সম্প্রতি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ১৫ তম সমাবর্তনে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল পেয়েছেন আলিফা আহমেদ। পড়ুন তাঁর কথা
ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হব, চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ব। উচ্চমাধ্যমিকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারিনি বলে সেই সময় বেশ মন খারাপ হয়েছিল। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন যেহেতু পূরণ হলো না, চেয়েছিলাম অন্তত চিকিৎসাবিজ্ঞান–সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নিয়েই পড়ব। তাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে ভর্তি হই।
ঢাকায় আসার পর প্রথম দিকে মনে হয়েছিল কিছুটা পিছিয়ে আছি। কক্সবাজার থেকে এসে ঢাকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সেই সময় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বন্ধুরা বেশ সহযোগিতা করেছে। ক্লাসে পড়াশোনার ব্যস্ততা ছিল। তার মধ্যেও বন্ধু, শিক্ষকদের উৎসাহে নানা গবেষণা ও সহশিক্ষামূলক কাজেও যুক্ত থেকেছি। ২০১৮ সালে যেমন ফার্মা পোস্টার প্রতিযোগিতা ও তিন মিনিটের উপস্থাপনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রানার্সআপ হই। ২০১৯ সাল থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবৃত্তি পেয়ে যাই। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় থেকেই শিক্ষকদের সঙ্গে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে সহকারী গবেষক হিসেবে কাজের চেষ্টা করছিলাম। ফলে গবেষণার প্রতি আমার একধরনের আগ্রহ তৈরি হয়। ফার্মাসি বিভাগের ডিন ইভা রহমান কবিরের দিকনির্দেশনায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় নিজস্ব গবেষণাকাজের সুযোগ পেয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গবেষক হিসেবে ইন্টার্নশিপের সুযোগও পেয়েছি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন স্যারের সহযোগিতায় কসমেটিকস জার্নালের মতো আলোচিত প্রকাশনায় গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছি। গবেষণাটা ভালো লাগে বলেই পরিশ্রম করতে কখনো পিছপা হইনি। আমি মনে করি এটাই আমার স্বর্ণপদক প্রাপ্তির বড় কারণ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও গবেষণার পরিবেশের কারণেই আমরা শিক্ষার্থীরা ভালো কিছু করার আগ্রহ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বীকৃতি আমাকে গবেষণায় আরও আগ্রহী করেছে। এখন আমি দেশের একটি ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে কাজ করছি। আমার লক্ষ্য, মাস্টার্স ও পিএইচডি শেষ করে আরও বড় গবেষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব, দেশের ফার্মাসি খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখব।
পরিবার, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষী—সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
সমাবর্তনের দিন আমার বাবা গিয়াস উদ্দিন আহমেদের কথা ভীষণ মনে পড়েছে। সবাই মা-বাবাকে নিয়ে সমাবর্তনে উপস্থিত হয়, সেখানে আমার সঙ্গে শুধু মা ফরিদা ইয়াছমিন ছিলেন। করোনা মহামারিতে বাবাকে হারিয়েছি। আজ বাবা থাকলে না জানি কত খুশি হতেন! স্বর্ণপদকটা আমি বাবাকেই উৎসর্গ করতে চাই।