কোনোটা আবাসিক ভবন, কোনোটা শিল্পকারখানা, কোনোটা আবার পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা অভিজাত রিসোর্ট। পরিবেশ ও প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে গড়ে ওঠা ইট–কাঠের এসব ভবনই পেয়েছে স্থাপত্যের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘আর্কেশিয়া ২০২৩’। বাংলাদেশের স্থপতিদের গড়া পুরস্কার বিজয়ী চার প্রকল্পের মধ্যে এখানে একটি প্রকল্পের গল্প।
ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই সাততলা ভবন। দেখে মনে হয়, বিশাল কোনো সবুজ বাগান। নানা প্রজাতির গাছে ঢাকা পড়েছে ইট-পাথরের দালান। সাততলা ভবনের দেয়ালজুড়ে ঝুলছে নানা রকম লতাপাতা। পরিবেশবান্ধব ভবনটি একটি কারখানা। যার মধ্যেই কর্মীদের খাবার ও বিনোদনের জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা। সেখানেও কাজ করেছে শৈল্পিক ভাবনা। সব মিলে দারুণ এক কর্মপরিবেশ।
এটি রংপুর শহরের রবার্টসনগঞ্জের কারুপণ্য রংপুর লিমিটেডের কারখানা। নকশাবিদ আর্কিটেক্টসের স্থপতি বায়েজিদ মাহবুব খন্দকারের নকশায় গড়ে উঠেছে এই ভবন। এই ভবনের জন্য আর্কেশিয়ায় দুটি সোনার পদক জিতেছেন তিনি। কারখানা ভবন শীতল রাখতে প্রয়োগ করেছেন বিশেষ এক স্থাপত্যকৌশল। এতে সাশ্রয় হচ্ছে কারখানাটির ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের ব্যবহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনে একটি সবুজ কারখানা গড়ে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। সেভাবেই সাজানো হয় ভবনের অন্দর–বাহির। কারখানার স্থাপত্য নকশায় প্রয়োগ করা হয়েছে এমন বিশেষ এক কৌশল, যাতে ভেতরে সহজে প্রবাহিত হয় বাতাস। নিচতলায় পুকুরের মতো বড় বড় চারটি জলাধার রাখা হয়েছে। ১৫ হাজার বর্গফুটের এই জলাধারগুলো একসঙ্গে ধারণ করতে পারে ৫ লাখ লিটার পানি। কারখানায় শতরঞ্জি ডাইংয়ের কাজে ব্যবহারের পর আয়রনমুক্ত করে এই জলাধারে আসে এই পানি।
সবুজ গাছপালা আর এই পানির ওপর দিয়ে উড়ে আসা বাতাস ৩৭ ফুট ব্যাসার্ধের চক্রাকারের চারটি শূন্য স্তম্ভের মধ্য দিয়ে ভবনে প্রবেশ করে। তারপর বিভিন্ন তলায় উঠে যায়। ফলে এসি বা ফ্যান ছাড়াই ভবনের বাইরের চেয়ে ভেতরের তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। স্থপতি বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার বলেন, ‘ছয় থেকে সাত বছর আগে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ করি। আগেও ভবনটি একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। এবার আর্কেশিয়ায় পেলাম দুটি পুরস্কার। সামাজিক দায়বদ্ধ স্থাপত্য প্রকল্পের জন্য বিশেষ পুরস্কার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভবন ক্যাটাগরিতে আরেকটি পুরস্কার।’