আদনান আজাদ
আদনান আজাদ

তিনি ক্যামেরার সামনে নায়ক, ক্যামেরার পেছনে বন্য প্রাণী–আলোকচিত্রী

আদনান আজাদ অভিনয়শিল্পী ও মডেল। তবে বন্য প্রাণী–আলোকচিত্রী হিসেবেই তিনি পরিচিত বেশি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, বিবিসি আর্থ ছাড়াও দেশের প্রায় সব সংবাদপত্রেই ছাপা হয়েছে তাঁর তোলা ছবি। তিনি নিজেও প্রাণী সংরক্ষণে সোচ্চার। আদনানের কাছে তাঁর আলোকচিত্রী হয়ে ওঠার গল্প শুনলেন সজীব মিয়া

খাঁচার পাখির পরিচর্যা যে কেউই করতে পারে, কিন্তু বন্য পাখির পা–পাখা ভেঙে গেলে? বনের ভেতর পাখির ছবি তুলতে তুলতে নবম শ্রেণিপড়ুয়া আদনান আজাদের মনে এই প্রশ্নটির উদয় হয়েছিল। আর তাঁকে এই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছিল তাঁদের বাড়িরই খাঁচাবন্দী কয়েক হাজার পাখি।

নানির উৎসাহে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় দুই জোড়া পাখি কিনেছিলেন আদনান। নবম শ্রেণি পড়ার সময় সেই পাখির সংখ্যাই দাঁড়িয়েছিল আড়াই হাজারে। বাজরিগার, লাভ বার্ডসহ নানা জাতের পাখি। পাখিগুলো পরম যত্নে আগলে রাখতেন আদনান। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে কিনে নিত আদনানের আদরে বেড়ে ওঠা এই সব পাখি।

এই পাখি পালতে পালতেই দিনে দিনে নতুন এক দুনিয়ার সন্ধান পান আদনান। পাখি আর বন্য প্রাণীর প্রেমে একসময় ঘর ছাড়েন। একদিন সুন্দরবন তো অন্য দিন সিলেট, আজ কক্সবাজারে সাপ উদ্ধার করতে গেছেন তো পরশু হাতি রক্ষার আন্দোলনে শেরপুর। বন্য প্রাণীর প্রেমে একসময় খাঁচার পাখি পালনও ছেড়ে দেন তিনি।

এসবের মধ্যেই চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। অভিনয় করেছেন টিভি নাটকেও। মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে মডেলও হয়েছেন। তবে তাঁর মন পড়ে থাকত বনজঙ্গলে। সেই মনের টানেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন কক্সবাজারের একটি বেসরকারি কুমির খামারের। প্রায় পাঁচ বছর খামারের দায়িত্বে ছিলেন আদনান আজাদ। ছবি তোলায় আরও বেশি করে মনোযোগী হবেন বলে সম্প্রতি সেই চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আছেন বগুড়া শহরে, নিজেদের বাড়িতে।

এই বগুড়াতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় আদনান। স্কুল–কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক করেছেন। তবে ব্যবস্থাপনায় তাঁর যতটা না ঝোঁক ছিল, তাঁর চেয়ে বেশি ছিল প্রাণিবিজ্ঞানে। তাই তো কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. এস এম ইকবালের প্রিয় হয়ে ওঠেন আদনান।

সেই আগ্রহের জন্যই বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখির ছবি তুলেছেন আদনান। তাঁর ছবি নিয়ে দেশসেরা পাখি ও প্রাণিবিশেষজ্ঞরা লিখেছেন পত্রিকার পাতায়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, বিবিসি আর্থসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে আদনানের তোলা ছবি।