মহাকাশচারীদের পোশাক নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশের এই শিক্ষার্থী

যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জাবেদ পারভেজ
ছবি: সংগৃহীত

মহাকাশচারীদের পোশাক (স্পেস স্যুট) নিয়ে গবেষণা চলছে বহু বছর। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে কাজ করছেন। এমনই একটি প্রকল্পে যুক্ত আছেন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জাবেদ পারভেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়োমর্ফ ল্যাবে’ পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে কাজ করেন তিনি।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক শেষে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন জাবেদ। লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সংগঠনটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, একাডেমিক ও গবেষণামূলক কাজে সহযোগিতা করে।

কিন্তু মহাকাশচারীদের পোশাকসংক্রান্ত গবেষণায় তাঁর যুক্ততা কীভাবে? মুঠোফোনে জাবেদ বুঝিয়ে বলেন, ‘আমাদের বায়োমর্ফ ল্যাবটা পরিচালনা করেন জীব প্রকৌশল ও অর্থোপেডিক বায়োম্যাটারিয়ালের নামকরা গবেষক ও অধ্যাপক ডেভিড মিলস। এই ল্যাবে কোষ কালচার, টিস্যু প্রকৌশল, বায়োকোটিং, ন্যানোম্যাটেরিয়াল ফেব্রিকেশন এবং পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট গবেষণা হয়। নাসা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগসহ বেশ কিছু শীর্ষ সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে এখানে নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পগুলোতে আমিসহ দুজন বাংলাদেশি, তিনজন মার্কিন ও দুজন ইরানি গবেষক এবং একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি গবেষক কাজ করছেন। আমার পিএইচডির বিষয় যেহেতু মাইক্রো ও ন্যানোসিস্টেম প্রকৌশল, সেই সুবাদেই এই ল্যাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়োমর্ফ ল্যাবে’ পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে কাজ করেন তিনি।

স্পেস স্যুটের বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘ফিলট্রেশন সিস্টেম (পরিশোধন পদ্ধতি)। ফেস মাস্কের সঙ্গে সংযুক্ত এ অংশটি একজন নভোচারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ‘ফিলট্রেশন সিস্টেম’ নিয়েই কাজ করেন জাবেদ। তিনি বলেন, ‘এই ফিল্টারের বিশেষত্ব হচ্ছে—এটি একটি ন্যানো স্কেলের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ফিল্টার। অর্থাৎ ধুলা, কণার পাশাপাশি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মতো ক্ষতিকর জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করবে এই ফিল্টার। এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অংশটাই আমার নতুন সংযোজন। এর ফলে মহাকাশযানের ভেতরে জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।’

বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে জাবেদ দেখিয়েছেন, তাঁর ফিল্টারটি সফলভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসসহ নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। একটি ফিল্টার প্রায় তিন মাস কাজ করতে পারে।

বায়োমর্ফ ল্যাবটি বেশ অত্যাধুনিক

নামী একটি গবেষণাগারে এ ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন—শোনালেন জাবেদ, ‘ল্যাবের আধুনিক সরঞ্জাম ও গবেষণা উপযোগী পরিবেশ ভীষণ ভালো লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই ল্যাবেও প্রতিটা কাজের প্রটোকল খুব সুন্দরভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া রয়েছে। দক্ষতা তো তৈরি হচ্ছেই, পাশাপাশি গবেষণার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতেও এ ধরনের ল্যাব ভূমিকা রাখে। এখানে গবেষণায় যুক্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই ল্যাবরেটরি ব্যবহারের আগে ল্যাবের নিয়নকানুন, রীতিনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। কাঙ্ক্ষিত ফল পেলেই কাজ করার অনুমতি মেলে। লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে—এখানে যেকোনো বিভাগ অন্য বিভাগের ল্যাবের যন্ত্রপাতি অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহার করতে পারে। যা গবেষণাকে সহজ করে দেয়।’

জাবেদ পারভেজ মনে করেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো আর্থিক তহবিল। বিশ্বমানের যন্ত্রপাতির অভাবও প্রকট। তাঁর বক্তব্য, ‘উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিলের বাইরে সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা দরকার। ল্যাবের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। তাহলে আমরা আরও ভালো ফল পাব।’