যে আয়োজন নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই, সেই আয়োজন যাঁদের ঘিরে, তাঁদের নিয়ে আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক! বলছি, ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি ও শিল্পপতি বীরেন মার্চেন্টের মেয়ে রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা। দুজনের প্রেম বেশ আগে থেকে চললেও দুই পরিবার ২০১৯ সালে এই বিয়ের কথা পাকা করে।
বিয়ের আয়োজন, অতিথি, খাবার—এসবের পাশাপাশি অনন্তের স্থূলতা নিয়েও চলছে শোরগোল। তবে, ২০১৭ সালে মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানি এক সাক্ষাৎকারে অনন্তের অতিরিক্ত ওজনের কারণটি বলেন। নীতা জানান, অনন্তের গুরুতর হাঁপানির (অ্যাজমা) সমস্যা রয়েছে। যার ফলে, ওষুধ হিসেবে অনন্তকে প্রচুর স্টেরয়েড নিতে হয়। আর এ জন্যই অনন্তের ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলশ্রুতিতে অনন্তের ওজন বেড়ে ২০৮ কেজিতে পৌঁছায়।
হাঁপানির রোগীকে চিকিৎসকেরা সাধারণত মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে থাকেন। যা রোগীকে শ্বাসকষ্ট থেকে উপশম দেয়। এ ধরনের বেশির ভাগ ওষুধে স্টেরয়েড থাকে। যা দীর্ঘদিন গ্রহণে রোগীর ওজন বাড়তে পারে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যাজমা গবেষণা সংস্থা জানায়, যাঁরা হাঁপানিতে ভোগেন, তাঁদের জন্য কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া, স্টেরয়েড গ্রহণের ফলে সাধারণ অবস্থার চেয়ে ক্ষুধা বেড়ে যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ রোগীর ওজন বাড়িয়ে ফেলে।
২০১৬ সালে অনন্ত আম্বানির ওজন কমানোর জার্নি সবাইকে চমকে দেয়। মাত্র ১৮ মাসে তিনি ১০৮ কেজি ওজন কমাতে সক্ষম হন। সে সময় প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ব্যায়াম করতেন অনন্ত। প্রতিদিন তিনি ২১ কিলোমিটার হাঁটতেন, যোগব্যায়াম করতেন। এ ছাড়া তার শরীরচর্চায় কার্ডিও, ওয়েট ট্রেইনিংসহ আরও নানা ধরনের ব্যায়াম ছিল।
এই ব্যাপক ওজন হ্রাসের জন্য অনন্তকে খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হয়েছে অনেক পরিবর্তন। তাঁর খাবার ছিল শর্করামুক্ত, উচ্চ-আমিষ সমৃদ্ধ। এ ছাড়া খাবার থেকে বাদ দিতে হয়েছে তেল-চর্বি। অনন্ত মূলত শাক-সবজি, ফল, ডাল এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার খেতেন।
স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের পাশাপাশি অনন্তকে দেওয়া হয়েছিল একটি ‘ফিটনেস প্রোগ্রাম’। যেটি তিনি নিয়ম করে অনুসরণ করতেন। তাঁর ফিটনেস ট্রেইনার বিনোদ চান্না অনন্তের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এই প্ল্যানটি করে দেন। এ ধরনের ১৬টি পদ্ধতি অনুসরণ করে বলিউডের অনেক তারকাই উপকার পেয়েছেন। অনন্তের জন্য এই টেকনিক এমনভাবে করা হয়, যাতে তাঁর ওজন হাঁপানির ওষুধ গ্রহণের পরও না বাড়ে।
তবে, ২০২০ সালে নেটিজনরা রাধিকার জন্মদিনের ছবিতে অনন্তর আবার ওজন বেড়ে যাওয়া লক্ষ করেন। ২০২২ সালে ইশা আম্বানির যমজ সন্তান জন্মদান উদ্যাপন অনুষ্ঠানেও সবাই লক্ষ করেন, অনন্তের এই বেড়ে যাওয়া ওজন।
অনন্তের প্রাক্-বিয়ের এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর অনেকেই তাঁকে নিয়ে পরিহাস করা শুরু করেন। বিভিন্ন রিলস এবং মিমও তৈরি হচ্ছে। যা কি না অনেক নেটিজনকে দুঃখিত করেছে। তাঁদের মতে, একজনকে তাঁর শারীরিক গঠন দিয়ে বিচার করাটা সত্যিই দুঃখজনক।
অনন্ত আম্বানির ওজন কমানোর জার্নিটা হতে পারে অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও সংকল্প যেকোনো মানুষকে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে, অনন্ত তার বড় প্রমাণ।
তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া