিন্ট এবং লাইসেন্স বিক্রি করা।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট ডিল সম্পাদন করা।
ব্লগিং এবং এসইও পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। শুধু ভালো ব্লগ লিখলেই হবে না। কীভাবে একজন পাঠক আপনার ব্লগ ইন্টারনেটে সার্চ করে খুঁজে পাবে, তা নির্ভর করে আপনার ব্লগ সাইটের এসইও–র (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) ওপর। তাই ব্লগিংয়ের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করতে চাইলে এসইও সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
বিভিন্ন এসইও টুল, যেমন এইচর্যাফস (Ahrefs), গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানার (Google keyword planner) ইত্যাদি।
উপকারী ব্লগ পোস্ট লেখা।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইন্টিগ্রেশন।
গুগল অ্যাডসেন্স মনিটাইজেশনের মাধ্যমে।
স্পন্সর্ড পোস্টের মাধ্যমে।
ই–মেইল মার্কেটিং করে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে।
নো কোড এমন এক প্রযুক্তি বা প্ল্যাটফর্ম, যা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ না জেনেও ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ বা অটোমেশন সিস্টেম তৈরি করতে সাহায্য করে। ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করা অনেক ক্ষেত্রেই লাভজনক।
বিভিন্ন নো কোড টুলস। যেমন জ্যাপিয়ার (Zapier), নোশন (Notion), বাবল (Bubble) ইত্যাদি।
চ্যাটজিপিটি ও মিডজার্নির মাধ্যমে এআই অটোমেশন।
ওয়ার্কফ্লো অপটিমাইজেশন।
অটোমেশন কনসাল্টিং সার্ভিসের মাধ্যমে।
এআইভিত্তিক টুল ও চ্যাটবট তৈরি করে।
বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কাস্টম ওয়ার্কফ্লো তৈরি করে।
প্রিন্টিং অন ডিমান্ডের ক্ষেত্রে যে আপনার নিজস্ব প্রিন্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে, তা নয়। নিজস্ব ডিজাইন থাকলে আপনি প্রয়োজনমতো অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে প্রিন্টিংয়ের কাজটি করিয়ে নিতে পারেন।
টি–শার্ট, মগ, ফোনের কভার ডিজাইন করা।
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডের মাধ্যমে মার্কেটিং।
বিভিন্ন অনলাইন শপে পণ্য বিক্রি।
ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করা।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে ডিজাইন তৈরি করা।
সূত্র: মিডিয়াম ডটকম